আল্লাহ তা‘আলার ব্যাপারে ভ্রান্ত আক্বীদা
ভ্রান্ত আক্বীদা-১:
ইসলামের নামে একটি গোমরাহ ফিরকা এরূপ বিশ্বাস রাখে যে, আল্লাহ ও রাসূল একই সত্ত্বাবিশেষ। অর্থাৎ যিনি রাসূল, তিনিই স্বয়ং আল্লাহ এবং তিনিই ‘মুহাম্মদ’ নাম ধারণ করে মানুষের আকৃতিতে দুনিয়ায় অবতরণ করেছিলেন। তারা আরো বলে থাকে যে, আহাদ ও আহমদ-এর মধ্যে কেবল একটি মীমের পার্থক্য। খোদা মীমের যবনিকা টেনে অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুরত ধারণ করে লোকালয়ে এসেছেন। নচেৎ উভয়ের মাঝে কোন পার্থক্য নেই।
এ কথাটির তারা কবিতার মাধ্যমেও বলে থাকে-স্বয়ং
‘মুহাম্মদ নাম ধারণ করে কে এলোরে মদীনায়,
আসল কথা বলতে গেলে পড়বে দড়ি গলায়।’ [নাউযুবিল্লাহ]
এ ধরণের আক্বীদা সুস্পষ্ট কুফর। এরূপ আক্বীদা পোষণকারী ব্যক্তি ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে, তাতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা অতুলনীয়। কোন সৃষ্টিজীবের সাথে কোনভাবেই তাঁর তুলনা হতে পারে না। সে ক্ষেত্রে নবীকে সরাসরি খোদার সাথে তুলনা করা বা খোদা ও রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে একই সত্ত্বা বলা যে কত বড় জঘন্য অপরাধ ও কুফরী আক্বীদা, তা অতি সহজেই অনুমেয়। [সূত্র: সূরা শূরা, আয়াত ১১, আকীদাদাতুত তাহাবী, পৃষ্ঠা ৩১।]
ভ্রান্ত আক্বীদা-২:
অনেক মূর্খ লোক বিশ্বাস করে যে, ওলী-বুযুর্গ, পীর-সাধক, মাযার-দরবার প্রভৃতি মানুষের মনের মাকসুদ পূর্ণ করতে পারে, সন্তানাদি ও ধন-সম্পদ ইত্যাদি দান করতে পারে বিপদ-আপদ দূর করতে পারে। এ ভ্রান্ত আকীদার বশবর্তী হয়ে তারা বিভিন্ন পীরের নামে মান্নত ও নযর-নিয়ায করে, তাদেরকে বা তাদের মাযারকে সিজদা করে, তাদের কবর তাওয়াফ করে, তাদের কাছে প্রার্থনা করে ইত্যাদি।
অথচ মান্নত বা নযর, সিজদা বাইতুল্লাহ তাওয়াফ ও প্রার্থনা এ সবই ইবাদত এবং এগুলো একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্ধারিত। সুতরাং, এগুলো অন্যের জন্য করা কুফরী ও শিরকী কাজ। এর থেকে বিরত থাকা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর ফরয এবং এটা তাদের ঈমানী দায়িত্ব। পূর্বেই বলা হয়েছে, একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাই মানুষের মাকসুদ পূর্ণ করেন, তাদের প্রার্থনা মঞ্জুর করেন এবং একমাত্র তিনিই মানুষের সকল বিপদ-আপদ দূর করতে পারেন। এ ক্ষমতা তিনি পীর-বুযুর্গ তো দুরের কথা, কোন নবী রাসূলকেও প্রদান করেন নি। তাই কোন নবী-রাসূল, পীর-বুযুর্গ এসব ক্ষমতার কথা কখনো দাবী করেন নি, বা এগুলো বাস্তাবায়িত করে দেখাতে পারেন নি। বরং এসব ব্যাপারে তারাও আল্লাহ তা‘আলার দরবারে দু‘আ করেছেন। আল্লাহ তা‘আলার প্রিয় পাত্র হিসেবে তাদের অনেক দু‘আ আল্লাহপাক কবুল করেছেন, আবার কোন কোন ক্ষেত্রে কবুল করেন নি। যেমন, হযরত নূহ আ. তাঁর কাফির ছেলের জন্য দু‘আ করেছেন, কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা তা কবুল করেন নি। হযরত ইবরাহীম আ. নিজের কাফির পিতার জন্য দু‘আ করেছেন। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা তা কবুল করেন নি। আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুনাফিক সরদার আবদুল্লাহ বিন উবাই-এর জন্য দু‘আ করেছেন, নিজের চাচা আবু তালিব এর জন্য দু‘আ করেছেন, কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা কবুল করেন নি। এ ধরণের অনেক ঘটনার বর্ণনা কুরআন-হাদীসে উল্লেখিত রয়েছে।
সুতরাং, ইবাদত-বন্দেগী পাওয়ার যোগ্য একমাত্র মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন। কোন পীর-আউলিয়া বা মাযারের ইবাদত করা সম্পূর্ণ শিরক এতে ঈমান চলে যায়। [সূত্র : সূরা আনআম, আয়াত ১৬৪, সূরা ইউসুফ, আয়াত ৩৮, ৩৯, ৪০ আকীদাতুত তাহাবী, পৃষ্ঠা ৩১।]
মোদ্দাকথা, কোন সৃষ্টজীব বা পদার্থ মা‘বুদ কিংবা ইবাদতযোগ্য হতে পারে না। অতএব, যারা গঙ্গার, সূর্যের, রামের, যীশুর, কোন দেবতার, কোন পীর-পয়গাম্বরের উপাসনা বা পূজা-অর্চনা করে, তারা নির্বোধ, বেঈমান ও কাফির। উল্লেখ্য যে, গঙ্গা, সূর্য, আগুণ ইত্যাদিকে সালাম করা এবং এ সবের সামনে নত হওয়াই প্রকারান্তরে এগুলোর ইবাদত করার শামিল।
ভ্রান্ত আক্বীদা-৩:
অনেকে তিন খোদা মানে, একে ‘তিনে তিনে এক’ বলে, হযরত উযাইর আ. কে খোদার পুত্র বলে বিশ্বাস করে, হযরত মারিয়াম আ. কে খোদার স্ত্রী হিসেবে বিশ্বাস করে, অবতারে বিশ্বাস করে, জীবাত্মাকে পরমাত্মার অংশরূপে মনে করে, বা পরমাত্মাকে পরমেশ্বর মানে, হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে খোদার আংশিক জাতি নূরের সৃষ্টি বলে বিশ্বাস করে।
এ সবই শিরক ও কুফর। তারা আল্লাহর সাথে অন্যকে শরিক করার কারণে বেঈমান, মুশরিক, কাফির সাব্যস্ত হবে। [সূত্র : সূরা যুমার, আয়াত ৪, সূরা আনকাবুত, আয়াত ৪৬, আকীদাতুত তাহাবী,পৃষ্ঠা-৩০]
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islami_jindegi