Header Ads

ইসলামের দৃষ্টিতে নারী নেতৃত্ব মহান স্রষ্টা এ বিশাল পৃথিবীকে সৃষ্টি করে তা সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রিত করার জন্য পুরুষের পাশাপাশি নারীজাতিকে সৃষ্টি করেছেন এবং প্রত্যেকের জন্য সুপরিকল্পিত ও সুসংহত কর্মসংস্থান ও দায়িত্বসমূহ নিরূপণ করে দিয়েছেন। এক্ষেত্রে কিছু কিছু কর্মক্ষেত্র এমন রয়েছে, যেগুলো নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য সমান, যেমন-শিক্ষাগ্রহণ- শিক্ষাদান দ্বীন প্রসারে দাওয়াত ও তাবলীগ ইত্যাদি। তবে তা অবশ্যই শরী‘আত অনুমোদিত পন্থায় হতে হবে। আবার কিছু কিছু কর্মক্ষেত্র এমন, যা কেবলমাত্র পুরুষদের জন্য নির্ধারিত। যেখানে মহিলারা অংশগ্রহণ করতে পারে না। যেমন-নামাযের ইমামতী। আবার কিছু কর্মক্ষেত্র এমন রয়েছে, যা শুধু নারীদের জন্য নির্ধারিত। যেখানে পুরুষদের অংশগ্রহণ সম্ভব নয়। যেমন-সন্তান ধারণ। জাতীয় নেতৃত্ব বা শাসন কার্য পরিচালনা এমন একটি কর্মক্ষেত্র, যা শরী‘আতে এককভাবে পুরুষের জন্যই নির্ধারিত। সেখানে নারীদের অংশগ্রহণ মোটেও ঠিক নয়। তদুপরি এমনটি করতে গেলে, তা একদিকে যেমন সমস্ত বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির দ্বার উন্মুক্ত করে, অপরদিকে তা চরম শরী‘আত গর্হিত বিষয়ও বটে। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন-পুরুষরা মহিলাদের কর্তা বা পরিচালক এ ভিত্তিতে যে, আল্লাহ তা‘আলা এককে (পুরুষ) অপরের (মহিলা) উপর শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান করেছেন। [সূত্র : ‍সূরা নিসা :৩৪] (১) পুরুষরা মহিলাদের শাসনকর্তা ও রক্ষক, কেননা-পুরুষদেরকে মহান আল্লাহ তা‘আলা মহিলাদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান করেছেন। (২) নারীরা নবী ও রাসূল হতে পারে না। (৩) নারীসমাজ কোন মুসলিম রাষ্ট্রের শাসক বা রাষ্ট্রপ্রধান হতে পারবে না। (৪) নারীরা কোন প্রকার নামাযে ইমাম হতে পারবে না। (যারা ক্ষুদ্র জামা‘আতের ইমামতি করতে পারে না, তারা বৃহৎ জামা‘আতের ইমামতি অর্থাৎ দেশ পরিচালনার দায়িত্ব কিভাবে পালন করতে পারে?) (৫) নারীদের আযান গ্রহণযোগ্য হবে না। (৬) কিসাস বা হত্যার দায়ে প্রাণদণ্ড কার্যকর করা সংক্রান্ত ব্যাপারে নারীদের সাক্ষীর উপর নির্ভর করা যাবে না। (৭) কারো প্রতি কোন দণ্ডাদেশ কার্যকর করার জন্য নারীর সাক্ষীর উপর নির্ভর করা যাবে না। (৮) সাধারণ অবস্থায় নারীদের উপর জিহাদ ফরজ নয়। (৯) অসামঞ্জস্যতা থাকলে, সেক্ষেত্রে নারীরা তাদের বিবাহ পূর্ণ করতে পারে না। বরং তা ওলীর অভিভাবকের অনুমোদনের উপর মওকুফ থাকে। (১০) তালাক বা বিবাহ বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে শুধু নারীর ইচ্ছা মোটেও কার্যকর নয়।[ [সূত্র: তাফসীর ইবনে কাসীর ১/৪৯১, তাফসীরে রুহুল মা‘আনী ৩/২৩, তাফসীরে কাবীর ১০/৮৮, তাফসীরে মাযহারী ২/৯৮] উল্লেখিত ব্যাখ্যায় যে সব কর্মক্ষেত্রে নারীদের কর্ম সম্পাদন কার্যকর নয় বলে তা থেকে তাদের বারণ করা হয়েছে, তার সবগুলোই মূলতঃ নেতৃত্ব সংক্রান্ত। তবে কোনটা প্রত্যক্ষ নেতৃত্বের প্রতি নিষেধাজ্ঞার প্রমাণ বহন করে, আবার কোনটা প্রমাণ বহন করে পরোক্ষ রূপের। পারস্য সম্রাট কিসরার পতনের পর তথায় একজন মহিলা রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচিত হওয়ার সংবাদ শুনে বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,- “ঐ জাতি কখনো কামিয়াব হবে না, যে জাতির পরিচালক মহিলা হবে”। [ সূত্র :বুখারী] অপর একটি বর্ণনায় রয়েছে- বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “পুরুষগণ যখন মহিলাদের নেতৃত্ব স্বীকার করবে, তখন তাদের ধ্বংস অনিবার্য”। [সূত্র: মুস্তাদরাকে হাকিম, ৪/২১৯] অন্য এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “যখন সৎ ও ন্যায়পরায়ণ লোক তোমাদের শাসক হবে এবং তোমাদের মধ্যকার সমর্থবান লোকেরা দানশীল হবে, আর তোমরা যখন তোমাদের জাতীয় কর্মকাণ্ড পরস্পর পরামর্শের ভিত্তিতে সমাধা করবে, এ পরিস্থিতিতে তোমাদের জীবন মৃত্যু অপেক্ষা উত্তম। পক্ষান্তরে যখন তোমাদের শাসক হবে জালিম, আর সম্পদশালী লোকেরা কৃপণতা করতে থাকবে এবং তোমাদের রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ড সম্পাদনের দায়িত্ব মহিলার হাতে অর্পণ করা হবে, মনে রেখো-এমতাবস্থায় তোমাদের জন্য ভূপৃষ্ঠ অপেক্ষা ভূগর্ভই হবে উত্তম। (অর্থাৎ এ অবস্থায় তোমাদের বেঁচে থাকার চেয়ে মৃত্যুবরণ করা উত্তম। তোমরা ঐ অবস্থা দূরীকরণের জন্য পূর্ণ প্রচেষ্টা চালিয়ে কামিয়াবী অর্জন কর, অথবা প্রচেষ্টা চালাতে মৃত্যুবরণ কর।) উল্লেখিত হাদীস সমূহ থেকে অতি সহজেই ইসলামের দৃষ্টিতে মহিলা নেতৃত্বের সঠিক অবস্থান নিরূপণ করা যায়। প্রথম হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-মহিলা নেতৃত্বকে দেশ ও জাতির উন্নতি, অগ্রগতি ও সফলতার পথে অন্তরায় হিসেবে বর্ণনা করেছেন। সুতরাং, বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উক্ত বক্তব্য থেকে এ কথা অত্যন্ত সুস্পষ্ট যে, মহিলা নেতৃত্বের অভিশাপ কোন জাতির স্কন্ধে চাপিয়ে দেয়া মানে তার নিশ্চিত ধ্বংস ডেকে আনা। অপর দুই হাদীসে মহিলা নেতৃত্ব গ্রহণ পুরুষ জাতির জন্য চরম লজ্জাকর ও অহিতকর বলে বর্ণনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে-মহিলাদের হাতে যখন জাতির রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব অর্পিত হয়, তখন ভাবতে হবে-তোমাদের জন্য ভূ-পৃষ্ঠ অপেক্ষা ভূগর্ভই উত্তম। অর্থাৎ এমতাবস্থায় জীবন যাপন এতই অহিতকর যে, তখন জীবনের থেকে মৃত্যুকেই উত্তম বলা হয়েছে। এছাড়া মহিলাদের উপর অর্পিত “ফরযে আইন” বা অবশ্য পালনীয় বিষয়াদির মধ্যে পর্দা অন্যতম। পবিত্র কুরআন ও হাদীস শরীফে এ ব্যাপারে যথেষ্ট গুরুত্ব সহকারে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। পবিত্র কুরআনে মহিলাদের প্রতি নির্দেশ করে বলা হয়েছে, “তোমরা তোমাদের ঘরে অবস্থানরত থাক। অন্ধযুগের মহিলাদের ন্যায় বাহিরে (বেপর্দায়) ঘোরাফেরা করো না”। [সূত্র: সূরা আল আহযাব, আয়াত-৩৩] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “মহিলাদের উপর জিহাদ, জুমু‘আ ও জানাযার নামায ফরয নয়। (মাযমাউয যাওয়ায়িদ ২/২৭০) এ সকল ইবাদতগুলো মহিলাগণের উপর ফরয না হওয়ার মূল কারণ হলো তাদের পর্দা রক্ষা করে চলার ব্যবস্থা অক্ষুন্ন রাখা। উল্লেখিত আয়াত ও হাদীস দ্বারা শরী‘আতে মহিলাগণের পর্দার গুরুত্ব ও অবস্থান সহজেই অনুমেয়। আর নেতৃত্ব এমন একটি দায়িত্ব যা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার পাশাপাশি পর্দা রক্ষা আদৌ সম্ভব নয়। বরং নেতৃত্ব পর্দা লঙ্ঘনের হাজারো দ্বার উন্মুক্ত করে দেয়। ইসলামে মহিলাদের আওয়াজকে অপর পুরুষ থেকে সে ভাবেই সংরক্ষণ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে, যেভাবে তার দেহের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সংরক্ষণের নির্দেশ রয়েছে। অথচ নেতৃত্ব করার জন্য তাকে প্রতিদিন বিচার-আচার সভা-সমিতিতে জনগণের সামনে বক্তৃতা বিবৃতিসহ ইত্যাদি হাজারো কর্মকাণ্ড আনজাম দিতে হয়। দেশের জনসাধারণকে তাদের দুঃখ-দুর্দশা ও সমস্যাদি নিয়ে তার দরবারে হাজির হতে হয়। অতএব, একথা অত্যন্ত সুস্পষ্ট যে, নেতৃত্ব ও পর্দা এমন দু’টি বস্তু যা এক সাথে রক্ষা করা আদৌ সম্ভব নয়। এ কথা সর্বজন স্বীকৃত যে, একটা জাতির প্রশাসন বা রাষ্ট্রীয় নেতৃত্ব প্রদান রাষ্ট্রের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। সে মতে এ কাজের, সুষ্ঠ পরিচালনার জন্য একদিকে যেমন প্রয়োজন ভারসাম্য পূর্ণ সুস্থ মন মানসিকতার, অপরদিকে প্রয়োজন যথার্থ ও পূর্ণ আকল বা জ্ঞানের। অথচ হাদীস শরীফে মহিলাদেরকে ‘নাকিসাতুল আকল’ বা জ্ঞান বুদ্ধির দিক দিয়ে অসম্পূর্ণ ও অপরিপক্ক বলা হয়েছে। এ কারণেই মহিলাদের দুইজনের সাক্ষী পুরুষের একজন সাক্ষীর সমান ধরা হয়েছে। এ ধরনের অসম্পূর্ণ জ্ঞানের অধিকারিনী নারী দেশের নেতৃত্ব কিভাবে আঞ্জাম দিতে পারে? এতক্ষণের আলোচনায় পবিত্র কুরআন ও হাদীসের আলোকে একথা সু-প্রমাণিত হলো যে, ইসলাম মহিলাদের ছোট ইমামতী দেয়া তথা মসজিদে নামাযের ইমামতী করার অনুমতি দেয়নি, ঠিক তেমনি তাদের বড় ইমামতী তথা দেশের নেতৃত্ব বা শাসনভার পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করারও অনুমতি দেয়নি। এরপরেও তা করতে যাওয়া হবে চরম শরী‘আত গর্হিত ও ইসলাম বিরোধী কাজ এবং দেশ ও জাতির ধ্বংসের কারণ মহিলা নেতৃত্ব নিষিদ্ধ হওয়ার সম্বন্ধে “ইজমায়ে আইম্মাহ” বা ইমামগণের ঐক্যমত সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আল্লামা ইবনে হাযম রহ. বলেন- সমস্ত ইমামগণের ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত হচ্ছে- কোন মহিলার হাতে রাষ্ট্রের নেতৃত্ব অর্পণ সম্পূর্ণ অবৈধ। ইমাম বাগভী রহ. বর্ণনা করেন- “ইমামগণও এ ব্যাপারে ঐক্যমতে পৌঁছছেন যে, মহিলারা নেতৃত্ব করার জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা রাখে না।” কেননা-ইমাম বা নেতাকে জিহাদ পরিচালনা বা মুসলিম জনসাধারণের প্রয়োজনীয় কার্যাবলী সম্পাদনের জন্য বাহিরে বের হতে হয়। অথচ মহিলারা পর্দায় থাকার জন্য কঠোরভাবে নির্দেশিত। [সূত্র : শারহুস সুন্নাহ ১০/৭৭] কাজী আবু বকর ইবনুল আরাবী রহ.বলেন- “এ বক্তব্য অত্যন্ত স্পষ্ট যে, মহিলাগণ রাষ্ট্র প্রধান হতে পারবে না। এক্ষেত্রে কোন মতপার্থক্য নেই। [সূত্র: আহকামুল কুরআন-৩/১৪৪৫] এ ছাড়া নেতৃত্বদানের জন্য শর্ত হলো- নেতাকে মুসলিম, পুরুষ, পূর্ণ বয়স্ক বালিগ এবং সুস্থ জ্ঞান সম্পন্ন হতে হবে। নারীদের মধ্যে এসব শর্ত অনুপস্থিত। প্রথম শর্তই অর্থাৎ পুরুষ হওয়ার শর্ত নারীদের ক্ষেত্রে নেই তা সুস্পষ্ট। এ ছাড়া অপর একটি হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “নারীরা জ্ঞান ও ধর্মের দিক দিয়ে অসম্পূর্ণ।” [সূত্র: শরহে আকাইদ, ১৪৬] এমনিভাবে ফিকাহ শাস্ত্রের সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য গ্রন্থ ফাতাওয়া শামী’তে উল্লেখ রয়েছে- নরীরা মুসলমানদের নেতৃত্ব দিতে বা রাষ্ট্র প্রধান হতে পারে না। কেননা-তাদেরকে পর্দায় ঘরের মধ্যে অবস্থান করার জন্য কঠোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এবং পর্দায় থাকা তাদের উপর ফরজ করা হয়েছে। যেমন-রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “ঐ জাতি কখনো উন্নতি লাভ করতে পারে না, যে জাতির রাষ্ট্রপ্রধান বা শাসক হবে নারী।” [সূত্র: শামী-১/৫৪৮/ জাওহারুল ফাতাওয়া-৪১১-৩২০, ইযালাতুল খাফা-১/১৯] উল্লেখিত উদ্বৃতি সমূহ থেকে ইজমায়ে উম্মতের ভিত্তিতে মহিলা নেতৃত্বের অসারতা ও অবৈধতা প্রমাণিত হলো। অতএব, কুরআন, হাদীস, ইজমা ও কিয়াস বা যুক্তির বিচারে নারী নেতৃত্ব সম্পূর্ণ অবৈধ। এ ক্ষেত্রে অনেকের প্রশ্ন জাগতে পারে যে, জঙ্গে জামাল বা উষ্ট্রযুদ্ধে হযরত আয়িশারা.-এর নেতৃত্ব প্রদান মহিলা নেতৃত্বের বৈধতার প্রমাণ নয় কি? এ ধারণা নিতান্তই ভুল। কেননা- প্রথমত: হযরত আয়িশা সিদ্দীক রা. সেখানে রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে গমন করেননি এবং সেখানে আলী রা.-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেতৃত্ব প্রদানও তার উদ্দেশ্য ছিল না। তিনি সকল উম্মতের মা হেতু ইসলামী বিধান মতে হযরত উসমান রা. এর শাহাদাতের কিসাস গ্রহণ ও এ নিয়ে মুসলমানদের পরস্পরের মতবিরোধের একটা শান্তিপূর্ণ সমাধানের ক্ষেত্র প্রস্তুত করার জন্যই তথায় উপস্থিত হয়েছিলেন। দ্বিতীয়ত: হযরত আয়িশা সিদ্দীক রা. লোকদের তার ইন্তিকালের পর হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পার্শ্বে দাফন করার কথা বলেছিলেন। কিন্তু এ যুদ্ধে অংশ গ্রহণের পর তিনি নিজেই অনুতপ্ত হয়ে বলেন: আমাকে তোমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে দাফন করোনা। বরং অন্যান্য বিবিদের সাথে “জান্নাতুল বাকী” নামক স্থানে দাফন করো। কারণ-আমি হুজুর সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইন্তিকালের পর একটি বিদ‘আত কাজ করে ফেলেছি বিধায় আমি তার পার্শ্বে দাফন হতে লজ্জাবোধ করছি। [সূত্র:মুস্তাদরাকে হাকিম, ২/৬] এখানে বিদ‘আত বলে তিনি জঙ্গে জামালে অংশ গ্রহণকেই বুঝিয়েছেন- অন্য বর্ণনা দ্বারা তার স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়। তৃতীয়ত: হযরত আয়িশা সিদ্দীকা রা. যখন সালিশী কাজে যাওয়ার ইচ্ছা করেন, তখনই হুযুর সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অন্যান্য বিবিগণ রা. তাঁকে এ কাজ থেকে বারণ করেন এবং হযরত উম্মে সালমা রা. একটি নাতিদীর্ঘ চিঠি লিখে হযরত আয়িশা সিদ্দীকা রা.-কে এ কাজ থেকে বিরত রাখতে চেষ্টা করেন। উপরন্তু পথিমধ্যে “হাওআব” নামক স্থানে এসে হযরত আয়িশা সিদ্দীকা রা.-নিজেই সামনে বাড়তে অনিচ্ছা ব্যক্ত করেন। কারণ-রাত্রে চতুর্দিকে কুকুর ডাকতে থাকলে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর একটি হাদীস তার স্মরণ আসে এবং সামনে অগ্রসর হতে সংশয় বোধ করেন। পরে কিছু লোকের গলদ তথ্য দেয়ায় তিনি তথায় যান। এবং পরবর্তীতে এ কারণে আজীবন আফসোস করেন। এসব কিছুর পরও হযরত আয়িশা সিদ্দীকা রা.-এর জংগে জামাল বা উষ্ট্র যুদ্ধে অংশ গ্রহণের ঘটনাকে মহিলা নেতৃত্ব বৈধ করার পক্ষে প্রমাণ হিসাবে দাঁড় করার চেষ্টা করা নিছক বাতুলতা বৈকি? এক্ষেত্রে বিলকিসের রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার যুক্তিও গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা- (ক) বিলকিস ইসলাম গ্রহণের পূর্বে একটি কাফের রাষ্ট্রের প্রধান ছিলেন। কোন মুসলিম রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন না। (খ) যদি ধরে নেয়া হয় হযরত সুলাইমান আ. তাঁকে পূর্ব পদে বহাল রেখেছিলেন, তাহলে তা দ্বীন-ই সুলাইমানীতে আ. বৈধ বিবেচিত হতে পারে, কিন্তু সে জন্য দ্বীনে মুহাম্মাদী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তথা ইসলামে তা বৈধ হওয়া আদৌ প্রমাণিত হয় না কারণ-এক নবীর শরী‘আত অন্য নবীর আ. এর জন্য শরী‘আত হওয়া জরুরী নয়। বরং হুকুম-আহকামে দুই নবীর আ. এর শরী‘আতের মধ্যে পার্থক্য থাকতে পারে। [সূত্র: বয়ানুল কুরআন, ২/৮৫ তাফসীরে রুহুল মা‘আনী-১০/২১০/ তাফসীরে কুরতভী-১৩/২১১] অনেকে বলে থাকে যে, হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী রহ. মহিলা নেতৃত্ব বৈধ বলতেন। কিন্তু বাস্তবে তাদের এ দাবী সম্পূর্ণ ভুল। কারণ-তাঁর লিখিত জগদ্বিখ্যাত তাফসীরে বয়ানুল কুরআনে তিনি উল্লেখ করেছেন যে, আমাদের শরী‘আতে মহিলাগণের নেতৃত্বের কোন অবকাশ নেই। (তাফসীরে সূরা নমল ২/৮৫) তাছাড়া তিনি তাঁর ফাতাওয়ার কিতাব ইমদাদুল ফাতাওয়ায় উল্লেখ করেছেন যে, মুসলিম উম্মাহর রাষ্ট্রনায়ক বা নেতা কোন মহিলাকে বানানো বৈধ নয়। কারণ-এটা কুরআন ও সুন্নাহ সমর্থিত নয়। বরং কুরআন সুন্নাহর পরিপন্থী। পাশ্চাত্য সমাজ দর্শনের নগ্ন উম্মত্ততা আজ আমাদের নারী সমাজকে তাদের সঠিক অবস্থান থেকে অনেক দূরে সরিয়ে নিয়ে এসেছে। কেননা-ইসলাম ও পাশ্চাত্যের নোংরা সমাজনীতি একে অপরের সাথে মোটেও সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার নামে আমদের সমাজের একশ্রেণীর লোলুপ-কুলাঙ্গার নিজেদের ভোগ-লালসা চরিতার্থ করার সুযোগ সৃষ্টির জন্যই শান্তিপূর্ণ নিবাস থেকে স্কুল-কলেজ, অফিস আদালত, গার্মেন্টস-ফ্যাক্টরী তথা সর্বত্র নারীকে টেনে এনেছে এক নির্লজ্জ পরিবেশে। এর ভয়াবহ বিষক্রিয়া থেকে দেশ জাতিকে বিশেষতঃ নারী সমাজকে রক্ষা করতে হলে, আমাদের আবার ফিরে আসতে হবে ইসলাম প্রদত্ত আদর্শপূর্ণ ও যুক্তি সংগত সমাজ দর্শন আল্লাহ বিধানের দিকে। এ পথ ছাড়া শান্তির কোন পথ নেই। উল্লেখ্য কোন সময় যদি মহিলা নেতৃত্বের থেকে পুরুষ নেতৃত্ব নিকৃষ্টতম হয় এবং পুরুষ নেতৃত্ব ইসলাম-কুরআন-সুন্নাহ এর বেশি ক্ষতিকর হয় তাহলে সেরূপ পরিস্থিতিতে হক্কানী মুফতীয়ানে কিরামের ফাতাওয়া-এর উপর আমল করতে হবে। সমাপ্ত https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islami_jindegi
Blogger দ্বারা পরিচালিত.