আরো কতিপয় ভ্রান্ত আক্বীদা
ভ্রান্ত আক্বীদা-২৯:
নব্য শিক্ষিতদের অনেকে ডারউইনের মতবাদ ‘বানর থেকে পর্যায়ক্রমে মানুষ সৃষ্টি হয়েছে’- একথা বিশ্বাস করে। অনেকে কতক বিজ্ঞানীর অভিমত হিসেবে বিশ্বাস করে যে, সূর্য তার স্থানেই স্থির অবস্থান করছে। সূর্য ঘুরছে না। আবার অনেকে সুদ-ভিত্তিক অর্থনীতির মধ্যে কোন প্রকার ক্ষতি বা আল্লাহর নাফরমানীর কথা মেনে নিতে চায় না। কেউবা জন্মনিয়ন্ত্রণের মধ্যে সুখ-শান্তি রয়েছে বলে বিশ্বাস করে। অনেকে ইংরেজদের তৈরী পাঠ্যসূচীতে শিক্ষা গ্রহণ করার কারণে অনেক ধরণের পশ্চিমা দর্শন ও ফিলোসফিকে [যা সম্পূর্ণভাবে কুরআন-সুন্নাহবিরোধী] মনে-প্রাণে বিশ্বাস করে। এমনকি তাদের ইসলামের বন্ধন অতিদূর্বল ও ক্ষীণ হাওয়ায় তারা এগুলোকে ইসলামের ওপর প্রাধান্য দিয়ে থাকে।
তাদের এসব বিশ্বাস সর্বস্বই মারাত্মক ভুল। এসব ভুলের দরুন তারা পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে অনেক আয়াত ও হাদীসকেই অস্বীকার করে নিজের দ্বীন ও ঈমানকে নষ্ট করে ফেলেছে। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেছেন-
يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ مِنْ نَفْسٍ وَاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالًا كَثِيرًا وَنِسَاءً
হে মানব সমাজ! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় করো, যিনি এক ব্যক্তি থেকে তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তার থেকে তার সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন। আর বিস্তার করেছেন তাদের দুজন থেকে অগণিত পুরুষ ও নারী। [সূত্র: সূরা নিসা, আয়াত-১।]
এছাড়া বিভিন্ন আয়াতে মানবজাতিকে – يا بَنِيْ اَدَمَ ‘হে আদমের সন্তান!’ বলে সম্বোধন করা হয়েছে।
পাঠক!চিন্তা করুন, আল্লাহপাক ঘোষণা করেছেন যে, আমি একজোড়া নর-নারী থেকে সমগ্র মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছি এবং সেই নর হচ্ছেন হযরত আদম আ. ও নারী হচ্ছেন হযরত হাওয়া আ.। আর দুনিয়ার সমস্ত মানুষ হচ্ছে নবীর আওলাদ। এখন কোন অমুসলিম যদি বানর থেকে মানুষ তৈরির দাবী করে, তাহলে আমাদের বলার কি আছে? আমরা [মুসলমানগণ] এতটুকুই শুধু বলব যে, বংশতালিকা বা বংশপরম্পরা বর্ণনা করার অধিকার প্রত্যেকেরই আছে। আজ হয়তো কেউ তার বংশপরম্পরা বানর থেকে বর্ণনা করছে, আগামীকাল কেউ তার বংশপরম্পরা শুকর থেকে বর্ণনা করবে। আমরা মুসলমান জাতি। আমাদেরও বংশপরম্পরা বর্ণনা করার অধিকার আছে। সেই হিসেবে আমরা বলব যে, আল্লাহ তা‘আলা ঈমানের দৌলতে আমাদেরকে হেফাযত করেছেন। তিনি আমাদেরকে কোন জানোয়ারের বাচ্চা না বানিয়ে তাঁর প্রিয়নবী হযরত আদম আ. এর সন্তান বানিয়েছেন।
সারকথা, যারা ডারউইনের মতবাদ বিশ্বাস করে, তারা কুরআনের এ সমস্ত আয়াত বিশ্বাস করে না। তেমনিভাবে যারা বিজ্ঞানীদের এ দর্শন ‘সূর্য ঘুরে না, বরং নিজের স্থানে স্থির রয়েছে’ বিশ্বাস করে, তারা সূরা ইয়াসীনের ৩৮ নং আয়াত। وَالشَّمْسُ تَجْرِي لِمُسْتَقَرٍّ لَهَا
অর্থাৎ: “ সূর্য তার নির্দিষ্ট অবস্থানে আবর্তন করে, বিশ্বাস করে না। যারা সুদ-ভিত্তিক অর্থনীতির মধ্যে উন্নতির বিশ্বাস রাখে, তারা সূরা বাকারার ২৭৬ নং আয়াত।
يَمْحَقُ اللَّهُ الرِّبَا وَيُرْبِي الصَّدَقَاتِ
অর্থাৎ: “ আল্লাহ তা‘আলা সুদকে নিশ্চিহ্ন করনে এবং দান-খয়রাতকে বর্ধিত করেন” বিশ্বাস করে না। অথচ স্মরণ রাখা উচিৎ যে, কুরআনের কোন একটি আয়াত অবিশ্বাস করলে ঈমান চলে যায়। এখানে শুধু নমুনা হিসাবে ২/৪ টা বিষয়ের উপর আলোচনা করা হলো। স্কুল-কলেজের পাঠ্য-পুস্তকে এ ধরণের অনেক বিষয় আছে, যা সরাসরি কুরআনের সাথে সংঘর্ষপূর্ণ। সুতরাং সংশ্লিষ্ট লোকদের কর্তব্য হচ্ছে, এসব পশ্চিমা দর্শন বিশ্বাস না করা এবং এতে প্রভাবান্বিত না হয়ে হক্কানী উলামায়ে কিরাম থেকে ইসলামের দৃষ্টিতে এতদসম্পর্কিত বিধান জেনে ঐ সকল ভ্রান্ত আকীদার প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের ব্যবস্থা করে কলিজার টুকরো সন্তানদের দ্বীন-ঈমানের হেফাযত করা। দ্বীনদার শিক্ষকগণ এ ব্যাপারে যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে পারেন।
ভ্রান্ত আক্বীদা-৩০:
নব্য শিক্ষিতদের অনেকে বিশ্বাস করে যে, পরকালের মুক্তি কেবলমাত্র ইসলামের ওপরই নির্ভরশীল নয়; বরং যে কোন ধর্ম অবলম্বন করে সেই ধর্মমতে চললে সে ব্যক্তি পরকালে নাজাত পাবে! চাই সে খৃষ্টান ধর্মের অনুসারী হোক বা ইহুদী ধর্মের অনুসারী হোক, কিংবা হিন্দু ধর্মের অনুসারী হোক অথবা ইসলাম ধর্মের অনুসারী হোক। আবার অনেকে বলে, মানব সেবাই আসল ধর্ম অন্য কোন ধর্ম জরুরী নয়।
এসবই পবিত্র কুরআনের ঘোষণার পরিপন্থী ও গর্হিত আক্বীদা। কুরআনে কারীমে আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেছেন- “নিশ্চয়ই আল্লাহর দরবারে মনোনীত দ্বীন একমাত্র ইসলাম।” [সূত্র: সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১৯।]
অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে, “যে ব্যক্তি ইসলাম ব্যতীত অন্য ধর্ম গ্রহণ করবে, আল্লাহর দরবারে তা কখনো গ্রহণযোগ্য হবে না।” [সূত্র: সূরা আলে ইমরান, আয়াত ৮৫।]
সুতরাং, উল্লেখিত আক্বীদা কুরআনের পরিপন্থী হওয়ার কারণে তা কুফরী আক্বীদা। এ আক্বীদা নিয়ে যদি কেউ সারা জীবন প্রথম কাতারে নামায পড়ে এবং কোটি কোটি টাকা দান-খয়রাত করে, মানব সেবা করে বা বহুবার হজ্ব-উমরা আদায় করে, তারপরও সবই নিষ্ফল-বেকার গণ্য হবে। ঈমান না থাকার দরুন এসব আমলের কোন বিনিময় সে আল্লাহর দরবারে পাবে না।
ভ্রান্ত আক্বীদা-৩১:
অধুনা অনেক লোক টুপি, দাড়ি, মিসওয়াক, আলেম-ওলামা, মসজিদ-মাদরাসাকে তুচ্ছ জ্ঞান করে। এগুলোকে খুবই হেয় নজরে দেখে এবং এগুলোকে অনর্থক ও বেকার বলে মনে করে। তারা এগুলো নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ ও ব্যঙ্গ করতেও দ্বিধাবোধ করে না।
তাদের এ ভূমিকা খুবই মারাত্মক। এ সবই মুরতাদদের কাজ। শরী‘আতের কোন বিষয় নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করলে ঈমান নষ্ট হয়ে যায়-যদিও তা সামান্য কোন আমলই হোক না কেন। যেমন ধরুন, টুপি পরা সুন্নাত, ফরয নয়। কিন্তু কেউ যদি এই সুন্নাত নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করে, তাহলে সে ঈমানহারা হয়ে মুরতাদ হয়ে যাবে। অতএব, এ ব্যাপারে সকলকে সাবধান থাকতে হবে। [সূত্র : শরহে আক্বায়িদ, পৃষ্ঠা ১৬৭]
ভ্রান্ত আক্বীদা- ৩২:
অনেক নব্য শিক্ষিত মুসলমান এমন রয়েছে, যারা পাশ্চাত্যের ষড়যন্ত্রে প্রভাবিত হয়ে প্রচার করে থাকে যে, মুসলমানদের মুক্তির এখন একমাত্র পথ গণতন্ত্র, অথবা সমাজতন্ত্র, কিংবা অন্য কোন তন্ত্র-মন্ত্র। বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষের এ যুগে ইসলামের মতো সেকেলে মতবাদ দিয়ে উন্নতি ও অগ্রগতি সম্ভব নয়। তারা আরো বলে থাকে, আলিম সমাজই প্রগতির চাকাকে পিছনের দিকে টেনে রেখেছে। তারাই প্রগতির পথে প্রধান অন্তরায়।
তাদের এই আক্বীদা ও বিশ্বাস স্পষ্ট কুফরী আক্বীদা। [সূত্র : সূরা আনআম, আয়াত ১১৬।] কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নবুওয়াত প্রাপ্তির পর থেকে কিয়ামত পর্যন্ত সকল মানুষের কামিয়াবী ও উন্নতির একমাত্র রাস্তা হচ্ছে ইসলাম। এটাই নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর তরিকা। সেটাকে সেকেলে বলে প্রত্যাখ্যান করা, উলামায়ে কিরামকে হেয় মনে করা এবং গণতন্ত্র-সমাজতন্ত্রের মতো কুফরী মতবাদকে মনে-প্রাণে গ্রহণ করত: তা কায়িমের লক্ষ্যে প্রচার-প্রসার করা স্পষ্ট কুফরী কাজ। এতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। কুরআন ও সুন্নাহর দৃষ্টিতে, উপরোক্ত মতবাদসমূহ জনগণ শোষণের হাতিয়ার। তারা হালাল-হারামের প্রতি কোনরূপ ভ্রূক্ষেপ না করে সুদ -ঘুষ ও নানা প্রকার অবৈধ পন্থায় যে উন্নতি করছে, এটাকে প্রকৃত পক্ষে কোন উন্নতি বলা যায় না। এসব মতবাদ গ্রহণ করা আল্লাহর সাথে যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার নামান্তর।
আধুনিক যুগের শিক্ষিতরা সভ্যতা, ভদ্রতা ও উন্নতি-প্রগতি বলতে ইংল্যান্ড-আমেরিকা, চীন-জাপানের তথা কথিত সভ্যতা ও উন্নতি-প্রগতি বুঝিয়ে থাকে। অথচ আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দৃষ্টিতে বেদ্বীনদের ঐ ধরনের সভ্যতা চরম বেহায়াপনা ও নোংরামী, যা জানোয়ার ছাড়া কোন মানুষ থেকে কল্পনা করা যায় না। সুতরাং, মানুষ নামের পশুরা এটাকে উন্নতি বললেও আল্লাহ, রাসূল ও মুসলমানদের দৃষ্টিতে এটা ধ্বংসের রাস্তা। যা কিছুদিন পরে তারাও মানতে বাধ্য হবে। রোম ও পারস্যের অস্তিত্ব বহু পূর্বে শেষ হয়েছে। রুশ-ব্রিটিশের আগ্রাসী থাবা কিছুদিন পূর্বে যেভাবে শেষ হয়েছে, তেমনিভাবে অবশিষ্ট মোড়লদের ঔদ্ধত্য ও দৌরাত্ম ও অদূর ভবিষ্যতে অবশ্যই ইনশাআল্লাহ শেষ হয়ে যাবে। তখন জ্ঞানপাপীদের চক্ষু উন্মোচিত হবে।
ভ্রান্ত আক্বীদা-৩৩:
বর্তমানে মুসলমানদের ধর্মীয় দুর্বলতার সুযোগে অনেক খাজাবাবা ও ভাণ্ডারী দরবার শরীফ-এর ছড়াছড়ি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অনেক সরলপ্রাণ মুসলমান হক্কানী উলামায়ে কিরাম থেকে জিজ্ঞেস না করে দুনিয়ার সকল সুযোগ-সুবিধা ঠিক রেখে অতি সহজে বেহেশত লাভের আশায় তাদের দরবারে ধর্ণা দেয় এবং শেষ পর্যন্ত ঐসব দুনিয়াদার, ভণ্ড, খাজা বাবাদের খপ্পরে পড়ে নিজের যতটুকু দ্বীনদারী ও ঈমান-আক্বীদা ছিল, তাও বিসর্জন দিয়ে দেয়। ঐসব বাবাদের অনেকে নামায-রোযার কোন ধার ধারে না। [তাদের ভাষায়] তাদের নাকি বাতেনীভাবে ঐসব ইবাদত-বন্দেগী আদায় হয়ে যায়। তাদের দরবারে শিরক-বিদআত ও গান-বাদ্য,বেপর্দা, মদ-গাঁজা ইত্যাদি চলতে থাকে। তারপরও নাকি তারা আল্লাহর বিশিষ্ট ওলী এবং অনেক অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী!
এ ধরণের বিশ্বাস ও কুফরী আক্বীদা। কারণ, শরী‘আতের বিধান এই যে, আল্লাহ তা‘আলার হুকুমকে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নাত অনুযায়ী পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়নকারী ব্যক্তিই একমাত্র আল্লাহর ওলী হতে পারেন। [সূত্র: সূরা ইউনুস, আয়াত ৬২।]
যে ব্যক্তি ইবাদত-বন্দেগীর ধার ধারে না, শিরক-বিদ‘আত ও বিভিন্ন হারাম কাজের মধ্যে মশগুল থাকে, সে কখনো আল্লাহর ওলী হতে পারে না।
চাই সে যত বড় অলৌকিক ঘটনা দেখাক না কেন, বা সে বাতাসে উড়তে সক্ষম হোক না কেন! এসব জিনিস আল্লাহর ওলী হওয়ার কোন দলিল নয়। কিয়ামতের পূর্বে যে ‘কানা দাজ্জাল’ আসবে সেও অনেক আশ্চর্যজনক ঘটনা মানুষদেরকে দেখাবে। অথচ সে আল্লাহর দুশমন। [সূত্র: তিরমিযী, খণ্ড-২ পৃষ্ঠা -৪৮। মিশকাত শরীফ, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা ৪৭৩।]
এ কথা ঠিক যে, সকলের নিজের আত্মার রোগসমূহের চিকিৎসার জন্যে প্রত্যেকেরই কোন হক্কানী বুযুর্গের সাহচর্য লাভ করা এবং আত্মার রোগের চিকিৎসা করা জরুরী। দিলের রোগের চিকিৎসা না করালে, এর একটা রোগের পরিণতিতে সমগ্র জীবনের ইবাদত-বন্দেগী বাতিল হয়ে যেতে পারে। যেমন, হাদীসে ইরশাদ হয়েছে, কিয়ামতের দিন ইখলাসের অভাবে, রিয়ার কারণে সর্বপ্রথম একজন শহীদ, একজন আলিম ও একজন দানশীলকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। সুতরাং, এ ব্যাপারে খুবই সর্তক দৃষ্টি রাখা জরুরী। কিন্তু বর্তমানে এ বিষয়টি সবচেয়ে বেশি অবহেলিত। দ্বীনদার লোক বলতে যাদেরকে বোঝায়, তাদের থেকেও এটা বিদায় নিয়ে এখন বিলুপ্তির পথে আছে। অথচ আল্লাহ তা‘আলা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যে তিনটি উদ্দেশ্যে বাস্তবায়নের জন্যে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, তা হচ্ছে-তাবলীগ, তা‘লীম ও তাযকিয়া। এর মধ্যে তাযকিয়া অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ। [সূত্র: সূরা বাকারাহ, আয়াত ১২৯, সূরা জুমুআ, আয়াত-২।] এর জন্যে হক্কানী বুযুর্গের সাহচর্য লাভ করে আত্মশুদ্ধি করাকে হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রহ. ফরযে আইন বলেছেন।[সূত্র: আল ইলমু ওয়াল উলামা, পৃষ্ঠা ১৮৭।]
হক্কানী বুযুর্গের আলামত হযরত থানভী রহ. ‘কসদুস সাবীল’ নামক কিতাবে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন। তন্মধ্যে হতে কয়েকটি নিম্নরূপ:
ক. যিনি মাদরাসায় পড়ে বা কোন হক্কানী বুযুর্গের সান্নিধ্যে থেকে দ্বীনের ওপর চলার জন্যে প্রয়োজনীয় ফরযে আইন পরিমাণ ইলম অর্জন করেছেন এবং তার প্রত্যেকটি কাজ শরী‘আত ও সুন্নাত মুতাবিক।
খ. যিনি কুফর, শিরক, বিদ‘আত, হারাম বা কোন গুনাহের কাজে লিপ্ত নন এবং তিনি অর্থলোভীও নন। যেমন, তিনি তার পায়ে মুরীদকে সিজদার অনুমতি দেন না, ওরস করেন না, গানবাদ্য শুনেন না, মদ-গাঁজা পান করেন না, দাড়ি মুণ্ডন করেন না বা এক মুষ্টির চেয়ে কম করেন না, মহিলাদেরকে বেপর্দা অবস্থায় মুরীদ করা, বেপর্দাভাবে ঝাড়ফুঁক দেয়া, তাদের সাথে কথা বলা ইত্যাদি থেকে সম্পূর্ণভাবে বেঁচে থাকেন। এক কথায় শরী‘আত ও সুন্নাতপরিপন্থী কোন কাজ তিনি করেন না এবং মুরীদদেরকেও করতে দেন না।
গ. সমকালীন যুগের হক্কানী উলামায়ে কিরাম তাকে হক্কানী পীর বলে সমর্থন করেন এবং তাকে শ্রদ্ধা করেন। নিজেরা তার নিকট যাতায়াত করেন এবং অন্যদেরকেও উৎসাহিত করেন ইত্যাদি।
ভণ্ড খাজাবাবাদের মাঝে এসবের কোন একটি আলামতও পাওয়া যায় না। তাহলে তারা কীভাবে আল্লাহর ওলী হতে পারে?
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islami_jindegi