Header Ads

নবীগণের ব্যাপারে ভ্রান্ত আক্বীদা ভ্রান্ত আক্বীদা-১৪: কাদিয়ানী জামাতের প্রতিষ্ঠাতা মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী দাবি করেছে যে, হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম শেষ নবী নন!। বরং তাঁর পরেও আরো নবী আসতে পারেন। এর কিছুদিন পর সে নিজেই নিজেকে নবী বলে দাবী করেছে। আর অনেক মূর্খ লোক তাকে নবী হিসেবে মেনে নিয়েছে। মিথ্যা নবুওয়াতের দাবী করা বা এরূপ সমর্থন করা প্রকাশ্য কুফর। নবুওয়াত দাবি করে গোলাম আহমদ কাদিয়ানী নিজে কাফির হয়েছে এবং এ দাবী মেনে নেওয়ার কারণে তার অনুসারীরাও কাফির হয়েছে। নিঃসন্দেহে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম খাতামুন নাবিয়্যীন বা সর্বশেষ নবী। এ ব্যাপারে বিন্দুমাত্র সন্দেহের অবকাশ নেই। মুফতী আযম শফী রহ. তৎপ্রণীত, ‘খতমে নবুওয়ত’ নামক কিতাবে প্রায় একশটি আয়াতে কুরআনী পেশ করেছেন [সূরা আহযাব, আয়াত ৪০, সূরা বাকারাহ, আয়াত ৪] ইত্যাদি এবং দু’শর বেশি সহীহ হাদীস পেশ করেছেন। [সূত্র :বুখারী শরীফ, পৃষ্ঠা ৫০১] ইত্যাদি। যে গুলোর প্রত্যেকটি দ্বারা স্পষ্টরূপে প্রমাণিত হয় যে, আমাদের নবীই শেষ নবী এবং তাঁর দ্বারা নবুওয়াতের ও ওহীর দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তা ছাড়া কুরআনের পূর্ববর্তী সকল আসমানী কিতাবেও হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম শেষ নবী হিসেবে আখ্যায়িত করা করা হয়েছে। এ জন্য নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ইনতিকালের পর যখন ‘মুসাইলামাতুল কাযযাব’ নবুওয়াত দাবি করে, তখন এই মর্মে সমস্ত সাহাবায়ে কিরামের রাযি. ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, আমাদের নবীই শেষ নবী। তাঁর পরে কোনক্রমেই আর কোন নতুন নবীর আগমন ঘটতে পারে না। সুতরাং, যে কেউ এখন নবুওয়াতের দাবি করবে, সে কাফির সাব্যস্ত হবে। তার বিরুদ্ধে জিহাদ করা এবং তাকে কতল করা জরুরী। উল্লেখিত দলিল-প্রমাণের ভিত্তিতে সাহাবায়ে কিরাম রাযি. ঐকমত্যের ভিত্তিতে মুসাইলামাতুল কাযযাবের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেন এবং শেষ পর্যন্ত তাকে কতল করে উম্মতের ঈমান হেফাযতের ব্যবস্থা করেন। পাঠক লক্ষ্য করুন, উপরোক্ত দাবি প্রমাণের জন্যে যেখানে কুরআনের একটা আয়াতই যথেষ্ট ছিল, সেখানে প্রায় এক’শ আয়াত এবং দু’শর অধিক হাদীস প্রমাণ রয়েছে। এ কারণে বিশ্বের সকল হক্কানী উলামায়ে কিরামের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত এই যে, আমাদের নবীর পরে যে কেউ নবুওয়াতের দাবি করবে, সে কাফির এবং তাকে যে ব্যক্তি নবী হিসেবে স্বীকার করবে, সেও কাফির। এমনকি মিথ্যুক নবীর নিকট তার নবুওয়াতের দলিল জানতে চাওয়াও কুফরী কাজ। কারণ দলিল-প্রমাণ চাওয়ার অর্থ এই দাঁড়ায় যে, এখনো নতুন নবী আগমনের সম্ভাবনা আছে। সুতরাং তোমার দলিল সঠিক হলে তোমাকে নবী হিসেবে স্বীকার করা যাবে। [নাউযুবিল্লাহ] সুতরাং, মুসলমানগণ এ ব্যাপারে খুব সর্তক থাকবেন। আহমদিয়া বা কাদিয়ানী সম্প্রদায় এখন বাংলাদেশের বড় ও প্রসিদ্ধ শহরগুলোতে তাদের অফিস খুলে আস্তানা গেড়েছে। সেখানে তারা বড় বড় অক্ষরে কালিমায়ে তায়্যিবা লিখে রেখেছে। তাদের নাম মুসলমানদের নামের মতো। তারা মুসলমানদের মতো কুরআন তিলাওয়াত করে এবং নিজেদের মর্জি মত কুরআনের ব্যাখ্যা করে। তারা বই-পুস্তক রচনা করে বিনামূল্যে বিতরণ করে এবং নানারকম সুযোগ-সুবিধার প্রলোভন দেখায়। খবরদার ! কখনো তাদের ফাঁদে পা দিবেন না। তারা এমনও বলে যে, তোমাদের মাঝে তো হানাফী, শাফেঈ, মালেকী ইত্যাদি মাযহাব রয়েছে। আহমদিয়া জামাআতও তেমনি একটি মাযহাব। এটা নির্লজ্জ মিথ্যাচার। চার মাযহাবের মধ্য মূল আকীদার বিষয়ে কোন প্রকার মতভেদ নেই। হ্যাঁ এ ধরণের মতভেদ রয়েছে যে, নামাযের মধ্যে আমীন আস্তে না জোরে পড়তে হবে, হাত বুকে না নাভির নিচে বাঁধতে হবে, ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা পড়তে হবে কি না? ঈদে ছয় তাকবীর না বারো তাকবীর ইত্যাদি। এ ধরণের ছোটখাট কয়েকটি মাসআলা নিয়ে কেবল তাদের মধ্যে মতভেদ, আর এসবই আমলের সাথে সম্পর্ক রাখে, ঈমান-আকীদার সাথে এগুলোর কোন সম্পর্ক নেই, ঈমান-আকীদার ব্যাপারে সকল মাযাহাবই এক। সুতরাং সাবধান! আহমদিয়া জামা‘আত কখনো হানাফী, শাফেঈ মাযহাবের মতো নয়। বরং তারা ভ্রষ্ট ইহুদী-খ্রিষ্টানদের মতো কাট্টা কাফির ও বেঈমান। তারা বলে থাকে যে, আমরা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে খাতামুন নাবিয়্যীনরূপে বিশ্বাস করি, বরং আমাদের আকীদার সাথে দ্বিমত পোষণকারীদের চেয়ে এক’শ গুণ বেশি বিশ্বাস করি। কিন্তু খাতামুন নাবিয়্যীন শব্দের অর্থ-শেষ নবী নয়। কারণ এ অর্থ গ্রহণ করার দ্বারা মূলত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আধ্যাত্মিক ত্রুটি ও অসম্পূর্ণতা স্বীকার করা হয়। মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী ও তার অনুসারীদের এরূপ উক্তিও একটি মারাত্মক ধোঁকাবাজী ছাড়া আর কিছু নয়। কারণ বহু হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেকে খাতামুন নাবিয়্যীন হিসেবে উল্লেখ করার সাথে সাথে এ কথাও বলেছেন যে, আমার পরে আর কোন নবীর আগমন ঘটবে না। এরূপ ব্যাখ্যা তিনি এ জন্যেই দিয়েছিলেন, যাতে করে কাদিয়ানীদের মত গোমরাহ দলসমূহ খাতামুন নাবিয়্যীন শব্দের মনগড়া ব্যাখ্যা দেয়ার কোন সুযোগই না পায়। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আধ্যাত্মিক পূর্ণতা প্রমাণের জন্যে নতুন নবীর আগমনের দাবিও ভিত্তিহীন। বরং নতুন নবী না আসলে তাঁর আধ্যাত্মিক পূর্ণতা আরো বেশি প্রকাশ পায়। অনেক নব্য শিক্ষিত লোক এমন রয়েছে, যাদের দ্বীনি জ্ঞানের পরিধি খুবই সীমিত। ফলে তারা কাদিয়ানী ও আহমদীদেরকে কাফির আখ্যায়িত করাটাকে উলামায়ে কিরামের সংকীর্ণতা বলে মনে করে। এটা তাদের চরম মূর্খতা ছাড়া আর কিছু নয়। আহমদী জামা‘আত বা কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের সঙ্গে মুসলমানদের মতভেদ রয়েছে ঈমান ও আকীদার ব্যাপারে। কারণ কাদিয়ানী মতবিরোধিতাকে কখনো হানাফী, শাফেঈ ও মালিকীদের মতো পারস্পরিক[ফিকহী মাসাইল সম্পর্কিত] মতবিরোধিতার সাথে তুলনা করা যেতে পারে না। কারণ, কাদিয়ানীরা নিঃসন্দেহে কাফির। এদের কাফির হওয়ার ব্যাপারে কারো কোন দ্বিমত নেই। এরা সরলপ্রাণ মুসলমানদেরকে পথভ্রষ্ট করছে। মুসলমানদের ঈমানের হিফাযত উলামায়ে কিরামের বিশেষ দায়িত্ব। তারা তাদের দায়িত্ব পালন করছেন এবং পরকালের জবাবদিহিতা থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য যিম্মাদারী আদায় করেছেন। সুতরাং তাদের এ যিম্মাদারী আদায়কে কিভাবে সংকীর্ণতা বলা যেতে পারে? বস্তুত কাদিয়ানী ভ্রান্ত সম্প্রদায় সম্পর্কে সর্তক করা আলিমগণের দ্বীনি দায়িত্ব। ভ্রান্ত আক্বীদা-১৫: অনেক শি‘আ সম্প্রদায় বলে থাকে যে, তাদের ইমামগণ মাসুম ও নিষ্পাপ। তারা গায়েব জানেন এবং তারা কুরআনের যে কোন হালাল বস্তুকে যখন-তখন হারাম ঘোষণা করতে পারেন। অনুরূপভাবে যখন ইচ্ছা যে কোন হারাম বস্তুকে হালাল ঘোষণা করার অধিকার রাখেন। তারা আল্লাহর এত বেশি প্রিয় যে কোন নবী রাসূল-বা ফেরেশতা পর্যন্ত তাদের নিকটবর্তী স্থানেও পৌঁছতে পারে না। শি‘আদের এ সকল আক্বীদাও শরী‘আতবিরোধী ও কুফর। [সূত্র : সূরা আনআম, আয়াত ৫৯, সূরা ইউনুস, আয়াত-১৫, মিশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা২০৪।] এটা হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শেষ নবী হওয়ার আকীদার পরিপন্থী হওয়ায় তা স্পষ্ট কুফরী। কারণ তাদের ইমামদের জন্য যে, অবাস্তব গুণাবলীর দাবি করা হয়েছে, তাতে তাদের ইমামগণকে নবী-রাসূল আ.দের চেয়েও ঊর্ধ্বে স্থান দেয়া হয়েছে এই বলে যে, নবীগণও এ সকল ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন না। আখিরী নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পরে যদি নবীদের চেয়ে ক্ষমতাসম্পন্ন কোন ব্যক্তি আবির্ভূত হতে পারে, তাহলে নতুন নবী আসতে বাধা কোথায়? আসল কথা হলো নবুওয়াতের দরজা যখন বন্ধ হয়ে গেছে, তখন বাতিলপন্থীদের মাথা গরম হয়ে গেছে। আর নবুওয়াতের সেই বন্ধ দরজা খোলার জন্যে মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী যিল্লী নবী বা ছায়া নবীর নামে, আর শি‘আ সম্প্রদায়ের লোকেরা ইমামতের নামে পুনরায় তা খুলতে ব্যর্থ প্রয়াস চালিয়েছে। মুসলমানদের এদের সম্পর্কে হুশিয়ার থাকতে হবে। ভ্রান্ত আক্বীদা-১৬: শি‘আদের অনেক সম্প্রদায় বিশ্বাস করে যে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ইনতিকালের পর হযরত আলী রাযি., হযরত হাসান রাযি., হযরত হুসাইন রাযি. ও হযরত আম্মার রাযি. ব্যতীত সকল সাহাবায়ে কিরাম মুরতাদ হয়ে গিয়েছিলেন। তাদের এই আক্বীদা কুরআনে কারীমের সূরা তাওবার ১০০ নং আয়াত “মুহাজির ও আনসারদের মাঝে যারা অগ্রবর্তী -প্রবীণ এবং যারা উত্তমরূপে তাদের অনুসরণ করেছে, আল্লাহ তা‘আলা তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। আল্লাহপাক তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন কানন কুঞ্জ, যার তলদেশ দিয়ে প্রস্রবণসমূহ প্রবাহিত। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। এটাই বড় সফলতা এবং সূরা ফাতহ’র ২৯ নং আয়াত ‘মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল এবং তাঁর সাহাবীগণ কাফিরদের প্রতি কঠোর ও নিজেদের প্রতি মধ্যে পরস্পর সহানুভূতিশীল। আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনায় আপনি তাদেরকে রুকু-সিজদায় দেখবেন। তাদরে মুখমণ্ডলে রয়েছে সিজদার চিহ্ন’ ইত্যাদি বিভিন্ন আয়াত ও সহীহ হাদীসের পরিপন্থী হওয়ার কারণে এটা কুফরী আক্বীদা। যে সকল লোক নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাতে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন এবং নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাহচর্য লাভে ধন্য হয়েছিলেন, তাঁদের কুরআনে কারীমের বিভিন্ন আয়াতে ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর বিভিন্ন হাদীসে সমগ্র মানুষের জন্যে আদর্শ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এমনকি খুলাফায়ে রাশেদীনের খিলাফতের সত্যতা ও হাক্কানিয়াত সম্পর্কে স্বয়ং নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম অত্যন্ত সুস্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন। সুতরাং এ ব্যাপারে বিরূপ বিশ্বাস সুস্পষ্ট কুফরী। এতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। ভ্রান্ত আক্বীদা-১৭: শি‘আদের এক ধর্মীয় নেতা লিখেছেন, হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাযি. এবং হযরত উমর রাযি. শুধুমাত্র নেতৃত্ব ও দুনিয়ার লোভে বহু বছর যাবৎ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে সম্পর্ক স্থাপন করছিলেন। অন্যথায় ইসলাম ও কুরআনের সাথে তাদের আদৌ কোন সম্পর্ক ছিল না। তাদের নেতৃত্বের লোভের বর্ণনা দিতে গিয়ে উক্ত শি‘আ নেতা আরো লিখেছেন যে, ‘ক্ষমতা দখলের জন্য ইসলামের বিরুদ্ধে কোনো দল সৃষ্টি করতে হলেও তারা পিছপা হতো না। এমনকি যদি কুরআনের কোন আয়াতে মহান আল্লাহ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পরে হযরত আলী রাযি. এর খিলাফতের কথা ঘোষণা করতেন, তাহলে তারা নিজেদের পক্ষ থেকে হাদীস তৈরী করে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বরাত দিয়ে আলী রাযি. এর খিলাফত সংক্রান্ত আয়াত রহিত হওয়ার কথা ঘোষণা করতেন।’ (নাউযুবিল্লাহ) হযরত আবু বকর ও উমর রাযি. দের সম্পর্কে এরূপ ধারণা পোষণ করা কুফরী আক্বীদা। নবী করীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের ফযীলত সম্পর্কে বহু হাদীস বর্ণনা করেছেন। তাঁদের জান্নাতী হওয়ার সুসংবাদ দান করেছেন। [সূত্র: মিশকাত শরীফ, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৫৬০।] এমনকি মিরাজে তিনি হযরত উমর ফারুক রাযি. এর জান্নাত পরিদর্শন করেছেন। [সূত্র: বুখারী শরীফ খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৫২০।] তাছাড়া বিভিন্ন সময় বিভিন্ন আশ্চর্যজনক ঘটনা উল্লেখ করে বলেছেন, এসব বিষয়ের উপর আমি ঈমান রাখি এবং আবু বকর ও উমরও ঈমান রাখে। অথচ সেই মজলিসে তাঁদের দু’জনের কেউই উপস্থিত ছিলেন না। [সূত্র: বুখারী শরীফ খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৫১৭।] এর দ্বারা বোঝা যায় যে, তাঁদের প্রতি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কতটুকু আস্থা রাখতেন। তারপরও যদি বলা হয় যে, ইসলাম ও কুরআনের সাথে তাদের কোনই সম্পর্ক ছিল না। তাহলে এটা কত বড় ডাহা মিথ্যা অপপ্রচার-তা অতি সহজেই অনুমেয়। ভ্রান্ত আক্বীদা-১৮: জনৈক ইসলামী চিন্তাবিদ লিখেছেন, নবীগণের জন্য মাসুম বা নিষ্পাপ হওয়া জরুরী নয়, বরং তাঁদের নবুওয়াতের দায়িত্ব পালনের সুবিধার্থে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে গুনাহ থেকে হিফাযত করেন। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর হেফাযত তুলে নিলে, তাদের থেকেও সাধারণ মানুষের মতো গুনাহের কাজ হতে পারে। আর বস্তুত আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক নবী থেকে সাময়িকভাবে হেফাযত ব্যবস্থা তুলে নিয়ে দু’একটি গুনাহ সংঘটিত হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। যাতে মানুষ নবীদেরকে খোদা মনে না করে। সেই চিন্তাবিদ এতদসম্পর্কিত বিস্তারিত ব্যাখ্যার সাথে কোন কোন নবী থেকে কি কি গুনাহ প্রকাশ পেয়েছে, তারও একটা ফিরিস্তি পেশ করেছেন। [সূত্র: তাফহীমাত-২, পৃষ্ঠা : ৫৭, ষষ্ঠ সংস্করণ।] উল্লেখিত আক্বীদা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আকীদার সম্পূর্ণ বিপরীত এবং এটা কুফরী আক্বীদা। কুরআনে কারীমের অসংখ্য আয়াতে নবী-রাসূলগণের প্রতি শর্তহীন আনুগত্যের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত ৩১, সূরা আহযাব, আয়াত ২১ ।] এসব আয়াতের দাবী অনুযায়ী সকল নবী ও রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাসুম ও নিষ্পাপ এবং তাদের থেকে কোনরূপ গুনাহ সংঘটিত হওয়া অসম্ভব। এটাই সহীহ আক্বীদা। প্রিয় পাঠক! লক্ষ্য করুন, যদি প্রত্যেক নবী-রাসূল আ. থেকে মাঝে মাঝে আল্লাহ তা‘আলা হেফাযত ব্যবস্থা উঠিয়ে নেন, তাহলে সেটা উম্মত কীভাবে বুঝতে পারবে? তারা তো আল্লাহর ফরমান অনুযায়ী নবী-রাসূল আ. দের সব কথা ও কাজ নিঃসন্দেহ গ্রহণ করবে। সুতরাং চিন্তাবিদ সাহেবের উক্ত কথা মানলে নবী রাসূলগণের আ. সমগ্র জীবনের তা‘লীম তারবিয়্যত সন্দেহযুক্ত হয়ে যায়। তাদের প্রত্যেক কথা ও কাজের ব্যাপারে সন্দেহ সৃষ্টি হয় যে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর এ কথা বা কাজের সময় আল্লাহ তা‘আলা তাঁর হেফাযত ব্যবস্থা জারি রেখেছিলেন, না রাখেননি? যদি জারি না রেখে থাকেন, তাহলে তাঁর এ কথা তো সহীহ নাও হতে পারে। [নাউযুবিল্লাহ] কিরূপ জঘন্য কথা! নবী-রাসূল আ. গণের ব্যাপারে উম্মত যদি এ ধরণের সন্দেহের সম্মুখীন হয়, তাহলে তাদের দ্বীন ও ঈমান কীভাবে কায়িম থাকবে? আরো লক্ষ্য করুন, আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক নবী-রাসূল আ. থেকে হেফাযত ব্যবস্থা উঠিয়ে নিয়ে দু’একটি গুনাহের সুযোগ করে দিয়েছেন, যাতে করে মানুষ বুঝতে পারে যে, তারা খোদা নন’-এ কথার প্রেক্ষিতে প্রশ্ন হয়, নবী-রাসূল আ. গণ খোদা নন-এ কথা বিশ্বাস করা জরুরী। তবে তা বোঝানোর জন্যে তাদেরকে পাপী সাব্যস্ত করার কি কোন প্রয়োজন আছে? নবী-রাসূলগণের আ. পানাহারের প্রয়োজন হয়, রোগ-শোক হয়, স্ত্রী-পুত্র-ঘর-সংসারের প্রয়োজন হয়, হাট-বাজার, আরাম-বিশ্রামের প্রয়োজন পড়ে, এ ধরণের আরো শত শত মানবীয় গুণাবলী কি এ কথা বোঝাতে সক্ষম নয় যে, তারা মানুষ ছিলেন, খোদা ছিলেন না? বা অন্য কোন মাখলুক ছিলেন না । নবীগণের শানে উল্লেখিত ধরণের অপবাদ নিঃসন্দেহে কুফরী। ভ্রান্ত আক্বীদা-১৯: জনৈক চিন্তাবিদ খিলাফত ধ্বংসের ইতিহাস লিখতে গিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন এবং ইসলামী খিলাফত ধ্বংসের জন্যে হযরত উসমান রাযি. কে প্রথম আসামী বানিয়েছেন। তার দৃষ্টিতে দ্বিতীয় আসামী হচ্ছেন হযরত মু‘আবিয়া রাযি.।[নাউযুবিল্লাহ] তার বর্ণিত এসব তথ্য সম্পূর্ণরূপে শি‘আ ও ইহুদীদের দ্বারা লিখিত ইসলামের নামে বিকৃত ইতিহাসের ওপর নির্ভরশীল। ইসলামের কোন সহীহ ইতিহাস দ্বারা এসব বানোয়াট তথ্য প্রমাণিত হয়। আমাদের দেশে স্কুল-কলেজে ইসলামের নামে যে ইতিহাস পড়ানো হয়, তারও অবস্থা একই রকম। ইসলামের নামে এসব ইতিহাস শি‘আ ও ইহুদী কর্তৃক প্রথমত আরবী ভাষায় লেখা হয়, তারপরে আরবী হতে ইংরেজিতে অনুদিত হয়। এরপর আমাদের কতিপয় পণ্ডিত উক্ত ইংরেজি গ্রন্থসমূহ থেকে বাংলা ভাষায় অনুবাদ করেন। এসব ইতিহাস পড়ে ইসলামের সঠিক ঘটনা জানার কোন উপায় নেই। বরং এগুলো পড়ে অনেকেই বিভ্রান্তিবশত সাহাবাবিদ্বেষী হয়ে ঈমান হারাচ্ছে। আবার কেউবা সাহাবায়ে কিরামের ব্যাপারে বিরূপ মনোভাব পোষণ করছে। তারা হযরত উসমান রাযি. সম্পর্কে এরূপ কু-ধারণা পোষণ করে যে, তিনি স্বজনপ্রীতি করে নিজের লোকদেরকে বিভিন্ন প্রদেশের গভর্নর নিযুক্ত করেছেন। তেমনিভাবে হযরত মু‘আবিয়া রাযি. রাজতন্ত্রের বুনিয়াদ কায়িম করেছেন ইত্যাদি। [নাউযুবিল্লাহ] তাদের এসব ধারণা একবারেই অমূলক ও ভিত্তিহীন। সহীহ ইসলামী ইতিহাস গ্রন্থ যেমন, আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, আত তারীখুল কামিল ইত্যাদি যারা পড়েছেন, তাদের নিকট আমাদের দাবির সত্যতা অত্যন্ত স্পষ্ট। তাই খবরদার! ইসলামের নামে গলদ ইতিহাস পড়ে সাহাবায়ে কিরামের ব্যাপারে অন্তরে বিদ্বেষ পোষণ করে ঈমান হারাবেন না। সাহাবায়ে কিরাম সম্পর্কে বিরূপ ধারণা রাখা ও নিফাক এবং একজন মু‘মিন-মুসলমানের ঈমানের জন্যে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। ভ্রান্ত আক্বীদা-২০: কতেক মূর্খ লোক বলে থাকে যে, হযরত নূহ আ. এর তুলনায় আমাদের নবী বেশি দয়াশীল ছিলেন। হযরত মূসা আ. বেশি রাগী ছিলেন। আর আমাদের নবী অত্যন্ত নরম মেযাজের ছিলেন। হযরত ঈসা আ. রাজনীতি জানতেন না, আমাদের নবী রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন ইত্যাদি। আশ্চর্যের কথা এই যে, অনেক বক্তাও ওয়াযের মধ্যে এরূপ কথা বলে থাকেন। অথচ এর থেকে বিরত থাকা খুবই জরুরী। কুরআন ও হাদীসে এর থেকে পরহেজ থাকার জোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দুই নবীর মধ্যে তুলনা করে একজনকে ছোট করে দেখানো বা একজনকে কোন ব্যাপারে অসম্পূর্ণ বা নাকিস গণ্য করা শরী‘আতের দৃষ্টিতে কুফরী কাজ। পয়গাম্বরগণ সকলেই সর্বদিক দিয়ে কামিল ও সর্বগুণে গুণান্বিত ছিলেন। [সূত্র : সূরা বাকারাহ, আয়াত ২৮৫, বুখারী শরীফ খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৪৮৪।] অবশ্য কামিল হওয়ার ব্যাপারে কারো মর্তবা বেশি আর কারো মর্তবা ছিল কম। তাই সকল নবী সম্পর্কে সু-ধারণা রাখতে হবে এবং তাদের সকলের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে হবে। একজনের তুলনায় অন্যজনকে ছোট, হেয় বা নাকিস গণ্য করা যাবে না। ভ্রান্ত আক্বীদা-২১: নব্য শিক্ষিতদের অনেকে নবী-রাসূলগণের আ. মু’জিয়া বা অলৌকিক ঘটনাসমূহ তাদের যুক্তি ও বিজ্ঞানের মাপকাঠিতে ধরা না পড়ায় অস্বীকার করে বসে। ‍ কুরআন-হাদীসের অসংখ্য বর্ণনা দ্বারা নবী-রাসূলগণের আ. মু’জিযা সু-প্রমাণিত। সুতরাং, বিনা বাক্য ব্যয়ে এগুলো মেনে নেয়া এবং এগুলো বিশ্বাস করা ঈমানের জন্যে জরুরী। কেউ এগুলো অবিশ্বাস করলে, তার ঈমান থাকবে না। যেমন, হযরত ইবরাহীম আ. এর জন্যে নমরুদের আগুণ আল্লাহর আদেশে শান্তিদায়ক ঠাণ্ডায় পরিণত হয়েছিল। [সূরা আমবিয়া আয়াত ৬৯।] হযরত মূসা আ. ও তাঁর কওমের জন্যে লোহিত সাগরের মধ্যে দিয়ে রাস্তা করে দেয়া হয়েছিল। [সূরা আল-ইমরান : ৪৯।] হযরত ঈসা (আঃ) -قم بازنالله বললে মুর্দা জীবিত হয়ে যেত। [সূরা ত্বাহা : ৭৭] আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর আঙ্গুলের ইশারায় চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হয়েছিল, ইত্যাদি। [সূরা কামার : ১] বস্তুত কোন বিষয় যুক্তি বা বিজ্ঞান দ্বারা স্পষ্টরূপে প্রমাণিত হওয়ার পর তা মানার নাম ঈমান নয়। বরং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কথাকে সরল অন্তঃকরণে বিনা যুক্তি-তর্কে মানার নামই হচ্ছে ঈমান। যেমন, আল্লাহ তা‘আলার অস্তিত্ব, জান্নাত-জাহান্নাম, হাশর-নাশর, মীযান-পুলসিরাত ইত্যাদি কেউ যদি উপরোক্ত বিষয়গুলো সাইন্স আর যুক্তি দ্বারা বুঝতে চেষ্টা করে, তাহলে কখনো সে এগুলো বুঝতে পারবে না। কারণ যুক্তি ও সাইন্স পঞ্চইন্দ্রিয়ের অনুভূতির ওপর নির্ভরশীল। আর আখিরাত ও পরকালের বস্তুসমূহ পঞ্চইন্দ্রিয়ের অনুভূতি সীমার বাইরের জিনিস। সুতরাং, যুক্তি-তর্ক দিয়ে বুঝাতে চাইলে তার জন্য ঈমান আনা দুস্কর। এ জন্যে সূরা বাকারার শুরুতে আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করছেন, মুত্তাকী হওয়ার জন্য প্রথম গুণ হচ্ছে অদৃশ্য বস্তুসমূহের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা।[সূরা বাকারাহ, আয়াত-৩।] মূলত শরী‘আতের বিধানসমূহ হচ্ছে বাদশাহ, আর যুক্তি-বিজ্ঞান হচ্ছে তার দাসীতুল্য। বাদশাহের নির্দেশ পাওয়ার পর তা পালন করার জন্যে তার বাদীর নিকট জিজ্ঞেস করা যেমন বেওকুফী, তেমনিভাবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন নির্দেশ দেয়ার পরে তা গ্রহণ করার জন্য যুক্তি বা বিজ্ঞানের ওপর নির্ভর করাও চরম মূর্খতা ও জাহিলিয়্যাত। স্মর্তব্য, যে হযরত আদম আ. কে সিজদা না করে যুক্তির পথে সর্বপ্রথম পা বাড়িয়েছিল ইবলিস। এরই পরিণতিতে সে আল্লাহর দরবার থেকে বহিষ্কৃত হয়ে চিরজীবনের জন্যে আল্লাহর দুশমন আখ্যায়িত হয়েছে। ভ্রান্ত আক্বীদা-২২: কোন কোন আধুনিক শিক্ষিত ব্যক্তি আমাদের নবী করীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জাগ্রত অবস্থায় সশরীরে মিরাজকে অস্বীকার করে, অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক রাত্রের মধ্যে যে মক্কা শরীফ থেকে বাইতুল মুক্কাদ্দাস, অতঃপর সেখান থেকে সাত আসমান ও আরশ ভ্রমণ করেছেন, তারপর ফজরের পূর্বে আবার ফিরে এসেছেন- এ ঘটনাকে তারা বিশ্বাস করে না। পশ্চিমা ও ইউরোপওয়ালাদের যুক্তি ও সাইন্স-এর প্রভাবে তারা মিরাজকে কাল্পনিক কাহিনী বলে আখ্যায়িত করে। তাদের এই আক্বীদা যেহেতু সরাসরি কুরআনে কারীমের সূরা বনী ইসরাঈল ১নং আয়াত “পবিত্র ও মহিমাময় সত্ত্বা তিনি, যিনি স্বীয় বান্দাকে রাত্রিবেলা মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত ভ্রমণ করিয়েছেন, যার চারদিকে আমি পর্যাপ্ত বরকত দান করেছি, যাতে আমি তাঁকে কুদরতের কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দেই। নিশ্চয়ই তিনি পরম শ্রবণকারী ও সর্বদ্রষ্টা’-এর পরিপন্থী। সুতরাং, তা স্পষ্ট কুফর। মধ্যাকর্ষণ শক্তি ও সময়ের স্বল্পতা ইত্যাদি যত প্রশ্নই করা হোক না কেন, আল্লাহ তা‘আলার মহাকুদরতের সামনে তা নিতান্তই খোড়া ও অবাস্তব। যে খোদা আসমান, জমীন, সময় মধ্যাকর্ষণ শক্তিসহ এত বড় সৌরজগৎ একটা ‘কুন’ শব্দের দ্বারা সৃষ্টি করলেন, সেই খোদার জন্যে স্বীয় হাবীবকে অতি অল্প সময়ের মধ্যে সপ্ত আসমান ও আরশের সফর করানো কোন ব্যাপার নয়। বিজ্ঞানীদের তৈরী বিভিন্ন খেয়াযান যদি মধ্যাকর্ষণ শক্তিকে ভেদ করে তার উপরে যেতে পারে, তাহলে আল্লাহ তা‘আলার তৈরী যান ‘বুরাক-রফরফ’ সেটাকে ভেদ করতে পারবে না কেন? এ সম্পর্কে অবান্তর প্রশ্ন তোলা আহমকির-ই পরিচায়ক। ভ্রান্ত আক্বীদা-২৩: অধিকাংশ বিদ‘আতী লোকেরা বিশ্বাস করে যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাযির-নাযির এবং তিনি গাইব জানতেন। তেমনিভাবে অনেকে তাদের ভন্ডপীর সম্পর্কেও এরূপ আক্বীদা পোষণ করে যে, তাদের খাজাবাবা গাইব জানে এবং অনেক দূর-দূরান্ত থেকে বিপদগ্রস্ত মুরীদদের বিপদের কথা নিজে জেনে তাকে বিপদমুক্ত করতে পারে। লোকদের এ ধারণাও স্পষ্ট কুফর ও শিরক। কারণ সদা সর্বত্র হাযির-নাযির ও আলিমূল গাইব হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা। কোন নবী-রাসূল, পীর বুজুর্গ সদা সর্বত্র হাযির-নাযির বা আলিমুল গাইব হতে পারে না। আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে কারীমে ইরশাদ করেন: “তাঁর কাছেই গায়েবের বা অদৃশ্য জগতের চাবি রয়েছে। এগুলো তিনি ব্যতীত অন্য কেউ জানে না।” [সূত্র: সূরা আনআম, আয়াত ৫৯।] অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে, “হে নবী! আপনি বলে দিন, আমি আমার নিজের কল্যাণ সাধনের বা ক্ষতি সাধনের মালিক নই; তবে আল্লাহ যা চান, তা-ই হয়। আর আমি যদি গাইবের কথা জানতাম, তাহলে বহু মঙ্গল অর্জন করতে পারতাম। তখন কখনো আমার কোন অমঙ্গল হতে পারত না। আমি তো ঈমানদারদের জন্যে শুধুমাত্র একজন ভীতি প্রদর্শক ও সুসংবাদদাতা।” [সূত্র: সূরা আরাফ, আয়াত ১৮৮] এ ধরনের অনেকগুলো আয়াত কুরআনুল কারীমে বিদ্যমান আছে। তেমনিভাবে অনেক সহীহ হাদীসেও এর প্রমাণ রয়েছে। যেমন, এক হাদীসে এসেছে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: আমি তোমাদের পূর্বে হাউজে কাউসারে অবস্থান করবো। আমার নিকট যারা পৌঁছবে, তারা হাউজে কাউসার থেকে পানি পান করবে এবং যারা সেখান থেকে পানি পান করবে, বেহেশতে পৌঁছার পূর্বে আর কখনো তারা পিপাসিত হবে না। তখন কিছু লোক আমার নিকট পৌঁছবে। কিন্তু তাদেরকে তৎক্ষণাত বাধা দেয়া হবে। তখন আমি বলব, এ লোকগুলো তো আমার উম্মত! আল্লাহর পক্ষ থেকে বলা হবে, আপনার পরে এরা দ্বীনের মধ্যে যে কত প্রকার নতুন জিনিস দাখিল করেছে, তা আপনি জানেন না। তখন আমি বলব, ধ্বংস ঐ ব্যক্তির জন্যে, যে আমার পরে দ্বীনের মধ্যে পরিবর্তন সাধন করেছে। [সূত্র : বুখারী শরীফ, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-৯৪৭, মুসলিম শরীফ, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-২৪৯] এছাড়াও শাফা‘আতে কুবরার ব্যাপারে বিস্তারিত বিবরণসহ যে হাদীস বর্ণিত হয়েছে, সেখানে নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মানুষ সকল নবীগণের আ. থেকে নিরাশ হয়ে হাশরের ময়দানে হিসেব শুরু হওয়ার সুপারিশ নিয়ে যখন আমার নিকট পোঁছাবে, তখন আমি সিজদায় পড়ে এমন শব্দ দ্বারা আল্লাহ তা‘আলার ছানা-সিফাত বর্ণনা করবো, যা আল্লাহ তা‘আলা ঐ সময় আমাকে শিক্ষা দিবেন এবং তা এমন প্রশংসাবাণী হবে যে, আল্লাহ তা‘আলা পূর্বে তা কাউকে শিক্ষা দেন নি। [সূত্র: খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-৬৮৫, বুখারী ও মুসলিম, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা -১০৯।] উভয় হাদীসে স্পষ্ট বক্তব্য বিদ্যমান রয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজ থেকে গাইব জানতেন না। হাদীসে এ বিষয়ে এরূপ শত শত প্রমাণ বিদ্যমান রয়েছে। হযরত আয়েশা রাযি. এর ওপর যখন মুনাফিকরা যিনার অপবাদ দিয়েছিল, তখন নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম দীর্ঘ এক মাস অস্থির ছিলেন। তারপর ‘সূরা নূর’ এর প্রথমাংশ নাযিল হলে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রকৃত ঘটনা জানতে পারেন। [সূত্র: বুখারী শরীফ, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৬৯৬।] হযরত আবু হুরাইরা রাযি. থেকে বর্ণিত হয়েছে যখন খাইবার বিজিত হলো, তখন ইহুদীরা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দাওয়াত দিল এবং বিষ মিশ্রিত বকরীর গোশত নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে খেতে দিল। তখন জিবরাঈল (আ কে পাঠিয়ে আল্লাহ তা‘আলা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এ বিষয়ে সতর্ক করার পর তিনি মুখ থেকে গোশত ফেলে দিলেন।[সূত্র: বুখারী শরীফ, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-৬১০।] গাইব জানার অর্থ: কারোর জানিয়ে দেয়া ব্যতীত নিজে নিজে জানা এবং সর্বপ্রকার গাইবের সংবাদ জানা। এ ধরণের জ্ঞান কোন মাখলুককেই দেয়া হয়নি। তবে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেসব গাইবের খবর জানতেন, সেগুলো আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে তাঁকে জানিয়ে দেয়া হয়েছিল। এগুলোর একটিও তিনি নিজের জ্ঞান-বুদ্ধি দ্বারা জানতেন না। আর এটা তার নবুওয়াত বা মর্যাদার পরিপন্থী নয়। কারণ, নবী হওয়ার জন্যে গায়েব-জান্তা হওয়ার কোন শর্ত নেই। নবীগণ গায়েব-জান্তা হলে অহীর কী প্রয়োজন ছিল? দ্বিতীয়ত: তিনি সকল প্রকার গাইব জানতেন না। যেমন, ইতিপূর্বে এতদসংক্রান্ত অনেক ঘটনা ও হাদীস পেশ করা হয়েছে। সুতরাং, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম জান্নাত-জাহান্নাম, কবর-হাশর, আরশ-কুরসী ইত্যাদি সম্পর্কে যত বর্ণনা প্রদান করেছেন, সেগুলোর ইলম আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁকে দান করা হয়েছিল। অতএব, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‘আলিমুল গাইব’ বলে বিশ্বাস করে আল্লাহর বিশেষ গুণাবলির মধ্যে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে শরীক করে নিজের ঈমান ক্ষতিগ্রস্ত করা উচিত নয়। সাহাবায়ে কিরাম তৎকালীন সময়ে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট তৎকালীন সময় নানা ধরণের প্রশ্ন করতেন, সেগুলোর জবাবের জন্যে তিনি অহী আগমনের অপেক্ষায় থাকতেন। কুরআনে এ ধরণের অনেক ঘটনা বর্ণিত আছে। সুতরাং, যদি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আলিমুল গাইব হতেন, তাহলে জবাবের জন্যে অহী নাযিলের অপেক্ষা করার কী প্রয়োজন ছিল? তাছাড়া কুরআন নাযিল হওয়ারই বা কী প্রয়োজন ছিল? আর নবী রাসূলগণ আ. যখন গাইব জানতেন না, তখন কোন পীর কিংবা খাজাবাবা গাইব জানেন-এরূপ ধারণা অন্তরে পোষণ করা যে কত বড় মূর্খতা, তা বলাই বাহুল্য। অনেক মূর্খ লোক নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হাযির-নাযির বলে বিশ্বাস করে। তারা মীলাদ মাহফিলের মধ্যে চেয়ার খালি রেখে দেয় এবং হঠাৎ একসময় সকলে সম্মিলিতভাবে দাঁড়িয়ে যায়। এগুলো সব মনগড়া কাজ। এর সপক্ষে শরী‘আতে কোন দলিল নেই। হুযূর সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম-এর তিরোধানের পর সাহাবায়ে কিরাম রাযি. কত দ্বীনি মজলিস করেছেন। তাঁরা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি আমাদের চেয়ে বহুগুণ বেশি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন এবং আমাদের চেয়ে অনেক বেশি মুহাব্বত রাখতেন। কিন্তু তাঁরা কখনো তাঁদের মজলিসে এরূপ কিয়াম করেন নি। এটা একটা আজব ব্যাপার যে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সালাম এর প্রকৃত মুহাব্বতকারী সাহাবায়ে কিরাম রাযি. দুরূদ পড়ার সময় কখনো কিয়াম না করলেও এসব বিদ‘আতীরা দুরূদ পড়তে পড়তে একসময় দাঁড়িয়ে যায়। এখন প্রশ্ন জাগে, তারা যখন দাঁড়ায়, তখন কিভাবে বুঝতে পারে যে, এ মুহূর্তে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আসছেন-যদ্দরুন এখন দাঁড়ানো প্রয়োজন? এবং যখন একটু পরে তারা বসে পড়ে, তখন কী করে তারা বুঝতে পারে যে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এখন চলে গেছেন? সুতরাং, এখন বসা দরকার। হাস্যকর ব্যাপার যে, তারা যখন বলে,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বত্র হাযির-নাযির, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রস্থান অনুমান করে বসে যায় কিভাবে? যিনি সদা সর্বত্র হাযির-নাযির, আবার প্রস্থান হয় কি করে? কেননা, তিনি তো সদা হাজিরই থাকবেন। দেখা যাচ্ছে-তাদের কথা ও কাজ পরস্পর বিরোধী। বলা বাহুল্য, মিলাদ মাহফিলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আগমন-প্রস্থানের এ ধরণের আক্বীদা পোষণ করা শিরক-মহাপাপ। শরী‘আতের দৃষ্টিতে, দাঁড়িয়ে বা বসে সব অবস্থায়ই দুরূদ শরীফ পড়া যায়। তবে আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশে নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম সকলকে নামাযের মধ্যে বসা অবস্থায় দুরূদ পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। যে কারণে নামাযের আখিরী বৈঠকে তাশাহুদের পর বসাবস্থায়ই দুরূদ শরীফ (আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা......) পড়া হয়ে থাকে। সুতরাং বসে দুরূদ শরীফ পড়া যে উত্তম, তাতে সন্দেহের কোন অবকাশ থাকতে পারে না। আর সম্মিলিতভাবে একই সুরে অশুদ্ধ উচ্চারণে দরূদ পড়ার পদ্ধতিও শরী‘আতে প্রমাণিত নয় এবং শব্দ ও অর্থগত ভুলসহ ‘ইয়া নবী’ ওয়ালা দরূদ-সালাম পড়াও ঠিক নয়। হাদীসের কিতাবে সহীহ দরূদের কোন অভাব আছে কি? তাছাড়া মীলাদের নামে একটা মাহফিলে দ্বীনের কোন আলোচনা নেই, সুন্নাতের কোন বর্ণনা নেই, অথচ আরবী ফারসী বাংলা ও উর্দু ভাষার কিছু কবিতা পাঠ করা হলো, কয়েকবার ভুল-অশুদ্ধ উচ্চারণে ও গলদ তরিকায় কয়েকবার দুরূদ-সালাম পড়া হলো, আর তাকে মহা ইবাদত ও পুণ্যের কাজ মনে করা হলো, ব্যস। বস্তুত এটা দ্বীনের নামে আত্মপ্রবঞ্চনা এবং কিছু অর্থলোভী মৌলভীদের রোজগারের হাতিয়ার মাত্র। দ্বীনের সাথে এগুলোর আদৌ কোন সম্পর্ক নেই। আর আখিরাতে এসব আমলের বিনিময়ে কোন সওয়াবের আশা করাও অবান্তর। বরং ভুয়া ইশকে রাসূলের নামে এ সকল গর্হিত বিদ‘আতী কর্মকাণ্ডের কারণে পরকালে তারা ভীষণ ক্ষতির সম্মুখীন হবে, সুতরাং এ জাতীয় দ্বীনের নামে ধোঁকামূলক যাবতীয় কার্যকলাপ হতে সকল মুসলমানের বেঁচে থাকা কর্তব্য। ভ্রান্ত আক্বীদা-২৪: অনেকে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ব্যাপারে এ বিশ্বাস পোষণ করে থাকে যে, তিনি নূরের তৈরী, তিনি শুধুমাত্র মানবাকৃত ধারণকারী বাস্তবিক পক্ষে তিনি সাধারণ মানুষের মত কোন মানুষ ছিলেন না। তিনি ছিলেন নূরের তৈরী অনেক আবার এও বিশ্বাস পোষণ করে যে, আল্লাহর নূরে রাসূল সৃষ্টি অর্থাৎ আল্লাহর জাতি বা সত্তাগত নূরে রাসূল সৃষ্টি, তিনি আল্লাহর মূল সত্ত্বার একটি অংশ (নাউযুবিল্লাহ)। উল্লেখিত উভয় আক্বীদাই সম্পূর্ণ ইসলাম বিরোধী বিধ্বংসী আক্বীদা। কারণ প্রথমত আল্লাহ তা‘আলা যে নূরের তৈরী এর কোন প্রমাণ নেই। আল্লাহ তা‘আলার সাথে পৃথিবীর কোন বস্তুর তুলনা নেই। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন -لبْسَ كمِثلِه شيٌ কোন জিনিস তার তুলনা নেই। তাই আল্লাহ তা‘আলা নূর বা নূরের তৈরী বলা কোন অবস্থাতেই ঠিক হবে না। সম্পূর্ণ কুফর এবং শিরক হবে। তাছাড়া আল্লাহ তা‘আলাকে নূরের তৈরী মানলে তাঁকে মাখলুক তথা সৃষ্টি বস্তু মানতে হবে। (নাউযুবিল্লাহ) কেননা, নূর মাখলুক আর নূরের দ্বারা যে জিনিস তৈরী সে জিনিসও মাখলুক হবে। আল্লাহ তা‘আলাকে মাখলুক বলে বিশ্বাস করলে তো সাথে সাথে ঈমান চলে যাবে। আল্লাহ তা‘আলাতো সবকিছুর খালিক (সৃষ্টিকারী)। তিনি কি করে মাখলুক হতে পারেন? আর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নূরের তৈরী বলাও মারাত্মক ভুল, ভ্রান্ত আক্বীদা। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্যান্য সকল মানুষের মতই মাটির তৈরী একজন মানুষ ছিলেন। তবে তিনি ছিলেন সকল যুগের সবচেয়ে সেরা মানুষ। মানব জাতির গৌরব হিদায়তের নূর বা আলো। রিসালাতের নূর, ঈমানের নূর। বা তাঁর মাটির শরীরে নূরে সংমিশ্রণ ছিল, এটা বাস্তব বৈকি। তাই বলে তিনি নূরে তৈরী বা মানুষ ভিন্ন স্বতন্ত্র কোন জাতি ছিলেন না। তিনি ছিলেন মানব জাতিরই অন্তর্ভুক্ত। কারণ মানব জাতির প্রধান বৈশিষ্ট্য হল-তারা পিতার ঔরসে মায়ের গর্ভে জন্ম লাভ করে। মাতৃদুগ্ধ পান করে, ধীরে ধীরে ছোট থেকে বড় হতে থাকে, পানাহার নিদ্রা-প্রস্রাব-পায়খানা ইত্যাদির মত স্বাভাবিক ক্রিয়া কর্মের পাশাপাশি তারা জৈবিক চাহিদার কারণে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। এতে সন্তান-সন্তাদির প্রজন্ম হয়। তারা সুখে যেমন হাসে-দুঃখেও তেমন কাঁদে, রোগ, শোক ও দুঃখে যেমন তারা কাতর হয় তেমনি যাদু ও বিষক্রিয়ায় তারা চরম কষ্ট পায়। এমনকি মৃত্যুর দুয়ারে পর্যন্ত ঢেলে যায়। আর এ সমস্ত মানবীয় বৈশিষ্ট্য কেবল মাটির তৈরী মানুষের বেলায়ই প্রযোজ্য। এখন এমন কেউ কি আছেন যিনি প্রমাণ করতে পারেন যে মানবী এ সমস্ত বৈশিষ্ট্যর কোন একটি থেকেও হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুক্ত ছিলেন, কস্মিনকালেও কেউ পারবে না। কারণ, তিনি তো মাটির তৈরী মানুষ ছিলেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন : إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِثْلُكُمْ يُوحَى إِلَيَّ হে নবী! আপনি বলে দিন! আমি তোমাদের মতই মানবজাতের একজন মানুষ। তবে আমার নিকট ওহী আসে (কেবল এক্ষেত্রে আমি তোমাদের ব্যতিক্রম) [সূত্র : সূরা কাহাফ, ১১০] অন্যত্র ইরশাদ করেন- وَلَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنْسَانَ مِنْ سُلَالَةٍ مِنْ طِينٍ আমি মানুষকে মাটির সারাংশ (খাদ্য সার) থেকে সৃষ্টি করেছি।[সূত্র:সূরা মু‘মিনূন,১২] সুতরাং, উক্ত আয়াত সমূহ থেকে প্রমাণ হল রাসূল অন্যান্য মানুষের মত মাটির তৈরী। অতএব, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে মানুষ বলে বিশ্বাস করা জরুরী। তা না হলে প্রথম আয়াত অস্বীকার করে কাফির হয়ে যাবে। আর যখন মানুষ বলা হল তাহলে দ্বিতীয় আয়াত হিসাবে তার মাটির তৈরী হওয়া জরুরী ভাবে বিশ্বাস করতে হবে। তা না হলে আয়াত অস্বীকার করে কাফির হতে হবে। তাছাড়া মানুষ হল আশরাফুল মাখলুকাত। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যদি মানুষই না বলা হয়, তাহলে তিনি তো আশরাফুল মাখলুকাত থেকেই বাহির হয়ে যাবেন। যা কিছুতেই হতে পারে না। যদি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ হিসাবে স্বীকার করা হয় তাহলে তাকে অবশ্যই মাটির তৈরী মানুষ হিসাবেই স্বীকার করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন : قُلْ سُبْحَانَ رَبِّي هَلْ كُنْتُ إِلَّا بَشَرًا رَسُولًا বলুন আমার পবিত্র মহান পালন কর্তা, আমি একজন মানুষ রাসূল। [সূরা বনী ইসরাইল ৯৩-৯৫] [এছাড়া সূরা আরাফ ৬৯, সূরা হুদ ২৭, সূরা মুমিনূন ৩৩, সূরা শুয়ারা ২৩, হা-মীম সিজদা ৬, সূরা আম্বিয়া ৩৪] উল্লেখিত আয়াতেও রাসূলে সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানুষ তথা মাটির তৈরী হওয়ার স্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই ঘোষণা করেন : “اِنَّمَا اَنَا بَشَرُ” অর্থাৎ: “ আমি তো একজন মানুষ।” [সূত্র:বুখারী ১,৩৩২/মুসলিম ২:৭৪] অন্যত্র ইরশাদ : " اِنَّمَا اَنَا بَشَرُمِّثْلُكُمْ " অর্থাৎ,“আমিতো তোমাদের মতই একজন মানুষ।” [সূত্র: বুখারী ১:৫৮] এ সব উল্লেখিত আয়াত ও হাদীস থেকে প্রমাণ হলো রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাটির তৈরী একজন মানুষ। নূরের তৈরী নন। এটা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের আক্বীদা। যদি কেউ ইহার ব্যতিক্রম বিশ্বাস করে তাহলে সে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত থেকে বেরিয়ে যাবে। https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islami_jindegi
Blogger দ্বারা পরিচালিত.