Header Ads

ইসলামের দৃষ্টিতে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদ গণতন্ত্র সমাজতন্ত্র ইসলাম বিরোধী মতবাদঃ পৃথিবীতে আল্লাহ তাআলা মানুষকে পাঠিয়েছেন খলীফারূপে, তার প্রতিনিধিত্ব করার জন্য। জান্নাত হতে নির্বাসিত মানুষ যাতে তার সঠিক সরল পথ ভুলে না যায়, সে জন্য যুগে যুগে এ ধরায় আবির্ভূত হয়েছেন অসংখ্য নবী-রাসূল আ.। মানুষের জীবন পদ্ধতির সঠিক রূপরেখা বর্ণনা দিয়ে বহু আসমানী গ্রন্থ এসেছে সেসব নবী-রাসূলগণের আ. মাধ্যম। শেষনবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মাধ্যমে আমাদের জন্য পবিত্র কুরআনের আলোক বর্তিকা দ্বারা জীবন চলার পথ ও পাথেয় সুস্পষ্ট ও উজ্জ্বল হয়ে আছে। পবিত্র কুরআনের বাস্তব ব্যাখ্যা হচ্ছে হাদীস। ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় জীবনের প্রতিটি অধ্যায় সম্পর্কে পবিত্র কুরআন ও হাদীস স্পষ্ট বর্ণনা দিয়েছে। ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রকে ধর্ম ও রাজনীতির একই সূত্র-বন্ধনে আবদ্ধ করেছে ইসলাম। তাই ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের প্রেরিত ইসলামী মতাদর্শ বাদ দিয়ে কারো ব্যক্তিগত তথা মানব রচিত আইন বা মতবাদ দিয়ে দেশ শাসন করা বা এ জন্য আন্দোলন করা মুসলমানদের জন্য সম্পূর্ণরূপে নাজায়িয। অথচ কমিউনিজম এবং শস্যালিজমের নেতার কথার বুলি আওড়াতে গিয়ে বলে থাকে, “ইসলাম মানব জাতিকে যে সাম্যবাদ শিক্ষা দিয়েছে, আমরা জাতিকে সেই সাম্যবাদের দিকেই আহবান করি। সমতার দিক দিয়ে ইসলামের সাথে আমাদের কোন বিরোধ নেই; বরং ইসলামের শিক্ষাকেই আমরা বাস্তবায়িত করতে চাই সাম্যবাদের মাধ্যমে”। উক্ত নেতাদের এসব বক্তব্য-বিবৃতি ষোল আনাই ধোঁকা, সত্যের অপলাপ এবং মধুর নামে বিষ পান করানোর অপচেষ্টা মাত্র। শরী‘আতের দৃষ্টিতে প্রচলিত সমাজতন্ত্র ও গণতন্ত্রের প্রচার করা হারাম। কারণ, বর্তমান গণতন্ত্রও সমাজতন্ত্র উভয়ই ইসলাম বিরোধী মতবাদ। তেমনিভাবে জাতীয়তাবাদের শ্লোগান আরেক শরী‘আতবিরোধী আওয়াজ। আর ধর্মনিরপেক্ষতার মধ্যে তো কোন ধর্মই নেই। আধুনিক গণতন্ত্রের মূল বক্তব্য হচ্ছে-“জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস”। গণতন্ত্রের মর্মবাণীঃ Govt. of the people by the people for the people. সরকার জনগণের মধ্য হতে, জনগণের দ্বারা জনগণের জন্য নির্বাচিত হবে। অর্থাৎ জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস। আর সমাজতন্ত্রে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হয় পার্টি। জনগণ হয় পার্টির সদস্য। বুঝা গেল, উভয় তন্ত্রেরই মূল বক্তব্য-জনগণ সর্বময় ক্ষমতার উৎস। অথচ ইসলাম সর্বময় ক্ষমতার উৎস বলে স্বীকার করে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাকে। মোদ্দাকথা, ইসলামের বুনিয়াদ খোদায়ী শক্তির উপর। আর গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের বুনিয়াদ জনগণ তথা বস্তুর উপর। মূলভিত্তি হতেই শুরু হয় ইসলামের সাথে গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের সংঘাত। সুতরাং, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র ইসলাম বিরোধী মতবাদ। তাই এতদুভয়ের কোনটাই ইসলামের শিক্ষাকে বাস্তবায়িত করতে পারে না। নেতা নির্বাচনের বেলায় ইসলামের শিক্ষা হল সমাজের আলেম জ্ঞানী ও যোগ্যতাসম্পন্ন দ্বীনদার ব্যক্তিগণের পরামর্শের দ্বারা রাষ্ট্রপ্রধান হতে নিম্নস্তর পর্যন্ত যোগ্যতার ব্যক্তি শাসনকার্যে নিযুক্ত হবেন। নেতা বা শাসক নির্বাচনের ব্যাপারে অশিক্ষিত, মূর্খ ও নির্বোধ লোকদের রায় বা পরামর্শের কোন মূল্য নেই। জ্ঞানী-গুণীদের দ্বারা শাসক নির্বাচিত হবার পর দেশবাসী সকলেই তাদের আনুগত্য স্বীকার করে নিবে। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ ও রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে মান্য কর। আর যে আমীর আল্লাহ ও রাসূলের নির্দেশ মত হুকুম করে, তার অনুগত হও”। [সূত্র: সূরা নিসা, আয়াত ৫৯।] রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “তোমরা আমীরের কথা মেনে চল, যদিও কোন হাবশী নাককাটা গোলামকে (তার যোগ্যতার কারণে) তোমাদের আমীর নির্বাচিত করা হয়”।[সূত্র: তিরমিযী শরীফ। খণ্ড -২, পৃষ্ঠা ৩০০] মোট কথা হুকুমতের কোনো দায়িত্বে আসার জন্য অনেকগুলো শর্ত আছে। ১. জরুরত পরিমাণ কুরআন ও হাদীসের ইলম থাকা। ২. দ্বীনদারী ও পরহেযাগারী থাকতে হবে। ৩. সততা ও আমানতদারী থাকতে হবে। ৪. সমাজসেবার মনোভাব ও রেকর্ড থাকতে হবে। ৫. রাষ্ট্রপরিচালনার ব্যাপারে যোগ্যতা ও দক্ষতা থাকতে হবে। ৬. উমালায়ে কিরাম ও মুফতীদের সাথে পরামর্শ করার বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে। ৭. দায়িত্বগ্রহণে অনিচ্ছুক হতে হবে। পক্ষান্তরে আমাদের সমাজে প্রচলিত গণতন্ত্রে এসব শর্ত পাওয়া যায় না। গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র সমাজসচেতন জ্ঞানী লোকদের দ্বারা নির্বাচিত আমীরের আনুগত্য শিক্ষা দেয় না, বরং সংখ্যাগরিষ্ঠের রায়কে মানতে শিখায়। যদিও সেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা নির্বোধ ও বোকা লোকদের হয়। অথচ পবিত্র কুরআন সংখ্যাগরিষ্ঠের রায় মানার বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারী দিয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে- “যদি তুমি অধিকাংশের কথা অনুসরণ কর, তাহলে অধিকাংশের রায় তোমাকে সঠিক পথ থেকে দূরে সরিয়ে দিবে”।[সূত্র: সূরা আন‘আম, আয়াত ১১৬] কারণ এটা বাস্তব সত্য কথা যে, দুনিয়াতে সব সময় ভালোর চেয়ে মন্দ বেশি থাকে। যেমন, শিক্ষিতের চেয়ে অশিক্ষিতের সংখ্যা বেশী। জ্ঞানীর চেয়ে মূর্খ নির্বোধের সংখ্যা বেশি। এমনিভাবে সৎ লোকের চেয়ে অসৎলোকের সংখ্যা বেশি। এক্ষেত্রে যদি অধিকাংশের রায়ের দ্বারা কোন সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়, তবে সেখানে নির্বোধ, অশিক্ষিত, অযোগ্য ও অসৎ লোকদের দখলদারিত্ব জয়ী হবে। তাই এ সিদ্ধান্তে ভুল থাকাটাই স্বাভাবিক। বলাবাহুল্য গণতন্ত্রে শুধু সংখ্যার হিসেবই পরিগণিত হয়, এবং সংখ্যাধিক্যকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়। সেখানে বিবেক-বুদ্ধির কোনো মূল্যায়ন করা হয় না। এজন্যে ইসলাম গণতন্ত্রকে ইসলামী আদর্শের পরিপন্থী বলে ঘোষণা করে। এ সত্যটি না জানার কারণেই অনেকে গণতন্ত্রের জন্য দরদী হয়ে জোর গলায় হাঁকছেন। আবার অনেকে ইসলাম কায়িম করার কথা বলে গণতন্ত্র কায়িম করার পিছনে দৌড়াদৌড়ি ও লেজুড়বৃত্তি করে চলেছেন। https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islami_jindegi
Blogger দ্বারা পরিচালিত.