প্রথম যিম্মাদারী
মসজিদে মুসল্লীদের সঠিকভাবে ইমামতি করা ও নামায পড়ানো। এর জন্য আপনার নিজের প্রস্তুতি হিসেবে তিনটি কাজ করতে হবে।
(ক) সূরা-ক্বিরা‘আত পুরোপুরি সহীহ করতে হবে। কারণ, ক্বিরা‘আতের অনেক ভুলের দ্বারা নামায ফাসিদ হয়ে যায়।
(খ) সহীহ মাসআলা-মাসায়িল আমলী মশক (বাস্তব প্রশিক্ষণ) এর মাধ্যমে শিখে নিতে হবে। কারণ, ড্রাইভার না শিখে ড্রাইভিং করলে যেমন ড্রাইভিং নিজেও মরে যাত্রীদেরকেও মারে, তেমনিভাবে কারো নিকট থেকে মাসায়িল ও প্রাকটিক্যাল নামায না শিখে ইমামতি করলে বিভিন্ন ভুলের দরুন নিজেও মহা অপরাধী হয় এবং মুসল্লীদের নামায ও নষ্ট হয়ে যায়। যেমন, মনে মনে ক্বিরা‘আত পড়া, জিহ্বা ঠোঁট বা মুখ না হেলিয়ে দিলে দিলে ক্বিরা‘আত পড়া। (হিদায়া,১:১১৭)
তাছাড়া নামাযের আমলী মশক না থকার দরুন অনেক ইমাম তাকবীরে তাহরীমার ‘আল্লাহ’ শব্দের মধ্যে এক আলিফ থেকে অনেক বেশি লম্বা করে থাকেন, যা মূলত নিষেধ (ফাতওয়া শামী, ১:৩৮৭)
কিন্তু এ ভুলের দরুন মুসল্লীদের নামাযে মারাত্মক অসুবিধা হতে পারে। কারণ, অনেক মুসল্লী ইমামের সাথে সাথে তকবীরে তাহরীমা বলে থাকেন এবং তারা আল্লাহ শব্দটি দীর্ঘ স্বরে উচ্চারণ করেন না। এ কারণে তাদের তাকবীর ইমামের তাকবীরের আগেই শেষ হয়ে যায়। যার ফলে তাদের ইমামের একতেদাই সহীহ হয় না এবং তাদের নামায বেকার হয়ে যায়। (আহসানুল ফাতওয়া, ৩:৩০৫)
লক্ষ্য করুন, ইমামের একটু ভুলের দরুন কত বড় ক্ষতি হতে পারে! তেমনিভাবে অনেকে তাকবীরে তাহরীমার জন্য হাত উঠানোর সময় মাথা ঝুঁকিয়ে থাকেন এবং এটাকে আল্লাহর সামনে বিনয় প্রকাশ করা মনে করে থাকেন। অথচ এ অবস্থায় চেহারা কিবলার দিকে রাখতে হয়। কিবলার দিকে না রেখে জমিন মুখী রাখায় এটা নাজায়েয ও হারাম হয়। (ফাতওয়া আলমগীরী,১:৭৩/ আদ দুররুল মুখতার,১:৪৭৫)
আবার কেউ কেউ রুকু‘ থেকে সিজদায় যাওয়ার সময় রুকুর মত করে সিজদায় গিয়ে থাকেন, যা মাকরূহে তাহরীমী। কারণ, মাসআলা হল, হাঁটু জমিনে না লাগা পর্যন্ত বুক একদম সোজা রাখতে হবে এবং হাঁটু জমিনে লাগার পর সিনা ঝুঁকিয়ে সিজদায় যেতে হবে। (ফাতওয়া শামী,১:৪৯৭) নূরুল ইজাহ,৫১)
এখন বলুন, কোন ইমাম সাহেব যদি অসতর্কতা বা নামাযের মশক না থাকার দরুন এভাবে হারাম বা মাকরূহ তাহরীমী কাজে লিপ্ত থাকে, তাহলে মুসল্লীদের নামাযের কী অবস্থা হবে?
কোন কোন ইমাম অসতর্কতার দরুন নামাযের সালাম ফিরানোর সময় ‘আস-সালামু’ শব্দের মধ্যে এক আলিফ থেকে বেশি লম্বা করে থাকেন,অথচ এতে মুসল্লিদের নামাযের মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যায়। কারণ, মুকতাদীদের জন্য প্রথম সালামের ‘আস-সালামু’ পর্যন্ত ইমামের ইকতিদা করা ওয়াজিব। অর্থাৎ এতটুকু সময়ের মধ্যে মুক্তাদীগণ সালাম বলার ক্ষেত্রে ইমামের আগে যেতে পারবে না। ইচ্ছা পূর্বক ইমামের আগে গেলে মাকরূহ তাহরীমী হবে।(তাতরখানীয়া,১:৮৭/আলমগীরী,১:৬৮ -৬৯
এর পরে অবশিষ্ট সালামের মধ্যে ইমামের ইকতিদা করা সুন্নত। সুতরাং এখন যদি কোন ইমাম সাহেব আস-সালামু শব্দে এক আলিফের থেকে বেশি লম্বা করে তাহলে তো মুসল্লীগণ ইমাম সাহেবের আগেই ‘আস-সালামু’ বলে ফেলবে। এতে তাদের নামায মাকরূহ তাহরীমী হয়ে যাবে।
দেখুন, ইমাম সাহেবের সামান্য ভুলের দরুন অনেক সাধারণ মুক্তাদির নামায মাকরুহে তাহরীমী হতে পারে। তাছাড়া অনেক স্থানে দেখা যায় যে, নামায শেষে ইমাম সাহেব সকল মুসল্লীকে নিয়ে উচ্চৈঃস্বরে দু’রাকা‘আতে থাকেন। ফলে মাসবূক মুকতাদীদের অবশিষ্ট নামায সম্পূর্ণ করতে মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি হয়।অথচ সালামের পর ইমামের ইকতিদা শেষ হয়ে যায়।এরপর আর ইকতিদা বাকী থাকে না। সুতরাং সকলে মিলে দু‘আ করা জরুরী কোন আমল নয়।
ইমাম নিজে দু‘আ করবেন, যাদের সময় সুযোগ আছে, তারা ইচ্ছা করলে ইমামের সাথে দু‘আয় শরীক হতে পারেন এবং ইমামের সাথে, আগে বা পরে মুনাজাত শেষও করতে পারেন। মুস্তাহাব আমল হিসেবে এটা করতে পারেন। জরুরী মনে করা নাজায়েয। দ্বিতীয়ত চুপে চুপে দু‘আ করা মুস্তাহাব এবং সে দু‘আ কবুল হওয়ার বেশি আশা করা যায়। আর উচ্চৈঃস্বরে দু‘আ করা বিভিন্ন শর্তের সাথে জায়েয আছে মুস্তাহাব নয়, শর্তগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হলো, কোন মুসল্লীর নামায, তিলাওয়াত বা যিকিরে ব্যাঘাত ঘটানো যাবে না। (আহসানুল ফাতওয়া, ৩:৬০-৬৮)
অথচ এ মুনাজাত দ্বারা অন্যান্য মুসল্লীর নামাযে মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি করা হয়।তাদের সূরা ক্বিরা‘আত পড়তে যে কি সমস্যা হয়, সেদিকে কেউ লক্ষ্য করে না; অথচ মসজিদের ইমাম সাহেব ও কমিটির যিম্মাদারী হচ্ছে- এ সব বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা।
এখানে বুঝার জন্য কতিপয় নমুনা পেশ করা হলো মাত্র, যাতে সকলেই আমলী মশকের গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারেন।
(গ) আহলুল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহওয়ালাদের সুহবত ইখতিয়ার করে নিজের ভিতর তাকওয়া, পরহেজগার, আল্লাহর ভয়, ইখলাস ইত্যাদি আত্মার ভালগুণ হাসিল করতে হবে। কারণ, এগুলোর অভাব থাকলে নিজের ইলমের উপর আমল করা কঠিন। আর নিজের মাঝে আমল ও ইখলাস না থাকলে, সেই ইমামের নামায কবুল হয় না। বলাবাহুল্য বে-আমল আলিমের জন্য ইমামতি করা মাকরূহে তাহরীমী। এমনকি তাকে ইমামতিতে নিয়োগ দান বা ইমাম পদে বহাল রাখাও মসজিদ কর্তৃপক্ষের জন্য নিষেধ।
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islami_jindegi