Header Ads

লোকমান হাকিমের ৫০টি অমূল্য উপদেশ...!

অধিকাংশ আলেমের মতে, হজরত লোকমান হাকিম (রহ.) নবী ছিলেন না। তবে একজন পুণ্যবান, মুত্তাকি ওলি ও প্রজ্ঞাবান ব্যক্তিত্ব ছিলেন। যাকে মহান আল্লাহ উচ্চস্তরের জ্ঞান-বুদ্ধি-বিবেক, দূরদর্শিতা ও অভিজ্ঞতা দান করেছিলেন। তিনি বুদ্ধি-বিবেক ও বিচক্ষণতা কাজে লাগিয়ে এমন সব বিষয় উদ্ঘাটন করেছিলেন যা নবী-রাসুলদের মাধ্যমে প্রেরিত বিধি-বিধান ও দিকনির্দেশনার অনুরূপই ছিল। তার বুদ্ধিদীপ্ত উপদেশ ও জ্ঞানগর্ভ বাণী জনগণের মাঝে খ্যাতি অর্জন করেছিল এবং প্রজন্মান্তরে আলোচিত হয়ে আসছিল। মহান আল্লাহ সেসবের একটা অংশ পবিত্র কোরআনে উল্লেখ করে তার মর্যাদা আরও বৃদ্ধি করে দিয়েছেন।


লোকমান (রহ.) কে ছিলেন? কোথায় অবস্থানকারী ছিলেন এবং কোন যুগ-সময়ে অতিবাহিত হয়েছেন? তা পুরোপুরি নির্দিষ্ট করা যায়নি। অনেকের মতে, তিনি হাবশা তথা আবিসিনিয়ার অধিবাসী ছিলেন এবং দাউদ (আ.) এর সমসাময়িক ছিলেন।

উপদেশ প্রদানে তিনি নিজ পুত্রকে সম্বোধনের মাধ্যমে একটি বিশেষ ধারা অবলম্বন করেছিলেন। তার উপদেশমালার সংখ্যা প্রশ্নে অনেক মতভেদ পরিলক্ষিত হয়। কোনো কোনো আলেম ৩ হাজার বলে উল্লেখ করেছেন। ‘জান্নাতুল-খুলুদ’ গ্রন্থকার তা ৭ হাজার বলেছেন। এখানে সূরা লোকমানের তাফসির ‘তাফসিরে উসমানি’, ‘ইবনে কাসির’ ইত্যাদির অনুসরণে ‘মাআদিনুল-জাওয়াহির’ গ্রন্থ থেকে নির্বাচিত ৫০টি নসিহতপূর্ণ বাণী তুলে ধরা হলো


১. হে বৎস! আল্লাহ তায়ালার পরিচয়-জ্ঞান অর্জন করো এবং তাঁকে ভালোরকম বুঝতে সচেষ্ট হও।
২. অন্যকে যে-কথা বলবে তাতে নিজেও আমল করবে।
৩. সুযোগ বুঝে কথা বলবে এবং প্রয়োজনীয়টুকু বলার জন্যই মুখ খুলবে।
৪. প্রত্যেক শ্রেণী-পেশার লোকজনের মর্যাদা জেনে-বুঝে সে হিসেবেই তাদের সঙ্গে আচরণ-ব্যবহার করবে।
৫. নিজের গোপনীয়তা কারও কাছে প্রকাশ করবে না।
৬. বিপদকালীন বন্ধুদের পরীক্ষা করে নাও।
৭. লাভ ও ক্ষতি দুই অবস্থাতেই বন্ধুদের পরীক্ষা করো।
৮. প্রত্যেক ব্যক্তির হক-অধিকার জানার চেষ্টা করো।
৯. বুদ্ধিমতী নয় এমন নারীদের ওপর ভরসা করবে না।
১০. শিশুদের কাছে গোপন-রহস্য প্রকাশ করবে না এবং কারও কিছুতে লোভ করবে না।
১১. যা জান না সে বিষয়ে কাউকে পথ দেখাতে যাবে না।
১২. স্বীয় কাজকর্ম ভেবে-চিন্তে করবে।
১৩. নিজ সন্তানদের ঘোড়দৌড় ও তীর-নিক্ষেপের প্রশিক্ষণ দেবে।
১৪. রাতের বেলায় চুপে চুপে কথা বলবে, যেন তোমার কোনো শত্রু তোমার কথা শুনে, সে সূত্রে ক্ষতি করতে না পারে।
১৫. নিজ সন্তানদের ‘ইলম’ ও ‘আদব’ শিক্ষা দেবে।
১৬. প্রত্যেক ব্যক্তির অবস্থা বুঝে তার কাজ ও সেবা করবে।
১৭. জাতি-ধর্ম ও সমাজের সঙ্গে সম্পর্ক বা মিলেমিশে চলবে।
১৮. নিজ বস্ত্র-পোশাক পবিত্র-পরিচ্ছন্ন রাখবে।
১৯. গৃহে প্রবেশকালীন চোখ ও জিহ্বাকে সংযত রাখবে।
২০. সাধ্যমতো অবশ্যই মেহমানের আপ্যায়ন করবে।
২১. দানশীলতার অভ্যাস গড়ে তোল।
২২. প্রত্যেক কাজে মধ্যম পন্থা অবলম্বন করবে।
২৩. ব্যয়ের ক্ষেত্রে আয়ের প্রতি লক্ষ রাখবে।
২৪. শিক্ষককে উত্তম পিতা বলে জ্ঞান করবে।
২৫. ‘কম আহার’, ‘কম নিদ্রা’ ও ‘কম কথা’ বলার অভ্যাস করবে।
২৬. যা নিজের জন্য পছন্দ করবে, তা অন্যের জন্যও পছন্দ করবে।
২৭. দিনের বেলায় সতর্কভাবে বাক্যালাপ করবে।
২৮. সর্বদা নিজ জিহ্বাকে নিয়ন্ত্রণে রাখবে।
২৯. অনর্থক কথাবার্তা থেকে মুক্ত থাকবে।
৩০. মানুষের সামনে কাউকে লজ্জা দেবে না।
৩১. মানুষের সামনে হাই তুলবে না।
৩২. নিরপরাধ ও নির্দোষকে অপরাধী ও দোষী সাব্যস্ত করবে না।
৩৩. নিজের সম্পদ গোপন রাখবে, তা বন্ধু ও শত্রু কারও কাছে প্রকাশ করবে না।
৩৪. পিতা-মাতার অস্তিত্বকে অমূল্য সম্পদ ও গনিমত মনে করবে।
৩৫. বন্ধু ও শত্রু উভয়ের সঙ্গেই হাসিমুখে অবস্থান করবে, কথা বলবে।
৩৬. নিজ খাঁটি বন্ধুদের মনে-প্রাণে বন্ধু জানবে।
৩৭. যৌবনে এমনসব কাজ করবে, যা ধর্ম ও দুনিয়া উভয় ক্ষেত্রে উপকারী হয়।
৩৮. যৌবনকালকে সুবর্ণ সুযোগ মনে করবে।
৩৯. যে কথাই বলবে মাপজোখ ও প্রামাণ্যরূপে হওয়া চাই।
৪০. বুদ্ধিমান ও কল্যণকামী লোকজনের সঙ্গে পরামর্শ করবে।
৪১. ভালো কাজে পরিপূর্ণ চেষ্টা চালাবে।
৪২. বুদ্ধিমান ও সতর্ক লোকজনের সঙ্গে ওঠবস করবে।
৪৩. বোকা লোকজন থেকে দূরে থাকবে।
৪৪. সাধারণ জনগণ যেন তোমার সঙ্গে বেয়াদবি করার সুয়োগ না পায়।
৪৫. উপস্থিত কাজ বাকি রাখবে না।
৪৬. কোনো বিপদগ্রস্তকে নিরাশ করবে না।
৪৭. বিগত শত্রুতাকে নতুনভাবে উত্থাপন করবে না।
৪৮. সম্মানীজন বা বড়দের সঙ্গে বিতর্কে লিপ্ত হবে না।
৪৯. বড়দের সঙ্গে হাসি-তামাশায় জড়াবে না।
৫০. বড়দের সামনে আগে আগে চলবে না।

লেখক : মুফতি মোহাম্মদ আবদুল্লাহ
মুফতি, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ
Blogger দ্বারা পরিচালিত.