দ্বিতীয় যিম্মাদারী
মসজিদের মুসল্লীদের এবং মসজিদের মকতব-এর বাচ্চাদের কুরআনে কারীম তথা সূরাহ ক্বিরা‘আত সহ দীনের মৌলিক বিষয়সমূহ পর্যায়ক্রমে শিক্ষা দান করা।
দীনের করণীয় পাঁচটি বিষয় সম্পর্কে স্পষ্ট জ্ঞান দান করা। অর্থাৎ তাদের ঈমান-আকায়িদ, ইবাদত-বন্দেগী, মু‘আমালাত বা হালাল রিযিক, মু‘আশারাত বা বান্দার হক ও ইসলামী সামাজিকতা, আত্মশুদ্ধি বা অন্তরের রোগের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা এবং এর মাধ্যমে সমস্ত গুনাহের অভ্যাস পরিত্যাগ করানো এবং প্রত্যেকটি বিষয়ে বাস্তব প্রশিক্ষণের মাধ্যমে হাতে কলমে শিক্ষা দান করা। বর্তমানে এর বড়ই অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। একে তো অনেকে ফাযায়িলের বয়ান করলেও মাসায়িলের বয়ান করেন না, আবার কেউ মাসায়িলের আলোচনা করলেও বাস্তব প্রশিক্ষণ প্রদান করেন না। যে কারণে আমাদের সমাজে বিভিন্নভাবে দীন খেদমত চালু থাকা সত্ত্বেও উম্মাতের আযান-ইকামত, উযূ-নামায, বিবাহ-শাদী, কাফন-দাফন ইত্যাদির কোনটিই পুরোপুরি সুন্নাত অনুযায়ী আদায় হচ্ছে না; বরং প্রত্যেকটির মাঝে কিছু সুন্নাত জারী আছে, আর কতগুলো সুন্নাত ছুটে যাচ্ছে। অথচ কোন আমল আল্লাহর দরবারে কবুল হওয়ার জন্য সুন্নাতের অনুসরণ জরুরী এবং সুন্নাতের দ্বারাই ফরজ পরিপূর্ণ হয়। মিরাজের রাতে নামায ফরজ হওয়ার পরের দিন আল্লাহ তা‘আলা হযরত জিবরাঈল আ. কে পাঠিয়ে নামাযের সম্পূর্ণ নকশা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে পেশ করেছেন, নামাযের বাস্তব প্রশিক্ষণ প্রদান করেছেন এবং নবী ﷺ ও সাহাবায়ে কিরামকে রা. তাবেয়ীনদেরকে যে আমলী মশকের মাধ্যমে নামায শিখিয়েছেন, এর বহু ঘটনা হাদীসের কিতাবসমূহে বিদ্যমান রয়েছে। তাছাড়া নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে ঘুরে ঘুরে নামাযের কাতার দুরুস্ত করতেন, ভুল সংশোধন করতেন, এমনকি একবার রুকু-সিজদার মধ্যে কিছু ত্রুটি করার দরুন একজন সাহাবীকে তিনি বলেছেন যে, তুমি দ্বিতীয়বার নামায পড়, তোমার নামায হয়নি। তিন বারের পর যখন সেই সাহাবী ভুল সংশোধন করতে পারলেন না, তখন প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে পুরা নামায শিখালেন। (বুখারী শরীফ/মুসলিম শরীফ)
সাহাবী আবু হুজাইফা রা. এক ব্যক্তিকে দেখলেন যে,তিনি নামাযে রুকু-সিজদার মধ্যে ভুল করছেন।তখন নামাযান্তে তিনি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন যে,তুমি এভাবে নামায কতদিন যাবত পড়ে আসছ? সে ব্যক্তি বলল, বার বছর যাবত। উক্ত সাহাবী রা. তখন বললেন, এভাবে নামায পড়তে পড়তে যদি তুমি মৃত্যুবরণও কর, তাহলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের তরীকার উপর তোমার মৃত্যু হবে না। (বুখারী,১:১০৯/হাঃ নং ৭৯১)
এ সামান্য আলোচনা দ্বারা অতি সহজেই বুঝা গেল, আমদের আমলের যে করুণ অবস্থা তা দূর করতে হবে। এর একমাত্র পথ হলো গুরুত্ব সহকারে সুন্নাতের আলোচনা বেশি বেশি করা এবং প্রত্যেকটি দীনী বিষয় আমলী মশকের মাধ্যমে শিক্ষা করা ও শিক্ষা দেয়া। যেন এমন না হয় যে, একজন ইমাম ১০/ ১৫ বছর এক স্থানে ইমামতি করছেন, অথচ এ দীর্ঘ সময়েও তার পেছনের মুসল্লীদের সূরা, ক্বিরা‘আত ও নামাযের রুকু-সিজদা কিছুই সহীহ হয়নি। অথচ তিনি ইমামতি করেই যাচ্ছেন।
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islami_jindegi