Header Ads

মুসলিম মহিলাদের জন্য

লেখক: মুফতী মনসূরুল হক দা.বা.   
মুসলিম মহিলাদের জন্য
১। হযরত আবূ হুরাইরা রাযি. বর্ণনা করেন: মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন: নারী যদি সময় মত পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করে, রমযান মাসে রোযা রাখে, সতীত্ব রক্ষা করে এবং স্বামীর আনুগত্য করে তাহলে (কিয়ামতের দিন) সে জান্নাতের (আট দরজার) যে কোন দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে। (সহীহ ইবনে হিব্বান- হাদীস নং ৪১৩৯)

২। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযি. বলেন, একবার মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম নারীদেরকে সম্বোধন করে ইরশাদ করেন, তোমরা বেশী বেশী দান খায়রাত করো। যদিও তোমাদের অলংকারাদি থেকে হয়। কারণ কিয়ামতের দিন জাহান্নামীদের মধ্যে নারীদের সংখ্যাই বেশী হবে। একথা শুনে জনৈকা মহিলা জিজ্ঞাসা করলেন, মহিলাদের সংখ্যা বেশী হওয়ার কারণ কীঃ জবাবে মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, কারণ (কথায় কথায়) তোমরা অভিশাপ দাও এবং স্বামীর অবাধ্য হও। (মুসনাদে আহমদ হাঃ নং ৪০৩৬)
৩। হযরত আয়েশা রাযি. থেকে বর্ণিত, একবার তিনি মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা কররেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা জানি জিহাদ সর্ব শ্রেষ্ঠ আমল, তবুও কেন আমাদেরকে জিহাদে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয় না?
জবাবে মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমাদের জন্য তার চেয়েও উত্তম জিহাদ হল মাকবূল হজ্জ। (অর্থাৎ, যে হজ্জ্ব সব ধরনের ত্রুটি বিচ্যুতি ও গুনাহ থেকে মুক্ত।) (বুখারী শরীফ হাঃ নং ২৭৪৩)
৪। হুমাইজা বিনতে ইয়াছির রাযি. তাঁর দাদী থেকে বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে বলেছেন, তোমরা এই তাসবীহ গুলো বেশী বেশী পড়া  سُبْحانَ المَلِكِ القُدُّوسِسُبْحَانَ اللهِ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ (মিরকাত ৫/২২৬)
এবং তা আঙ্গুলে গণনা করে পড়, কেননা কিয়ামতের দিন এগুলো জিজ্ঞাসিত হবে। আর আল্লাহর যিকির থেকে কখনো গাফেল থাকবে না, অন্যথায় তাঁর রহমত থেকে বঞ্চিত হবে। (আবু দাউদ হাঃ নং ১৫০১, তিরমিযী হাঃ নং ৩৫৮৩)
৫। হযরত আবূ হুরাইরা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এক মহিলা সম্পর্কে বলা হল, অমুক মহিলা দিনে রোযা রাখে আর সারা রাত ইবাদত-বন্দেগী করে, কিন্তু সে কটূ কথা বলে প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়। মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, কোন লাভ নেই, সে জাহান্নামে যাবে। আর এক মহিলা সম্পর্কে বলা হল যে, সে পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ে রমযান মাসে রোযা রাখে, এবং সে যথাসাধ্য দান-সদকা করে, কিন্তু কাউকে কষ্ট দেয় না, মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, সে জান্নাতে যাবে। (মুসতাদরাকে হাকেম হাঃ নং ৭৩০২)
৬। হযরত ইবনে আব্বাস রাযি. বলেন, একবার মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম জনৈকা আনসারী মহিলাকে জিজ্ঞাসা করলেন, কি ব্যাপার? তুমি আমাদের সাথে হজ্বে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছ না কেন? জবাবে মহিলা বললেন, আমাদের মাত্র দুটি উট, তন্মধ্য থেকে একটি আমার স্বামী ও তার ছেলে হজ্জ করার জন্য নিয়ে গেছে। আর অপরটি দিয়ে আমাদের ক্ষেতে পানি সিঞ্চন করি। মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে সাত্ত্বনা দিয়ে বললেন, আগামী রমযান মাসে উমরা করে নিও। কেননা রমযান মাসে উমরার সওয়াব হজ্জের সমতুল্য। অন্য রিওয়ায়েতে আছে আমার সাথে হজ্জ করার সমতুল্য। (বুখারী শরীফ হাঃ নং ১৭৮২)
৭। উম্মে সালামাহ রাযি. বলেন নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কোন (মুমিনা) নারী স্বামীকে সন্তুষ্ট রেখে মৃত্যুবরণ করলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (তিরমীযী শরীফ হাঃ নং ১১৬১)
৮। হযরত হুসাইন ইবনে মিহসান রাযি. থেকে বর্ণিত, একবার তার ফুফু কোন এক প্রয়োজনে মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম দরবারে আসেন। প্রয়োজন পূরণ হলে মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে সম্বোধন করে বললেন, তোমার স্বামী কি জীবিত আছে? জবাবে তিনি বললেন, হ্যাঁ। পূনরায় মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, তার সাথে কেমন ব্যবহার কর? জবাবে তিনি বলরেন, সাধ্যানুযায়ী তাঁর খেদমত করে থাকি। অতঃপর মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে (সাবধান করে) বললেন, ভাল করে চিন্তা কর, তুমি তার কতটুকু খেদমত করে যাচ্ছ। কেননা সেই তোমার জান্নাত, আবার সেই তোমার জাহান্নাম। (অর্থাৎ তাকে সন্তুষ্ট রাখতে পারলে জান্নাত লাভ করবে, অন্যথায় জাহান্নাম)। (মুসনাদে আহমদ হাঃ নং ১৯০২৭)
৯। হযরত ইবনে আবী আউফ রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত মু‘আয ইবনে জাবাল রাযি. একবার শাম থেকে আসার পর মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে মাথা নত করে সম্মান প্রদর্শন করলেন, মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, মু‘আয! তুমি একি করছ? জবাবে মু‘আয রাযি. বললেন, আমি শাম থেকে এসেছি, সেখানের অধিবাসীরা তাদের সেনাপতি ও ধর্মযাজকদেরকে এভাবে সম্মান প্রদর্শন করে থাকে। তাই আমিও আপনাকে সেভাবে সম্মান প্রদর্শন করলাম। মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে এরকম কাজ করতে নিষেধ করে বললেন, আমি যদি কাউকে সিজদা করার আদেশ দিতাম, তাহলে শুধু নারী জাতিকেই আদেশ দিতাম যে, তোমরা তোমাদের স্বামীদেরকে সম্মান করার লক্ষ্যে সিজদা কর। ঐ সত্তার কসম যার কুদরতী হাতে আমার প্রাণ, কোনো নারী তাঁর প্রতিপালকের হক্ব আদায় করতে পারবে না যতক্ষণ না সে তার স্বামীর হক্ব পরিপূর্ণভাবে আদায় করবে। (স্ত্রীর উপর স্বামীর হক্ব এত বেশী যে) সফরের প্রাক্কালে সওয়ারীর পিঠে থাকা অবস্থায়ও যদি স্বামী স্ত্রীকে আহ্বান করে তাহলেও সে নিষেধ করতে পারবে না। (সহীহ ইবনে হিব্বান হাঃ নং ৪১৭১)
১০। হযরত আবূ হুরাইরা রাযি. বলেন, মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ তা‘আলা ঐ মহিলার উপর রহম করুন, যে মহিলা শেষ রাতে উঠে তাহাজ্জুদ নামায আদায় করে। এবং স্বামীকেও (তাহাজ্জুদের জন্য) জাগিয়ে দেয়। (স্বামী) ঘুম থেকে উঠতে না চাইলে মুখে পানি ছিটিয়ে দিয়ে হলেও উঠানোর চেষ্টা করে। অন্য হাদীসে উক্ত গুণ সম্পন্ন স্বামীর জন্যও মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম দু’আ করেছেন। (মুসনাদে আহমদ হাঃ নং ৭৪১০)
১১। হযরত আবূ হুমাইদ আস সায়েদী রাযি.-এর স্ত্রী উম্মে হুমাইদ একবার নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনার সাথে জামা‘আতে নামায পড়তে আমার ভাল লাগে। এ কথা শুনে মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তা আমি জানি। তবে শোন, তোমার জন্য তোমার ঘরের অভ্যন্তরে নামায পড়া বারান্দার কামরায় নামায পড়ার চেয়ে উত্তম। আবার বারান্দার কামরায় নামায পড়া তোমার জন্য তোমার ঘরের আঙ্গিনায় নামায পড়ার চেয়ে উত্তম। এবং তোমার ঘরের আঙ্গিনায় নামায পড়া তোমার জন্য তোমার মহল্লার মসজিদে নামায পড়ার চেয়ে উত্তম, একইভাবে তোমার মহল্লার মসজিদে নামায পড়া তোমার জন্য আমার মসজিদে এসে আমার সাথে নামায পড়ার চেয়ে উত্তম।
হাদীসের বর্ণনাকারী বলেন, একথা শোনার পর তিনি পরিবারের লোকদেরকে ঘরের ভিতরে নামাযের স্থান বানাতে বলেন। তাঁর নির্দেশ অনুযায়ী তা নির্মাণ করা হল। এরপর তিনি মৃত্যু পর্যন্ত এখানেই নামায পড়তে থাকেন। (সহীহ ইবনে হিব্বান হাঃ নং ২২১৭)
১২। হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাযি. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইন্তিকালের পর মহিলাদের মধ্যে যে ধরনের পরিবর্তন এসেছে সেটা যদি তিনি দেখতেন তাহলে নিঃসন্দেহে তিনি তাদেরকে মসজিদে আসা থেকে নিষেধ করতেন। যেভাবে নিষেধ করা হয়েছিল বনী ইসরাঈলের মহিলাদেরকে। (বুখারী শরীফ হাদীস নং ৮৬৯)
১৩। হযরত আয়েশা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কোন নারী যখন পারিবারিক তহবিল থেকে স্বামীর অনুমতিক্রমে সংসারের ক্ষতি না করে দান করে তখন এই খরচ করার কারণে তার আমল নামায় সওয়াব লেখা হয়। আর স্বামীর আমল নামায়ও সওয়াব লেখা হয় তার উপার্জনের কারণে। এবং কোষাধ্যক্ষের আমল নামায়ও লেখা হয়। (কারণ সে ক্যাশ সংরক্ষণ করে)। তবে কারো সওয়াব থেকে সামান্যতমও কমনো হবে না। (বুখারী শরীফ হাঃ নং ২০৬৫)


১৪। হযরত আবূ হুরাইয়া রাযি. বর্ণনা করেন, মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কোন মুসলমান রোগ ব্যধিতে আক্রান্ত হলে, বা দুর্দশা ও বিপদগ্রস্ত হলে অথবা দুশ্চিন্তা বা পেরেশানীতে পড়লে, এমনকি শরীরের কোথাও কাঁটা বিঁধলে এর দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা তাঁর (সগীরা) গোনাহ মাফ করে দেন। (বুখারী শরীফ হাঃ নং ৬৫৪১)


মুসলিম বোনেরা! উপরোক্ত হাদীসগুলো গভীরভাবে পড়ুন। এবং উপদেশ গ্রহণ করুন। আর ক্ষণস্থায়ী জীবনের বিভিন্ন ধরনের ক্লেশ-যাতনা যেমন : গর্ভধারণ, সন্তান প্রসব, বাচ্চাদের দুধ পান করানো ও লালন পালন করা, হায়েয নেফাস ইত্যাদি কষ্ট-ক্লেশের সম্মুখীন হয়ে পেরেশান হবেন না। এ সব কিছুই আপনার নেক আমলনামা ভারী করবে। সগীরা গুনাহসমূহের কাফফারা হবে। সর্বোপরি জান্নাতে আপনার দরজা বুলন্দ করবে। তাই সাধ্যমত স্বামীর সেবা যত্ন করন এবং নিজের অন্দরমহলে নামায আদায় করুন। কারণ ফিকাহবিদগণ বিভিন্ন হাদীসের আলোকে মহিলাদের মসজিদে গমণকে কাজ সাব্যস্ত করেছেন।(দুররে মুখতার ১ : ৮৩, ফাতাওয়া আলমগীরী ১ : ৮৯)
Blogger দ্বারা পরিচালিত.