Header Ads

হে আমার মেয়ে...!


জীবন সায়াহে দাড়িয়ে আপন মেয়ের প্রতি একজন বয়োবৃদ্ধ পিতার হৃদয় নিংড়ানো উপদেশ


উপদেশ নং-১
হে আমার মেয়ে! আজ আমি চল্লিশের কোঠা পার হয়ে পঞ্চাশের কোঠায় উপনীত এক প্রৌঢ় যে যৌবনকে বিদায় জানাচ্ছে। এখন আমার নতুন কোন স্বপ্ন বা উচ্চ আকাঙ্খা নেই।
আমি অনেক দেশ ও শহর ভ্রমণ করেছি। বহু জাতির কৃষ্টি-কালচারের সাথে পরিচিত হয়েছি। জীবন ও জগৎ সম্পকে অনেক ধারণা অর্জন করেছি। আজ আমার কাছ থেকে কয়েকটি কথা শোন। কথাগুলো সঠিক ও সুস্পষ্ট। এগুলো আমি আমার বয়স ও অভিজ্ঞতার আলোকেই বলছি ।
 আমি ছাড়া অন্য কেউ তোমাকে এগুলো বলবে না।আমি অনেক লিখেছি। মিম্বারে ও সমাবেশে দাঁড়িয়ে অনেক ভাষণ দিয়েছি। অনেক নসীহত পেশ করেছি। উত্তম চরিত্র অর্জনের আহবান জানিয়েছি । সকল প্রকার অন্যায় কাজ ও অশ্লীলতা বর্জনের ডাক দিয়েছি । নারীদেরকে ঘরে ফিরতে ও কুরআনের সুপ্রসিদ্ধ বিধান পদার আবরণে আবৃত হওয়ার আহবান জানিয়েছি। লিখতে লিখতে কলম দুর্বল হয়ে গেছে। কথা বলার সময় মুখে তা আটকে যাচ্ছে । এত কিছু করার পরও আমি মনে করি না যে, আমরা কোন অশ্লীল কাজ সমাজ থেকে দূর করতে পেরেছি। বেহায়াপনা দিন দিন বেড়েই চলছে । পাপাচারিতা দ্রুত প্রসারিত হচ্ছে এবং অশ্লীলতা দেশ থেকে দেশাস্তরে ছড়িয়ে পড়ছে। আমার মনে হয় কোন ইসলামি দেশই এই আক্রমণ থেকে মুক্ত নয়। মিশর, সিরিয়া, তথা সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যের সীমা পার হয়ে পাকিস্তান, বাংলাদেশসহ সমগ্র এশিয়ায় এর আক্রমণ বেড়েই চলছে। মহিলারা বের হচ্ছে পর্দাহীন হয়ে, সৌন্দর্যের স্থানগুলো প্রকাশ করে। মুখমন্ডল, বক্ষদেশ ও কেশ উন্মুক্ত করে ।
আমার ধারণা নসীহত করে আমরা সফল হইনি এবং ভবিষ্যতেও হবে না। হে আমার কন্যা! তুমি কি জান কেন আমরা সফল হইনি? কেননা, আমরা এখনও গ্রহণযোগ্য পস্থায় নসীহত করতে পারিনি এবং সংশোধনের দরজায় পৌছতে পারিনি ।
হে আমার মেয়ে! সংশোধনের দরজা তোমার সামনে । দরজার চাবিও তোমার হাতে । বন্ধ তালা খুলে ভিতরে প্রবেশ করলেই সব সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে ।
উপদেশ নং-২
হে আমার মেয়ে! আমরা তোমার দ্বীনি বোনদেরকে আল্লাহর ভয় দেখিয়েছি, কিন্তু কাজ হয়নি। অতঃপর অবৈধ সম্পর্ক ও ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার কারণে ভয়াবহ রোগে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়ে সতর্ক করেছি। কিন্তু কোন ফল হয়নি। এ বিষয়ে অনেক বই লেখা হয়েছে। বহু বক্তৃতা দেয়া হয়েছে। তাও ব্যর্থ হয়েছে। এখন আমি কান্ত । শরীরে পরাজিত সৈনিকের ন্যায় ময়দান ছেড়ে বিদায় নিতে যাচ্ছি। আমরা বিদায় নিয়ে তোমার দ্বনি বোনদের ইজ্জত-সন্ত্রম ও সতীত্ব রক্ষার দায়িত্ব তোমার হাতেই ছেড়ে দিচ্ছি। তোমার বিপদগামী বোনদেরকে উদ্ধার ও সংশোধনের দায়িত্ব তোমার উপরই রেখে দিয়ে তোমার সফলতার দিকে চেয়ে আছি ।

উপদেশ নং-৩
হে আমার মেয়ে! তুমি জেনে রেখো যে, তোমার হেফাজত তোমার হাতেই। একথা সঠিক যে, পাপের পথে অগ্রসর হওয়াতে পুরুষকেই প্রথম দায়ী করা যায়। নারীগণ কখনই প্রথমে এ পথে অগ্রসর হয় না। তবে তাদের সম্মতি ব্যতীত কখনই তারা অগ্রসর হতে পারে না । নারীগণ নরম না হলে পুরুষেরা শক্ত হয় না। মহিলারা দরজা খুলে দেয় আর পুরুষেরা ভিতরে প্রবেশ করে ।

উপদেশ নং-৪
হে আমার মেয়ে! তুমি যদি চোরের জন্য ঘরের দরজা খুলে দাও । আর চোর চুরি করে পালিয়ে যাওয়ার সময় চিৎকার করে বল, হে লোকসকল!আমাকে সাহায্য কর । আমাকে সাহায্য কর । তাহলে তোমার চেচামেচি করা কি ঠিক হবে? তোমার কান্নাকাটিতে কি লাভ হবে? তোমার সাহায্যের জন্য কেউ কি এগিয়ে আসবে?

উপদেশ নং-৫
হে আমার মেয়ে যদি তুমি জানতে পারতে যে, পুরুষেরা হচ্ছে নেকড়ে, আর তুমি হচ্ছে ভেড়া, তাহলে কিন্তু তুমি নেকড়ের আক্রমণ থেকে ভেড়ার ন্যায় পলায়ন করতে । তুমি যদি জানতে পারতে যে, সকল পুরুষই চোর তাহলে কৃপণের ন্যায় তুমি তোমার সকল মূল্যবান সম্পদ পুরুষদের থেকে হেফাযত করার জন্য সিন্দুকে লুকিয়ে রাখতে ।
মনে রেখো, নেকড়ে কিন্তু ভেড়ার গোশত ছাড়া অন্য কিছু চায় না। আর পুরুষ তোমার কাছ থেকে যা ছিনিয়ে নিতে চায় তা কিন্তু ভেড়ার গোশতের চেয়ে অনেক মূল্যবান। তা যদি তোমার কাছ থেকে চলে যায়, তাহলে জেনে রাখবে তা হারিয়ে তোমার বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়া অনেক ভাল। সে তোমার সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদটি নষ্ট করতে চায়, যার মধ্যে নিহিত রয়েছে তোমার সম্মান, যা নিয়ে তুমি গর্ব কর এবং যা নিয়ে তুমি বেঁচে থাকতে চাও। নেকড়ে কর্তৃক ভেড়ার গোশত ভক্ষণের চেয়ে পুরুষ কর্তৃক নারীর সতিত্ব হরণ শতগুণ নিশংস ও বেদনাদায়ক। সে তোমার সতিত্বই ভক্ষণ করতে চায়।

উপদেশ নং-৬
হে আমার মেয়ে! আল্লাহর শপথ কোন পুরুষ যখন কোন যুবতী মহিলার দিকে দৃষ্টি দেয় তখন সে মহিলাটিকে বস্ত্রহীন অবস্থায় কল্পনা করে। এছাড়া সে অন্য কিছু চিন্তা করে না । তোমাকে কোন যুবক যদি বলে, সে তোমার উত্তমচরিত্রে মুগ্ধ, তোমার আচার-ব্যবহারে আকৃষ্ট এবং সে কেবল তোমার সাথে একজন বন্ধুর মতই আচরণ করে এবং সে হিসাবেই তোমার সাথে কথা বলতে চায়; তাহলে তুমি তা বিশ্বাস করো না। আল্লাহর শপথ! সে মিথ্যুক!

উপদেশ নং-৭
হে আমার মেয়ে! যুবকেরা তোমাদের আড়ালে যে সমস্ত কথা বলে তা যদি তোমরা শুনতে, তাহলে এক ভীষণ ভীতিকর বিষয় জানতে পারতে। কোন যুবক তোমার সাথে যে কথাই বলুক, যতই হাসুক, যত নরম কণ্ঠেই বলুক ও যত কোমল শব্দই ব্যবহার করুন, সেটি তার আসল চেহারা নয়; বরং সেটি তার অসৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের ভূমিকা ও ফাঁদ ব্যতীত অন্য কিছু নয়।

উপদেশ নং-৮
হে আমার মেয়ে! সে যদি তোমাকে তার ষড়যন্ত্রের জালে আটকাতে পারে তাহলে কি হবে? কি হবে তোমার অবস্থা? তোমার কি তা জানা আছে? একটু চিন্তা কর ।
কোন নারী যদি এমন কোন দুষ্ট পুরুষের কবলে পড়ে যায়, তখন সে হয়ত সেই পুরুষের সাথে মিলে কয়েক মিনিট কল্পিত স্বাদ উপভোগ করবে। তারপর কি হবে? তুমি কি তা জান? পরক্ষণই সে তাকে ভুলে যাবে। সে তাকে দ্বিতীয়বার পাওয়ার আশাপোষণ করবে। হয়ত কয়েকবারের জন্য তাকে পেলে পেতেও পারে, তবে স্বামী হিসাবে তার সাথে চিরদিন বসবাস করার জন্যে এবং স্বীয় যৌবন পার করার জন্যে নয় । সে অচিরেই তাকে ভুলে যাবে। এটিই সত্য। কিন্তু সেই মহিলাটি চির দিন সেই স্বল্প সময় উপভোগের জ্বালা ভোগ করতে থাকবে, যা কখনও শেষ হবে না। এও হতে পারে যে, সে তার পেটে এমন কলঙ্ক রেখে যাবে, যা থেকে কখনই সে পরিত্রাণ পাবে না। চির দিন তার কপালে হতাশার ছাপ থাকবে, চেহারায় দুশ্চিন্তার ছায়া পড়বে। সে তাকে ছেড়ে দিয়ে আরেকটি শিকার খুঁজতে থাকবে এবং নতুন নতুন সতীদের সতীত্ব ও সম্ভণ হরণ করার অনুসন্ধানে বের হবে।
উপদেশ নং-৯
হে আমার মেয়ে। এভাবে একটি যুবক অগণিত নারীকে নষ্ট করলেও আমাদের জালেম সমাজ তাকে একদিন ক্ষমা করে দিবে। সমাজ বলবে, একটি যুবক পথহারা ছিল, এখন সে সুপথে ফিরে এসেছে। এই অজুহাতে সে হয়ত সমাজের কাছে গৃহীত হবে এবং সকলেই তাকে গ্রহণ করে নিবে । কিন্তু তুমি অপমানিত, লাঞ্ছিত হয়ে চিরদিন পড়ে থাকবে । আজীবন তোমার জীবনে কালিমা লেগে থাকবে । কোন দিন তা মুছে যাবে না। আমাদের জালেম সমাজ কখনই তোমাকে ক্ষমা করবে না ।


উপদেশ নং-১০
হে আমার মেয়ে তোমার সম্মান তোমার হাতেই রেখে দিলাম এবং তোমার ইজ্জত-আব্রু ও মর্যাদা রক্ষার দায়িত্ব তোমার উপরই ছেড়ে দিলাম। সুতরাং তোমার বোনদেরকে উপদেশ দাও । বিপদগামীদের সংশোধন কর এবং সুপথে ফিরিয়ে আন ।
উপদেশ নং-১১
হে আমার মেয়ে তুমি তাদেরকে বল, হে আমার বোন, পথ চলার সময় কোন পুরুষ যদি তোমার দিকে তাকিয়ে দেখে তবে তুমি তার থেকে বিমুখ হয়ে যাও এবং তোমার চেহারা অন্য দিকে ঘুরিয়ে ফেল । এরপরও যদি তার কাছ থেকে সন্দেহজনক কোন আচরণ অনুভব কর কিংবা সে তোমার গায়ে হাত দিতে চায় অথবা কথার মাধ্যমে তোমাকে বিরক্ত করতে উদ্যত হয় তাহলে তোমার পা থেকে জুতা খুলে তার মাথায় আঘাত কর । তুমি যদি একাজটি করতে পার তাহলে দেখবে পথের সকলেই তোমার পক্ষ নিবে, তোমাকেই সাহায্য করবে। সে আর কখনও তোমার মত অন্য কোন নারীর উপর অসৎ দৃষ্টি দিবে না। সে যদি সত্যিই তোমাকে পছন্দ করে থাকে, তাহলে তোমার এই আচরণে তার ছশ ফিরবে, তাওবা করবে এবং তোমার সাথে হালাল সম্পর্ক বিবাহ গড়ার জন্যে বৈধ পন্থা অবলম্বনের দিকে অগ্রসর হবে ।
পার্থিব সম্মান, প্রতিপাত, ক্ষমতা-দাপটে একজন মেয়ে যত উচু স্তরেই পৌঁছে যাক না কেন, বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া ছাড়া পূর্ণ সৌভাগ্য ও কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌছতে পারবে না। বিবাহের ফলে সে হয়ত সতী স্ত্রী, সম্মানিত মা, গৃহিণী সবই হবে। রাণী, সম্রাজী সকলের ক্ষেত্রে একই কথা ।
মিসর ও সিরিয়ার দু’জন প্রসিদ্ধ মহিলা সাহিত্যিকের পরিচয় আমি জানি । ধন-সম্পদ, সাহিত্য সম্মান সবই তারা পেয়েছে। কিন্তু বিবাহসম্মদ হারিয়েছে । তারা উন্মাদের ন্যায় জীবন যাপন করছে । তাদের নাম বলতে আমাকে বাধ্য কর না। তারা খুবই প্রসিদ্ধ ।
বিবাহ একজন মহিলার চূড়ান্ত লক্ষ্য। যদিও সে সংসদের সদস্য, নেতার সঙ্গী হোক না কেন? অসতী নারীকে কেউ বিবাহ করে না। এখন যে যুবক তার সাথে প্রবঞ্চণা করে ধোঁকা দেয় সেও তাকে ছেড়ে চলে যায় এবং অন্য কোন সতী নারীকে বিবাহ করে। কেননা, সেও চায় না যে, তার গৃহকত্রী, তার সন্তানের মা একজন পতিতা হোক ।
বখাটে যুবক যখন তার প্রবৃত্তি চরিতার্থে কোন নষ্ট মেয়েকে কাছে না পায়, যে শয়তানী ধর্মের কথিত বিবাহ (লিভটগেদার) বসবে, তখনই সে ইসলামি পদ্ধতিতে হয়তো কাউকে বিবাহ করতে চাইবে ।


উপদেশ নং-১২
হে আমার মেয়ে! তোমাদের কারণেই আজকে বিবাহের বাজারে মন্দাভাব । তোমাদের মত মেয়েরা যদি পতিতা না হত তাহলে বিবাহ বাজারও মন্দা হত না এবং পাপের বাজার চালু হত না। এজন্য কেন সতী নারীদেরকে এই মহামারী দূর করতে উদ্বুদ্ধ করবে না। তোমরা তো আমাদের থেকে এক্ষেত্রে বেশী যোগ্য ও সক্ষম । কেননা, তোমরা মেয়েদের ভাষা বুক । তাদের হৃদয়ে প্রবেশ করতে পার । তোমাদের ন্যায় সৎ ভদ্র, ধাৰ্মিক মেয়ে ছাড়া অন্য কেউ এই ফেতনা দূর করতে পারবে না। সিরিয়ার অনেক পরিবারে বিবাহ উপযুক্ত মেয়ে আছে। কিন্তু তারা স্বামী পাচ্ছে না। কারণ, যুবকরা বৈধ স্ত্রীর স্থলে পতিতাদের সহজে পেয়ে যায়। ফলে বিবাহের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে না। আমার ধারণা অন্যান্য দেশেও একই অবস্থা।


উপদেশ নং-১৩
হে আমার মেয়ে! তোমাদের থেকে সাহিত্যিক, শিক্ষার্থী, শিক্ষিকার একটি দল তৈরী কর যারা তোমার বিভ্রান্ত বোনদের সুপথে ফিরিয়ে আনবে। তাদেরকে আল্লাহর ভয় দেখাও। যদি তারা ভয় না পায় তবে বাস্তবতা বুঝাও ৷ তাদেরকে এভাবে বল, হে আমার বোন! তুমি আজকে সুন্দরী কিশোরী, তাই যুবক তোমার প্রতি আকর্ষণ দেখায়। তোমার চারপাশে ঘুরতে থাকে। কিন্তু এই সৌন্দর্য, তারুণ্য কি সর্বদা থাকবে? জগতের কিছুই তো নতুন থাকে না। সুতরাং যখন কুজো বুড়ি হয়ে যাবে তখন কি হবে? ভেবে দেখেছে? সেদিন কে তোমার দেখাশোনা করবে? তুমি কি জান সেদিন কে এই বুড়িকে দেখা শোনা করবে? তার ছেলে-মেয়ে, নাতিনাতনীরা। তখন এই বুড়িই পরিবারের সম্রাজ্ঞী সেজে বসবে। আর অন্যরা…তোমরাই ভাল জান তার কি হবে?
এখন তোমরাই বল যে, এই সামান্য ভোগ সেই বেদনাদায়ক কষ্টের সমপর্যায়ে কি হতে পারে? এরূপ ক্ষণিকের ভোগ – জীবন ক্রয় কতে চাও সেই লাঞ্ছনাকর জীবনের বিনিময়ে ।
এ ধরণের কথা বলার প্রয়োজন অনুভব করছি না। তোমার হত দরিদ্র অবলা বোনের পথ নিরদেশনায় তোমরা উদাসীন হয় না। তাদের যদি আলো দেখাতে নাই পার তাহলে অন্তত নতুন প্রজনের অবলা কিশোরীকে এদের পথে চলা থেকে দূরে রাখার চেষ্টা কর ।


উপদেশ নং-১৪
হে আমার মেয়ে আমি তোমাদের থেকে এটা চাই না যে, তোমরা এক লাফে মুসলিম মেয়ের অবস্থা পরিবর্তন করে ফেলবে । না, এটা অসম্ভব । হঠাৎ উন্নতি স্থায়ী হয় না। বরং তোমরা মুসলিম মেয়েদেরকে ধাপে ধাপে কল্যাণের দিকে নিয়ে যাবে। যেভাবে তারা পাপের পথে ধীরে ধীরে অগ্রসর হয়েছে ।
প্রথমে তারা এক চুল ছোট করেছে, কাপড় সংক্ষিপ্ত করেছে। হিজাব পাতলা করেছে। এই করুণ অবস্থায় পৌঁছতে দীর্ঘ দিন লেগে গেছে। পরিবারের সম্রাক্ত পুরুষও তা বুঝতে পারে নি। অশ্লীল পত্রিকা, মিডিয়া এতে উৎসাহ দিয়েছে। আর বখাটে যুবকেরা এ দৃশ্য দেখে আনন্দ উল্লাস করেছে।
অথচ মুসলিম নারী সমাজ এত নিকৃষ্ট হয়েছে যা ইসলাম সমর্থন করে না, ইসলাম কেন, খ্রিস্টান অগ্নিপূজকরাও সমর্থন করে না। এমন কি নিরীহ পশুও তা দেখে লজ্জা পায় ।
দু’টি মোরগ যদি একটি মুরগীর পিছনে লেগে যায়, তাহলে তার আত্মসম্মান রক্ষার্থে পরস্পর যুদ্ধ করে । কিন্তু হায়! মুসলিম উম্মাহর কি অবস্থা!!
বৈরুত, ইস্কান্দার শহরের সমুদ্র সইকতে অনেক মুসলমান পুরুষ আছে। তারা আপন স্ত্রীদের বেপর্দা পরপুরুষ দেখলেও আত্মসম্মান বোধ করে না। পর পুরুষের সামনে তারা অর্ধ নগ্ন হয়ে বের হয়।
বিভিন্ন ক্লাব, নৈশ পার্টিতে অনেক মুসলিম তাদের মুসলিমা স্ত্রীদের পরপুরুষের সাথে নাচতে দেয়। পরম্পর আলিঙ্গন করে, গালে চুমু দেয়, শরীরে শুয়ে পড়ে। কিন্তু তাও কেউ অপছন্দ করে না।
মুসলিম ইউনিভাসিটিগুলোতে সহশিক্ষার বদৌলতে (?) যুবকরা বেপর্দা যুবতী শিক্ষার্থীর পাশে বসে। বেলোপনা চালিয়ে যায়। কিন্তু তাও মুসলিম পিতা-মাতা অপছন্দ করে না । হায় আফসোসা আমরা আজ কত নীচু হয়েছিা!
হে আমার মেয়ে! মুসলিম মেয়েদের এই করুণ অবস্থা একদিনে পরিবর্তন হবে না। এক লাফে তারা পূর্বের সেই আসল অবস্থায় ফিরে যাবে না; বরং আমরা সেভাবেই তাদেরকে ধীরে ধীরে পূর্বের অবস্থায় ফেরত নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করব, যেভাবে পর্যায়ক্রমে তারা বর্তমানের করুন ও দুঃখজনক অবস্থায় এসে পৌছেছে।
আমাদের সামনে পথ অনেক দীর্ঘ পথ। যদি দীর্ঘ হয়, আর তার বিকল্প সংক্ষিপ্ত অন্য কোন পথ না থাকলে যে ব্যক্তি দীর্ঘ পথের অভিযোগ করে যাত্রা শুরু করবে না, সে কখনও তার গন্তব্যস্থলে পৌছতে পারবে না।
উপদেশ নং-১৫
হে আমার মেয়ে তুমি প্রথমে মুসলিম নারীদেরকে পুরুষদের সাথে খোলামেলা উঠা-বসা, চলাফেরা এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে বেপর্দা হয়ে সহশিক্ষায় প্রবেশ করতে নিষেধ কর । সেই সাথে সহ শিক্ষার খারাপ দিকগুলো তুলে ধর। তুমি তাদেরকে মুখ ঢেকে রাখতে বল। যদিও ফিতনার আশঙ্কা না থাকলে আমি মুখ ঢাকাকে ওয়াজিব মনে করি না। মুখ খুলে রাস্তায় চলার চেয়ে নির্জনে মুখ ঢেকে পুরুষের সাথে সাক্ষাৎ করা অধিক বিপদজনক ।
স্বামীর অনুপস্থিতিতে স্বামীর ঘরে স্বামীর বন্ধুর সামনে বসে গল্প করা, আপ্যায়ান করা আর পাপের দরজা খুলে দেওয়া একই কথা। ভার্সিটিতে সহপাঠীর সাথে করমর্দন করা অন্যায়, তার সাথে অবিরাম কথা ও মোবাইলে আলাপচারিতা চালিয়ে যাওয়া ক্ষতিকর। একসাথে বিদ্যালয়ে যাওয়া অনুচিত। বান্ধবীর সাথে গৃহ শিক্ষকের রুমে একত্রিত হওয়া অপরাধ ।
উপদেশ নং-১৬
হে আমার মেয়ে! তুমি এ বিষয়টি ভুলে যেও না যে, আল্লাহ্‌ তাআলা তোমাকে নারী হিসাবে সৃষ্টি করেছেন। আর তোমার সহপাঠীকে পুরুষ বানিয়েছেন। তোমাদের প্রত্যেকের মধ্যেই এমন উপাদান যুক্ত করা হয়েছে, যার কারণে তোমরা একে অপরের প্রতি ঝুকে পড় । সুতরাং তোমাদের কেউ এমনকি পৃথিবীর সকল মানুষ মিলে চেষ্টা করলেও আল্লাহর সৃষ্টিতে কোন পরিবর্তন আনতে পারবে না। তারা কখনই নারীপুরুষের ব্যবধান উঠিয়ে দিয়ে উভয়কে সমান করতে পারবে না এবং নারী-পুরুষের পরম্পরের দিকে আকর্ষণকে ঠেকাতে পারবে না।
যারা সভ্যতার নামে নারী-পুরুষের মধ্যকার ব্যবধান উঠিয়ে দিতে চায় এবং উভয় শ্রেণীর জন্য সমান অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে কর্মক্ষেত্রে মিশ্রিত হয়ে যাওয়ার আহবান জানায় তারা মিথ্যুক । কারণ, এর মাধ্যমে তারা নিজেদের মনের চাহিদা মেটাতে চায় এবং অন্যের স্ত্রী-কন্যাকে পাশে বসিয়ে নারীদের সৌন্দর্য উপভোগ করতে চায় । সেই সাথে আরও কিছু করার সুযোগ পেলে তাও করতে চায়। কিন্তু এ কথাটি এখনও তারা খোলাসা করে বলার সাহস পাচ্ছে না। সুতরাং তারা নারীদের সম অধিকার প্রতিষ্ঠা, সভ্যতা ও উন্নয়নের যে সুর তুলছে তা নিছক সস্তা বক্তব্য ছাড়া আর কিছু নয়। এ সমস্ত কথার পিছনে তাহজুৰ-তামাদ্দুন, সভ্যতাউন্নতি অর্জন আদৌ তাদের উদ্দেশ্য নয়। ঢাক-ঢোল পিটিয়ে মুসলিম সমাজকে তারা বোকা বানাচ্ছে ।
তারা যে মিথুক তার আরেকটি কারণ হল, যেই ইউরোপ-আমেরিকাকে তারা নিজেদের আদর্শ মনে করে এবং যাদেরকে তারা সভ্যতা, সংস্কৃতি ও উন্নতির পথ প্রদর্শক মনে করে মূলত তারা প্রকৃত সত্যকে উপলব্ধি করতে পারে নি। তারা যেটিকে সভ্যতা ও সংস্কৃতি মনে করে মূলত সেটি সভ্যতা ও সংস্কৃতি নয় । তাদের ভাষায় সত্য তা নয়, যা মিথ্যার বিরদ্ধাচারণ করে। বরং সত্য, সভ্যতা হচ্ছে তা যা প্যারিস, লন্ডন, নিউইয়র্ক থেকে এসেছে। তাদের ধারণায় নাচ, গান, বেহায়াপনা, উলঙ্গ, অর্ধ উলঙ্গ হওয়া, স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে সহশিক্ষায় অংশ নেওয়া, নারীদের খেলার মাঠে নাম এবং সমুদ্র সৈকতে গিয়ে বস্ত্রহীন হয়ে গোসল করাই সভ্যতা ও সংস্কৃতির মানদণ্ড।
আর প্রাচ্যের দেশ তথা মুসলিমদের মসজিদ, মাদরাসা, মদীনা, দামেস্ক এবং আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল ইসলামী প্রতিষ্ঠানে যে উন্নত চরিত্র, সুশিক্ষা, নারী-পুরুষের বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীন পবিত্রতার প্রশিক্ষণ দেয়া হয় তাদের ধারণায় তা মুসলিমদের পশ্চাদমুখী হওয়ার এবং সভ্যতা ও সংস্কৃতির দিক থেকে পিছিয়ে থাকার অন্যতম কারণ।
বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও ইউরোপ-আমেরিকা থেকে ঘুরে আসা বন্ধুদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি যে, সেখানে বসবাসকারী অনেক পরিবার নারীপুরুষের খোলামেলা চলাফেরাতে সন্তুষ্ট নয় এবং এটি তাদেরকে শান্তি দিতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই আজ তারা বিকল্পের সন্ধান করছে।
ইউরোপ-আমেরিকায় এমন অসংখ্য পিতা-মাতা আছে, যারা তাদের যুবতী মেয়েদেরকে যুবক পুরুষদের সাথে চলাফেরা করতে ও মিশতে দেয় না। তারা তাদের সন্তানদেরকে সিনেমায় যেতে দেয় না। শুধু তাই নয়, তারা তাদের ঘরে অশ্লীলতা ও বেহায়াপনামুক্ত চ্যানেল ব্যতীত অন্য কিছু ঢুকায় না। অথচ পরিতাপের বিষয় হচ্ছে আজ অধিকাংশ মুসলিম দেশের মুসলিমদের ঘর এগুলো থেকে মুক্ত নয়।
এক শ্রেণীর বুদ্ধিজীবীর কথা হচ্ছে, সহশিক্ষা প্রবল যৌন আকাঙ্খা কে দমন করে। চরিত্র সংশোধন করে এবং দেহ থেকে বাড়তি যৌন চাহিদাকে দূর করে দেয়। আমি তাদের জবাবে বলতে চাই যে, আপনারা কি রাশিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখেন না? যেই রাশিয়া কোন ধর্মে বিশ্বাস করে না, কোন পাত্রীর উপদেশে কর্ণপাত করে না, তারা কি সহশিক্ষা ও নারী পুরুষের সহ অবস্থানের খারাপ পরিণামের শিকার হয়ে তা থেকে ফেরত আসার ঘোষণা দেয় নি?
আমেরিকা প্রসঙ্গে আসি। পত্র-পত্রিকার রিপোর্ট প্রকাশ হচ্ছে যে, অবিবাহিত ছাত্রীদের মধ্যে গর্ভবতীর সংখ্যা সেখানে দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে । এটি তাদের অন্যতম একটি বিরাট সমস্যা । আপনারা কি মুসলিম দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও এমন সমস্যা দেখতে চান?
বরতমান সময়ে আমেরিকা এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য যৌন শিক্ষা নামক একটি বিষয় সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করে তা ছাত্র-ছাত্রীদেরকে পাঠদান করছে। আমি মনে করি এর মাধ্যমে তারা আগুনের মধ্যে পেট্রোল ঢালছে। অল্প বয়স্ক নির্দোষ বালিকার মধ্যে লুকায়িত যৌন স্পৃহাকেই তারা জাগিয়ে তুলছে। স্কুল পর্যায়ের ছাত্রীদেরকে তারা কনডম ব্যাবহারের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে এবং একজন পুরুষ একজন মহিলার শাথে কি করে তারা উথতি বয়সের বালিকাদের তাও শিক্ষা দিচ্ছে। আমাদের মধ্যে বসবাসকারী এক ধরণের মানুষ নামধারী শয়তান আমাদেরকেও তাদের কর্মকাণ্ড অনুসরণ করার সবক দিচ্ছে।


উপদেশ নং-১৭
হে আমার মেয়ে! আমি যুবকদের সম্বোধন করছি না। এও আশা করছি না যে, যুবকরা আমার কথা অবনত মস্তকে মেনে নিবে। আমি জানি তারা আমার কথা প্রত্যাখ্যান করবে এবং আমাকে বোকা বলবে । কারণ, তারা মনে করবে যে, আমি তাদেরকে যৌবনের স্বাদ উপভোগ করতে বাঁধা দিচ্ছি এবং তাদেরকে ভোগের সমুদ্রে সাঁতার কাটতে মানা করছি ।
তাই আমি তোমাদের সম্বোধন করছি হে আমার মেয়েরা। হে আমার ভালো, সতী মুসলিম মেয়েরা। কেননা, তোমরাই হায়েনার ছোবলে পড়। তোমাদের ইজ্জত সম্মান মাটিতে মিশে যায় । সুতরাং সতর্ক থাক । ইবলিসী ফাঁদে পড়ে নিজের জীবন ধবংস কর না । তোমরা তাদের কথায় কৰ্ণপাত করো না। কারণ, এ সমস্ত শয়তানদের অধিকাংশের স্ত্রী-সন্তান ও পরিবার নেই । তারা কেবল তোমাদেরকে উপভোগ করতে চায় ।
কিন্তু আমি! আমি কয়েকজন মেয়ের গর্বিত পিতা । তাই মুসলিম মেয়েদের রক্ষা করার দায়িত্ব আমার নিজের মেয়েকে রক্ষা করার মত । আমার নিজের মেয়ের জন্য যে কল্যাণ চাই তোমাদের জন্যও সেই কল্যাণ চাই ।


উপদেশ নং-১৮
হে আমার মেয়ে! তুমি তোমার বোনদেরকে বল, আমি তোমাদেরকে যে উপদেশ দিচ্ছি, তার বিনিময়ে আমি কিছুই চাই না। শুধু তোমাদেরকে অধ:পতনের হাত থেকে রক্ষা করতে চাই, তোমাদের কল্যাণ চাই, পবিত্র জীবনের সন্ধান দিতে চাই ।


উপদেশ নং-১৯
হে আমার মেয়ে এদের কবলে পড়ে কোন নারী যদি তার অমূল্য সম্পদ হারায়, তার মর্যাদা নষ্ট হয় এবং সম্ভ্রম ও সতীত্ব চলে যায়, তাহলে তার হারানো সম্পদ দুনিয়ার কেউ পুনরায় ফেরত দিতে পারবে না। অথচ যত দিন সেই নারীর শরীরে যৌবন অবশিষ্ট ছিল ততদিন পাপীষ্টরা তার সৌন্দর্যের চারপাশে ঘুরঘুর করেছে এবং তার প্রশংসা করেছে। যৌবন চলে যাওয়ার সাথে সাথেই কুকুর যেমন মৃত জওর মাংশ ভক্ষণ করে হভিডগুলো ফেলে রেখে চলে যায়, ঠিক তেমনি তারা তাকে রেখে দূরে চলে যায়।


উপদেশ নং-২০
হে আমার মেয়ে। এই ছিল তোমার প্রতি আমার সংক্ষিত্ত উপদেশ । তোমাকে যা বললাম, তাই সত্য। এটি ছাড়া কেউ যদি তোমাকে অন্য কথা বলে, তুমি তা বিশ্বাস করো না । জেনে রেখো! তোমার হাতেই সংশোধনের চাবিকাঠি। আমাদের হাতে নয় । তুমি চাইলে নিজেকে, তোমার বোনদেরকে এবং সমগ্র জাতিকে সংশোধন করতে পার । তোমার প্রতি আল্লাহর পক্ষ থেকে শান্তি ও রহমত বর্ষিত হোক ।
– তোমার পিতা

আল আত তানতাবী



সমাপ্ত

Blogger দ্বারা পরিচালিত.