সুন্দরী প্রতিযোগিতা’- নারীর সতীত্ব হরণের শৈল্পিক আয়োজন ...!!!
প্রিয় উপস্থিতি! আজকে সন্দরী প্রতিযোগিতা নিয়ে কিছু আলোচনা করবো।
এমনি এক ফেতনাময় সময়ে আমরা বসবাস করছি যখন ভালমন্দের সজ্ঞাই পাল্টে গেছে। স্বাভাবিকতা আর অস্বাভাবিকতার ধরনাই বদলে গেছে। সভ্যতার নামে মানুষ দিন দিন অসভ্য হয়ে পড়ছে। যে যত নগ্ন অশ্লীল ভাবভঙ্গি প্রকাশ করতে পারে তাকেই তত সভ্য আধুনিক ভাবা হচ্ছে। তারকা সেলিব্রেটি বলে আখ্যায়িত করা হচ্ছে।
অথচ ইউরোপীয় সাদা চামড়া ধারীরা যখন প্রথমবার আমেরিকায় পা রেখেছিল তখন তারা আমেরিকার আদিবাসীদের দেখে বর্বর অসভ্য বলেছিল। করান আমেরিকান আদিবাসী নারীরা তাদের দেহকে অনেকাংশেই উন্মুক্ত রাখতো। আর ইউরোপীয়ানরা তখন তিন চার স্তরের কাপড় দিয়ে শরীর ঢেকে রাখতো। তখন ইউরোপীয়রা কাপড় দিয়ে দেহ ঢাকাকেই সভ্যতা জানতো।
কিন্তু আজ হয়েছে ঠিক উল্টোটা। তারা আজ নগ্নতা আর অশ্লীলতাকে সভ্যতা বলছে। কে কত সল্প পোষাকে নিজেদেরকে প্রদর্শন করতে পারে এরই প্রতিযোগীতা চলছে। পুরো বিশ্বজুড়ে নব্য সভ্যতার দাবীদার অসভ্য মানুষগুলো নরীদেরকে ভোগ্য পন্যে পরিনত করেছে। আজ নারী দেহের দাম নির্ধারিত হচ্ছে খোলা বাজারে নিলাম হাকিয়ে! তবে আজকে এই অসভ্য সভ্যতার এই কাজটি করা হয় একটু ঘুরিয়ে ফিরিয়ে রং ঢং লাগিয়ে শৈল্পীক আকারে। নারীরাও তাই শুরুতে বুঝে উঠতে পারে না কিছু অর্জনের জন্য তারা প্রতিযোগিতায় নেমেছে, নাকি ভোগবাদীদের লাালসার স্বীকার হয়ে সম্ভ্রম হারানোর পথ ধরেছে।
বর্তমানে নারীদের স্বতীত্ব, সম্ভ্রম হারানোর এমনি এক অসভ্য আয়োজন হচ্ছে সুন্দরী প্রতিযোগিতা! মিস ওয়ার্ড, মিস ইউনিভার্স এমন হরেক নামে জাঁকজমক আয়োজন চলছে। দুঃখজনক হলেও সত্য এসব জঘন্য প্রতিযোগিতা আজ শুধু বেদ্বীনদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, মুসলিম দেশে দেশে মুসলিম নারীদের মধ্যেও তা মহামারি রুপে ছড়িয়ে পড়েছে।
প্রিয় শুধী! আমরা সবাই জানি পর্দা করা ফরজ। সুন্দরী প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করা তা দেখা এগুলো যে হারাম এটাও আমরা সবাই জানি। কিন্তু এসব ঘৃন্য আয়োজন বন্ধ করতে কয়জন প্রতিবাদ করি? ইসলামের গুনগত জ্ঞান থাকা যেকোন মানুষের কাছেই এসব প্রতিযোগিতার উদ্দেশ্য স্পষ্ট। শুধু তাই না, যেকোন মানুষ যার অন্তর কুলশিত হয়নি সে বুঝবে সুন্দরী প্রতিযোগিতার নামে এই নোংরা আয়োজন আসলে অধুনিক ও অভিনব পতিতাবৃত্তি ছাড়া আর কিছুই না।
ইতিহাসের প্রথম সুন্দরী প্রতিযোগিতাটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল খৃষ্টপূর্ব ষষ্ঠশতকে প্রচীন গ্রীসে। মার্কিনযুক্তরাষ
এভাবেই আজ বাংলাদেশ সহ মুসলিম বিশ্বে এই নোংরামি ছেয়ে গেছে। নারীবাদী স্লোগানের আড়লে নারীদেহের উন্মুক্ত প্রদর্শনী আজ সভ্যতা শিল্পে পরিনত হয়েছে। যেই মেয়েটি আজ নিজ দেহ উন্মুক্ত করে তৃপ্তির ঢেকুর তুলেছে। কিছু খেতাবে ভূষিত হয়ে নিজেকে দেশ জাতীর গর্ব মনে করছে। কিছু দিন পরে সেই বুঝতে পারে এই খেতাবের আসল রহস্য। তার কাছে স্পষ্ট হয়ে যায় এই প্রতিযোগিতার আড়ালেই রয়েছে হাজারো পুরুষের ললুপ দৃষ্টি, পুঁজিবাদেরর সকল প্রদর্শনী। কিন্তু তখন সে ইচ্ছে করলেও আর সহজে ফিরে আসতে পরে না। হীন খ্যাতি আর চমকপ্রদ ক্যারিয়ারের মোহে পুঁজিবাদের পন্য হিসাবেই নিজেকে বিক্রি করে দেয় সে।
আপনার মনে হয়ত প্রশ্ন জাগবে, এই প্রতিযোগীতা বা নারীদেহ কিভাবে পুঁজিবাদের জন্য পন্য হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে?
এই যে আপনি লাক্স সাবান কিনেন, লাক্স সাবান আপনাকে ফর্সা করে দিবে! কালো চামড়াকে সাদা চামড়াদের কাতারে নিয়ে যাবে! এর প্রমানই বা কি?
এর প্রমান হিসেবে আপনাকে দেখানো হচ্ছে বড় বড় নায়িকা, মডেলরা এই সাবানের বিজ্ঞাপন করে দেহ উন্মুক্ত করে বুঝায় "এই সাবান লাগাবে দেহে ফর্সা হবে আজকে"! তারা যে ক্রিম মাখে আপনিও তাই মাখেন। অন্ধের মত তাদের অনুসরণ করে চলেন! নারী দেহের মার্কেটিং রক্ষার জন্য দরকার হয় নতুন নতুন সেলিব্রেটি, আকর্শনীয় রুপে সুন্দরি! তাই পুঁজিবাদী ও ভোগবাদীরা এই ধরনের সুন্দরী প্রতিযোগিতার আযোজন করে চলেছে। যেখানে ঘুরে ফিরে সব পুরুষেরই মনরোঞ্জন। হায়রে নারী স্বাধীনতা! পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে জেগে উঠা!
বাস্তব ঘটনা থেকে জানা যায়, লাক্স চ্যানেল আই সুপার স্টার প্রতিযোগিতার জনৈক বিচারক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী এক সুন্দরী প্রতিযোগিকে উদ্দেশ্য করে বলেছিল, তোমার মধ্যে যৌনতার ভারী অভাব! আর মেয়েটি তাতে খুব মন খারাপ করলো। পরুষের সামনে নিজেকে আরো আকর্ষনীয় ভাবে উপস্থাপন করতে চায় সে। কারন হয়ত সে হেরে যাবে। এভাবেই কুমারী মেয়েদের তারা নগ্নতা শিখাচ্ছে। কৈ বিবাহিতা তো সুন্দরী প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে পারে না? তালাক প্রাপ্তারাও পারে না। কোন তারা কি সুন্দরী নয়?
আসলে এই কর্পোরেট জগতের কাছে দেহের লাস্যময়তা হলো, কুমারিত্ব। সুন্দরী, কুমারী নারীদেরকেই বেছে বেছে ভোগবাদী মোড়লদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। এটাকেই ওরা টাকার মেশিন বানিয়েছে, আয়ের মাধ্যম বানিয়েছে।
হে মুসলিম ভাই ও বোনেরা! এই অসভ্য ইতরেরা একদিকে এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নির্বোধ মেয়েদের বাজারের পন্য বানাচ্ছে। অন্যদিকে টেলিভিশনে সম্প্রচারের মাধ্যমে পরো দেশের যুবক শ্রেনীর সামনে এই অসভ্য বাজারকে উন্মুক্ত করে দেখাচ্ছে। তাদেরকে জেনা-ব্যভিচারের
জেনে রাখ হে বোন! তোমার এই দেহ, তোমার এই সৌন্দর্য মহান আল্লাহর দেয়া নেয়ামত। সঠিক ক্ষেত্র ছাড়া তা অন্য কোথাও প্রদর্শনের কোনই সুযোগ নেই। তুমি যদি সীমালঙ্ঘন কর তবে এর জবাব অবশ্যই আখেরাতে দিতে হবে। নিজ মালিকের সামনে সেদিন কোন অজুহাত কাজে আসবে না। যেই দেহ আল্লাহ্ পর্দা আবৃত করার আদেশ দিয়েছেন সেই দেহের অশ্লীল প্রদর্শনী মানবতার জন্য কত লজ্জাজনক তাও আবার সেই দেহ নিয়ে বানিজ্যে মেতে উঠা! এটা যে কত জঘন্য তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সুস্থ বিবেক সম্পন্ন মানুষ এটাকে স্বাভাবিকতা বলে মেনে নিতে পারে না।
হে কল্যাণ প্রত্যাশী নারীজাতী! মহান আল্লাহর এই আদেশকে ভাবভাবে অনুধাবন করঃ
সূরা আহযাবের ৩৩নং আয়াতে আল্লাহ্ তা'য়ালা আদেশ করছেন, "আর তোমরা নিজ গৃহে অবস্থান করবে এবং প্রাক জাহেলী যুগের মত সৌন্দর্য প্রদর্শন করো না। আর তোমরা সালাত কায়েম কর, যাকাত প্রদান কর এবং আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর। হে নবী পরিবারের মুসলিম রমনীগন, আল্লাহ্-তো কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতাকে দূরভিত করতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরুপে পবিত্র করতে।"
হে মুসলিম ভাই ও বোনেরা! আল্লাহকে ভয় কর! আল্লাহকে ভয় কর! এসো আজই আমরা এসব প্রতিযোগিতার আকর্ষনকে মন থেকে ঝেড়ে ফেলি। আল্লাহর নিকট খাঁটি তাওবা করে ইসলামের বিধি-বিধান মেনে চলি। সবধরনের অশ্লীলতার বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরী করি। যারা নগ্নতা অশ্লীলতা ছড়িয়ে দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হই। পর্দার গুরুত্ব মানুষের কাছে তুলে ধরি। মা বোনদের সচেতন করি। আমাদের মা বোনেরা অত্যান্ত সহজ সরল। না বুঝে এসব পাপাচারে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছে। তাদেরকে এসব আয়োজনের ভয়াবহতা সম্পর্কে বুঝাই। তাদেরকে এব্যাপারে আল্লাহর ভয় দেখাই।
যে সকল বাব মায়েরা নিজেদের সন্তানদেরকে এসব অশ্লীল আয়োজনে অংশগ্রহণ করতে উদ্ভুদ্ধ করছেন, আদরের কন্যা সন্তানটিকে এসকল পাপাচারে লিপ্ত হওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছেন, আমি তাদের লক্ষ করে বলছি। প্রিয় বাবা মায়েরা! আপনারা কি চান আপনার সন্তান জাহান্নামের ইন্ধন হোক? আপানার কি চান, আপনার আদরের মেয়েটি অনন্তকাল জাহান্নামের আগুনে দগ্ধ হোক? তাহলে কেন, তাহলে কেন তাদেরকে এই পাপাচারের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন? কেন তাদেরকে এই অশ্লীলতায় মেতে উঠার জন্য সুযোগ করে দিচ্ছেন? এখনো সুযোগ আছে আপনার আদরের কন্যা সন্তানটিকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করুন। আপনার চোখের সামনে সে যাতে জাহান্নামের আগুনে ঝাপ না দেয়।
পরিশেষে, আমার প্রিয় মুসলিম বোনদের লক্ষ করে বলছি, হে বোন! একটি বারের মত ভেবে দেখ, আজ যেই নারী স্বাধীনতার নামে নিজ দেহকে তুমি উন্মুক্ত করছো, এটা কার জন্য? এটা কি হাজারো পুরুষের মনোরঞ্জনের জন্য নয়? এটা কি লক্ষ পুরুষের লোলুপ চাহনি মেটানোর জন্য নয়?
হে মুসলিম বোনেরা! সুস্থ আকল দিয়ে চিন্তা কর। ইসলাম তোমাকে যেই সন্মান দিয়েছে, সেই সন্মানের জিবনকে ফেলে তুমি কোন দিকে ধাবিত হচ্ছো? আমাদের সকলের অধিকার, সকলের সন্মান আল্লাহ্ তা'য়ালার দেয়া শরীয়ত মানার মধ্যেই রয়েছে। কামিয়াবি সফলতা ইসলামের মধ্যেই রয়েছে। তাই ইসলামের আলোকিত পথেই নিজেদের জিবনকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলো।
আল্লাহ্ তা'য়ালা! আমাদের মুসলিম ভাই-বোনদেরকে সব ধরনের জাহেলিকতা থোকে বেঁচে থাকার তাওফীক দান করুন। আমীন।
-শায়েখ তামীম আল আদনানী হাফিঃ।
: