ইসলামের নামে ভ্রান্ত আক্বীদা
মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন-
وَأَنَّ هَذَا صِرَاطِي مُسْتَقِيمًا فَاتَّبِعُوهُ وَلَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَنْ سَبِيلِهِ ذَلِكُمْ وَصَّاكُمْ بِهِ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ
নিশ্চয়ই এটি আমার সরল পথ। অতএব, তোমরা এ পথে চল। খবরদার! অন্যান্য পথ অবলম্বন করো না। অন্যথায় সে সব পথ তোমাদেরকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিবে। আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে এ নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তোমরা সংযত ও সর্তক হও। [সূত্র : সূরা আনআম, আয়াত-১৫৩]
নবী করীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-নিশ্চয়ই বনী ইসরাঈল ৭২ ফিরকায় বিভক্ত হয়েছিল, তেমনিভাবে আমার উম্মত ৭৩ ফিরকায় বিভক্ত হবে। একটি জামা‘আত ব্যতীত তাদের সকল ফিরকাই জাহান্নামী হবে। সাহাবায়ে কিরাম রাযি. প্রশ্ন করলেন, সেই জামা‘আত কোনটি? নবী করীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম জবাব দিলেন, আমি ও আমার সাহাবীগণের তরীকার ওপর যারা থাকবে। [সূত্র: তিরমিযী খণ্ড-২, পৃষ্ঠ-৯২ ও মিশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা ৩০।]
উল্লেখিত আয়াত ও হাদীস দ্বারা স্পষ্ট বোঝা যায় যে, আখিরী উম্মত ঈমান ও আকীদার দিক দিয়ে ৭৩ ফিরকা বা দলে বিভক্ত হয়ে পড়বে। তাদের মধ্যে শুধু মাত্র একটি জামাত জান্নাতী হবে এবং অবশিষ্ট ৭২টি ফিরকা ঈমান ও আকীদার ত্রুটির কারণে জাহান্নামী হবে।
বাস্তবতার কারণে এ কথা প্রমাণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ভবিষ্যদ্বাণী প্রতিফলিত হয়ে গেছে। উম্মতের মধ্যে বহু গোমরাহ ও পথভ্রষ্ট দলের উদ্ভব হয়েছে। এদের কোন কোনটা সুস্পষ্ট কুফরী আক্বীদা অবলম্বন করার দরুন দ্বীন ও ঈমানের গণ্ডি থেকে সম্পূর্ণভাবে খারিজ হয়ে কাফির সাব্যস্ত হয়েছে। আর কোন কোনটা পথচ্যুত, গোমরাহ ও বিদ‘আতী। তারা কাফির না হলেও নিশ্চিতভাবে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত বা আহলে হকের গণ্ডি থেকে বের হয়ে গেছে।
আহলে হকভুক্ত কোন ব্যক্তি আকীদার ত্রুটির কারণে জাহান্নামী হবে না, তবে তাদের মধ্যে হতে কেউ কেউ আমলের ত্রুটির কারণে সাময়িকভাবে জাহান্নামী হতে পারে। আর অবশিষ্ট বাতিল ফিরকাসমূহ আক্বীদা ও আমল উভয় প্রকার ক্রুটির কারণে জাহান্নামী হবে।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ভবিষ্যদ্বাণী অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবে প্রতিফলন হয়েছে। তিনি যে সহী ঈমান ও আক্বীদা উম্মতের সামনে পেশ করেছিলেন এবং যে নকশার ওপর সাহাবায়ে কিরামকে রাযি. তৈরী করেছিলেন, পরবর্তীতে মুসলমান নামধারী অনেক লোক নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য এবং দ্বীনে ইসলাম ও মুসলমানদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য সহীহ আক্বীদাসমূহকে পরিবর্তন করে তার স্থলে ভ্রান্ত আকীদার প্রচার-প্রসার ঘটিয়েছে। এ ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর একটি ভবিষ্যদ্বাণী প্রণিধানযোগ্য, শেষ যামানায় অনেক দাজ্জাল-কাযযাবের আবির্ভাব ঘটবে, তারা দ্বীনের নামে এমন অনেক কথা প্রচার করবে, যা তোমরা ও তোমাদের বাপ-দাদারা কোনদিন শোননি। তোমরা তাদের থেকে সাবধান থাকবে, যাতে তারা তোমাদের গোমরাহ না করে ফেলে। [সূত্র: মুসলিম শরীফ। খণ্ড-১, পৃষ্ঠা ৯।]
প্রত্যেক যুগেই অনেক মূর্খ ও বে-ইলম লোকেরা ইসলামের নামে আবিষ্কৃত সেসব নতুন নতুন ভ্রান্ত আক্বীদা গ্রহণ করে দ্বীন-ঈমান নষ্ট করেছে এবং আহলে হকের জামা‘আত থেকে খারিজ হয়ে গেছে। পূর্ববর্তী যুগের তুলনায় বর্তমান যুগে ফিতনা-ফাসাদ অনেক বেশি হওয়ায় এবং অধিকাংশ লোক দ্বীনি ইলমের ব্যাপারে অজ্ঞ থাকায় তাদের অনেকেই ইসলামের নামে সেসব বাতিল ও ভ্রান্ত আক্বীদা পোষণ করে নিজেদের ঈমান-আক্বীদা নষ্ট করে ফেলেছে।
তবে এটা অত্যন্ত দুঃখজনক যে, এ ব্যাপারে যে পরিমাণ কিতাবপত্র রচনা ও যতটুকু আলোচনা-পর্যালোচনা দরকার ছিল, তা হয়নি। অপরদিকে মধুর নামে বিষ পান করানোর ন্যায় বাতিল আক্বীদায় ভরপুর বই পুস্তকে বাজার ছেয়ে গেছে। বাতিল আকীদার প্রচার ও প্রসার হচ্ছে খুব দ্রুত গতিতে। এহেন নাজুক মুহূর্তে মুসলমানদের দ্বীন ও ঈমানের হেফাযতের লক্ষ্যে সহীহ আক্বীদা বর্ণনার পাশাপাশি ভ্রান্ত আক্বীদাসমূহকে আলোচনা অতীব জরুরী মনে করে সেগুলোর আলোচনা করার প্রয়াস পেয়েছি। যাতে করে কোন মুসলমান দ্বীনের নামে সেসব ভ্রান্ত আক্বীদা কোনক্রমেই অন্তরে স্থান না দেন। আর খোদা না করুন, যদি কোন মুসলমান সহীহ ইলম না থাকার দরুন ভ্রান্ত আক্বীদা পোষণ করে থাকেন, তাহলে তিনি যেন সাথে সাথে সেগুলো অন্তর থেকে দূর করে খালিসভাবে আল্লাহ তা‘আলার দরবারে তাওবা করে সহীহ আক্বীদা দিলের মধ্যে বদ্ধমূল করে নেন।
সাবধান! দ্বীনের ব্যাপারে কোনরূপ জিদ বা হঠকারিতার আশ্রয় নেয়া বাঞ্ছনীয় নয়। কবরে যাওয়ার পরই ঈমানের পরীক্ষা নেওয়া হবে। এ পরীক্ষায় যে ব্যক্তি উত্তীর্ণ হবেন, তিনি সামনের সকল পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হয়ে জান্নাতী হবেন। আর উক্ত পরীক্ষায় যে অকৃতকার্য হবে, সে সামনের সকল পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে জাহান্নামী সাব্যস্ত হবে। আর এ পরীক্ষা একবারই হবে, দুনিয়ার পরীক্ষার ন্যায় একবার ফেল করে দ্বিতীয় বার পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ সেখানে নেই। আর এ পরীক্ষা প্রত্যেককে দিতে হবে এবং যার পরীক্ষা তাকেই দিতে হবে। সেখানে কোন ওলী-বুযুর্গ, পীর-আউলিয়া, রাজনৈতিক নেতা বা দলপতি কেউ কোন প্রকার সাহায্য-সহযোগিতা করে পাশ করিয়ে দিতে পারবে না। এ ধরণের কোন সুযোগ সেখানে নেই।
দুনিয়াতে কোন নেতার প্রভাবে বা ব্যক্তিগত স্বার্থে ভ্রান্ত আক্বীদায় বিশ্বাসী হয়ে পরকালে বুদ্ধি খাটিয়ে সঠিক উত্তর দিয়ে পাশ করে ফেলবে, এমন ধারণা করাটাও একেবারে অর্থহীন। যে ব্যক্তি যে আকীদার ওপর জীবন কাটিয়েছেন এবং যে আকীদার ওপর মৃত্যুবরণ করেছে, পরকালের পরীক্ষার সময় তদ্রূপ উত্তরই তার মুখ থেকে বের হবে এবং সেই উত্তরের ওপর ভিত্তি করে তার জান্নাত কিংবা জাহান্নামের ফায়সালা হবে। তাই সময় থাকতে এখনই যার যার ভ্রান্ত আক্বীদা ও আমলের ত্রুটি সংশোধন করে নেয়া বাঞ্ছনীয়।
বর্তমান সমাজে যেসব ভ্রান্ত আক্বীদা প্রচলিত আছে, তন্মধ্যে থেকে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি নিম্নে প্রদত্ত হলো। এথেকে বেঁচে থাকা অপরিহার্য।
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islami_jindegi