Header Ads

আসমানী কিতাবসমূহের ব্যাখ্যা ব্যাপারে ভ্রান্ত আক্বীদা ভ্রান্ত আক্বীদা-৫: শি‘আদের অনেক সম্প্রদায় বিশ্বাস করে যে, প্রচলিত কুরআন আসল কুরআন নয়, বরং এটি হচ্ছে পরিবর্তিত কুরআন, এর মধ্যে বিভিন্ন ধরণের পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। বিশেষ করে হযরত আলী রাযি. ও শি‘আ সম্প্রদায়ের ইমামদের ব্যাপারে যেসব আয়াত ছিল, হযরত আবু বকর রাযি. ও হযরত উমর রাযি. প্রমুখ সাহাবীগণ যেসব আয়াত কুরআন থেকে বাদ দিয়েছেন। আর আসল কুরআন তাদের দ্বাদশ ইমামের নিকট সংরক্ষিত আছে, যার মধ্যে সতের হাজার আয়াত রয়েছে। উক্ত ইমাম যখন আত্মপ্রকাশ করবেন, তখন তিনি আসল কুরআন সাথে নিয়ে আসবেন। এ আক্বীদা স্পষ্ট কুফরী/আক্বীদা। যে উক্ত আক্বীদা পোষণ করবে, সে কাফির সাব্যস্ত হবে। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন-নিশ্চয়ই আমিই কুরআন নাযিল করেছি এবং আমিই কিয়ামত পর্যন্ত এর সংরক্ষণকারী। [সূত্র:সূরা হিজর, আয়াত ৯।] ভ্রান্ত আক্বীদা-৬: অনেকে মনে করে যে, ইঞ্জিল শরীফ [খৃষ্টানদের ভাষায় বাইবেল] সহীহ আসমানী কিতাব এবং তা এখনো পর্যন্ত অপরিবর্তিত ও অবিকল অবস্থায় রয়েছে। সুতরাং, তা বিশ্বাস করতে বা মানতে কোন অসুবিধা নেই। এ ধরণের আক্বীদা কুফরী। কারণ, কুরআন স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছে যে, পূর্বের সকল আসমানী কিতাব পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছে। [সূত্র : সূরা বাকারাহ, আয়াত ৭৮।] বরং বাইবেলেই এমন অনেক বর্ণনা রয়েছে। যেগুলো বাইবেল বিকৃত হওয়ার স্পষ্ট প্রমাণ বহন করে। এ সম্পর্কে বিস্তারিত ‘বাইবেল সে কুরআন তক’ গ্রন্থে দ্রষ্টব্য। ভ্রান্ত আক্বীদা-৭: জনৈক ইসলামী চিন্তাবিদ লিখেছেন যে, কুরআনে কারীমের চারটি বুনিয়াদী পরিভাষা [দ্বীন, ইবাদত, ইলাহ ও রব] রয়েছে, যার অর্থ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগে সকলের নিকটই স্পষ্ট ছিল, কিন্তু পরবর্তীকালে শব্দগুলো তার ব্যাপক অর্থ হারিয়ে অস্পষ্ট ও সীমিত অর্থে ব্যবহৃত হতে থাকে এবং এ কারণে কুরআনের আসল স্প্রিট নষ্ট হয়ে যায়। ফলে কুরআনী তা‘লীমের তিন চতুর্থাংশেরও বেশি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। [কুরআন কী চার বুনিয়াদী ইস্তিলাহে, পৃষ্ঠা-৮,৯,১০] এটাও মারাত্মক ভ্রান্ত আক্বীদা। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা স্বয়ং কুরআনে কারীমের হেফাযতের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। এর অর্থ এই যে, কুরআনের শব্দ এবং অর্থ উভয়টার হিফাযতের দায়িত্ব তিনি নিয়েছেন। এরূপ কখনো উদ্দেশ্যে হতে পারে না যে, তিনি শুধু বাহ্যিক শব্দগুলোর হেফাযত করবেন, আর অর্থের হেফাযত অন্যের ওপর ন্যস্ত করবেন। ফলে লোকেরা যার যার মন মতো কুরআনের অর্থ করতে থাকবে বা বুঝতে থাকবে। কুরআনের অর্থ ব্যাখ্যা ও বাস্তব নমুনা পেশ করার জন্যই আখিরী নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দুনিয়াতে পাঠানো হয়েছে। তিনি ও দায়িত্ব সঠিকভাবে ও যথাযথরূপে পালন করে গেছেন। তাঁর পরে সেগুলোকে সাহাবীগণ রাযি. হুবহু হিফাযত করেছেন এবং পরবর্তীতে যুগের লোকদের নিকট পৌঁছিয়েছেন। এরূপে তা ধারাবাহিকভাবে কিয়ামত পর্যন্ত আগত মানুষের নিকট সহীহভাবে পৌছাতে থাকবে। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আমার উম্মতের একটি জামা‘আত কিয়ামত পর্যন্ত হকের ওপর কায়িম থাকবে। তাদেরকে হক থেকে কেউ বিচ্যুত করতে পারবে না। [সূত্র: মিশকাত, শরীফ, পৃষ্ঠা ৫৮৪।] সুতরাং, উক্ত চিন্তাবিদের এ চিন্তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও মনগড়া এবং তিনি দেড় হাজার বছর পর উক্ত চারটি শব্দের যে স্বচিন্তাপ্রসূত ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন, তা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত। শরী’আতে এ ধরণের স্বগর্হিত ব্যাখ্যার কোন অবকাশ নেই। প্রশ্ন হয়, যদি ঐ চারটি শব্দের আসল অর্থ বিলুপ্ত হয়ে গিয়ে থাকে তাহলে দেড় হাজার বছর পর চিন্তাবিদ মহোদয় ঐ অর্থগুলো কীভাবে উদ্ধার করতে সক্ষম হলেন? এখন তো আর ওহী আসার কোন পথ নেই। এ প্রশ্নের কোন প্রকার সদুত্তর চিন্তাবিদ মহোদয় ও তার অনুসারীবর্গ কখনো যে দিতে পারেনি, আর পারবেনও না কোনদিন, এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়। ভ্রান্ত আক্বীদা-৮: অনেক লোক এমন আছে, যারা হাদীসের গুরুত্ব অস্বীকার করে। তারা বলে থাকে যে, দ্বীনের ওপর চলার জন্য কুরআন শরীফই যথেষ্ট। হাদীসের কোন প্রয়োজন নেই। কেননা, হাদীস অনেক ভেজালযুক্ত হয়ে গেছে। সুতরাং তার ওপর নির্ভর করা যায় না। তাদের এরূপ ধারনা-বিশ্বাসও কুফরী। এ ধরণের আক্বীদা পোষণকারীরা নিঃসন্দেহে কাফির। কারণ, কুরআনে কারীমের বহু আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা কুরআনের বিধান মুতাবিক চলার জন্য হাদীস বা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কথা ও কাজের অনুকরণ ও অনুসরণ বাধ্যতামূলক করে দিয়েছেন। [সূরা নিসা, আয়াত ৮০, সূরা নাহল, আয়াত ৪৪, সূরা আহযাব, আয়াত ২১] সুতরাং, হাদীস না মানলে মূলতঃ কুরআনকে অস্বীকার করা হয়। তাছাড়া নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করনে, আমি তোমাদের জন্য দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি, যতক্ষণ তোমরা এ দু’টি জিনিসকে ধরে রাখবে, ততক্ষণ তোমরা পথভ্রষ্টই হবে না। সে বস্তু দু’টি হচ্ছে, আল্লাহর কিতাব ও রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নাত। [সূত্র : মুয়াত্তা মালিক। ] অন্য হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের কাউকে যেন আমি এ অবস্থায় না দেখি যে, তার নিকট আমার পক্ষ থেকে কোন আদেশ বা নিষেধ পৌঁছার পর সে এরূপ মন্তব্য করে যে, আমি এসব হাদীস জানি না; আমি তো কুরআনে যা পাব, সে অনুযায়ী আমল করব। [সূত্র: আবু দাউদ শরীফ। খণ্ড-২, পৃষ্ঠা -৬৩২।] ভ্রান্ত আক্বীদা-৯: অনেকে বলে থাকে যে, দ্বীনের ওপর চলার জন্য সরাসরি হাদীসই যথেষ্ট এবং এ জন্য চার মাযহাবের ইমামগণের থেকে কোন ইমামের তাকলীদ করার প্রয়োজন নেই। বরং তারা ইমামের তাকলীদকে শিরক বলে মন্তব্য করে থাকে। তাদের এ কথা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত। সাধারণ মুসলমান কেন, বিজ্ঞ আলেমের জন্যও সরাসরি হাদীস না বুঝে শরী-আতের ওপর চলা দুঃসাধ্য। এ জন্য সকল যামানায়ই বড় বড় মুহাক্কিক আলেমগণও মাযহাব চতুষ্টয়ের মধ্য থেকে কোন এক মাযহাবের ইমামের তাকলীদ বা অনুসরণ করেছেন। আর যারা কোন ইমামের তাকলীদ ব্যতীত নিজে নিজে হাদীস বুঝতে গিয়েছেন, তারা পদে পদে মুশকিলে পড়েছেন। নিজে যা বুঝতে অসুবিধা, তা অন্য বিজ্ঞের থেকে বুঝে নেয়াই শরী‘আতের নির্দেশ। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন, তোমরা যদি না জান, পারদর্শী আলেমগণ থেকে জেনে নাও। [সূত্র: সূরা নাহল, আয়াত ৪৩, সুরাহ আমবিয়া, আয়াত ৭।] উল্লেখ্য, শরী‘আতের দলিল শুধুই হাদীস নয়, বরং মাশায়িখগণের ঐকমত্যে, শরী‘আতের দলিল মোট ৪ প্রকারঃ কুরআন, হাদীস, ইজমা ও কিয়াস। পবিত্র কুরআন ও হাদীসসমূহের মাঝে সমন্বয় সাধন করে সঠিক আমলের পথ নির্ণয়-ই হচ্ছে কিয়াস। এটা কোন সহজসাধ্য ব্যাপার নয়, এর যোগ্যতা যাচাইয়ে ফকীহগণের মধ্যেও কর্মপরিধি জ্ঞাপক শ্রেণীবিন্যাস রয়েছে। মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে যাঁরা কুরআন-হাদীস গবেষণা করে মাসলাক নির্ণয়ের মতো প্রজ্ঞা অর্জন করেছেন এবং সাহাবায়ে কিরামের স্বর্ণযুগের নিকটবর্তী হওয়ায় শরী‘আত সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভে সক্ষম হয়েছিলেন, তাঁরা যেভাবে কুরআন-হাদীস বুঝেছেন, উল্লেখিত আয়াতের ভিত্তিতে তাদের বুঝকেই গ্রহণ করা উম্মতের জন্য নিরাপদ ও আশঙ্কামুক্ত। তাই সবাই যে যার মতো ক্ষুদ্র জ্ঞানে কুরআন হাদীসের উল্টো ব্যাখ্যা করে শরী‘আতকে যাতে মনচাহী তামাশায় পর্যবসিত না করতে পারে, এ জন্য সর্বস্বীকৃত চার মাযহাবের কোন একটির অনুসরণ করা ওয়াজিব বলে উলামায়ে উম্মতের ইজমা [ঐকমত্য] প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ ইজমাকে প্রত্যাখ্যাত করে উল্টো পথে ধাবিত হওয়া কারো জন্য সমীচীন নয়। আল্লাহ তা‘আলা ইজমায়ে উম্মতকে মান্য করা জরুরী বলে ঘোষণা করেছেন। [সূত্র: সূরা নিসা, আয়াত-১১৫।] মাযহাবের গুরুত্বের কারণেই হানাফী বিজ্ঞ ফকীহগণ মাযহার মানা ওয়াজিব বলেছেন। [সূত্র: ইমদাদুল মুফতীণ খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ১৫১, জাওয়াহিরুল ফিকাহ খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ১২৭, কিফায়াতুল মুফতী খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৩২৫।] এছাড়াও আমরা নিজেদের দুনিয়াবি ব্যাপারেও দেখি যে, প্রত্যেক সকল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অন্য বিজ্ঞজন থেকে পরামর্শ গ্রহণ করে থাকি। দুনিয়াবি ব্যাপারে বিজ্ঞজনের তাকলীদ যেমন জরুরী ও যুক্তিগ্রাহ্য, তেমনি আখিরাতের ব্যাপারে ফিকহে পারদর্শীগণের তাকলীদ ওয়াজিব হওয়াই যুক্তিযুক্ত। বলতে কি, যারা তাকলীদকে প্রত্যাখ্যান করে সরাসরি হাদীস বোঝাকে যথেষ্ট বলছেন, তারাও তো সেই হাদীসের ব্যাখ্যা নিশ্চয়ই কোন উসতাদের নিকট শিখে বা শুনে থাকবেন। তাই এ ক্ষেত্রে সাধারণ উসতাদের নিজস্ব ব্যাখ্যার চেয়ে পারদর্শী মুহাক্কিক সাহিবে মাযহাবের গবেষণালব্ধ ব্যাখ্যা অধিক গ্রহণযোগ্যই বটে। সে ক্ষেত্রে তাকলীদকে শিরক বা নাজায়িয বলা বড়ই বিপজ্জনক এবং তা সাধারণ লোকদেরকে উলামায়ে কিরাম থেকে বিচ্ছিন্ন করার এক মহা ষড়যন্ত্র বৈকি। এ ব্যাপারে সকলের সর্তক থাকা খুবই জরুরী। ভ্রান্ত আক্বীদা-১০: ভণ্ড পীরদের মুরিদেরা বলে থাকে যে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম মি’রাজ রজনীতে নব্বই হাজার কালাম এনেছিলেন। এর থেকে মাত্র ত্রিশ হাজার উলামায়ে কিরাম জানেন, আর অবশিষ্ট ষাট হাজার ফকীর, দরবেশ ও খাজাবাবাগণ জানেন। যা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে আলী রাযি., অতঃপর তার থেকে হাসান বসরী রহ., এভাবে ধারাবাহিকরূপে একজনের অন্তর থেকে অন্যজনের অন্তরে প্রবেশ করেছে এবং সেই ধারাবাহিকতা অনুযায়ী শেষ পর্যন্ত তারা এসব জ্ঞান লাভ করেছেন। সেই ষাট হাজার কালামের ব্যাপারে আলেমগণ কোন খবরই রাখেন না। এ জন্য তারা খাজাবাবা, মাযার, ওরশ ইত্যাদির বিরোধিতা করেন। জাহিল মুরিদদের এ আক্বীদা কুফরী আক্বীদা এবং এটা নবী পাক সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ওপর নিছক মিথ্যা অপবাদ। পবিত্র কুরআনে আল্লাহপাক ঘোষণা করেছেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম খোদাপ্রদত্ত কোন হুকুম-আহকাম গোপন করেননি। [সূত্র : সূরা তাকবীর, আয়াত-২৪।] তাছাড়া সেই যামানার লোকেরা উল্লেখিত বিষয় সম্পর্কে হযরত আলী রাযি.-এর নিকট জিজ্ঞেস করলে তিনি তা পরিষ্কারভাবে অস্বীকার করে বলেন, আমাকে এ ধরণের কোন কালাম দেয়া হয়নি। [সূত্র: মিশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা ৩০০। বুখারী শরীফ খণ্ড-১, পৃষ্ঠা -২১।] ভ্রান্ত আক্বীদা-১১: জনৈক ইসলামী চিন্তাবিদ লিখেছেন,দ্বীনের অর্থ হচ্ছে, ইসলামী হুকুমত, আর দ্বীনের মধ্যে আসল হলো জিহাদ। নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত এ সবই ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জিহাদের ট্রেনিং কোর্স মাত্র। [সূত্র: খুতবাত ৩০৭, ৩১৫।] এ ধরণের বহু নতুন কথা ইসলামের নামে লোকেরা সমাজে চালু করেছে। অথচ এ ধরণের নতুন কথা এবং শরী‘আতের নতুন ব্যাখ্যার কোন অবকাশ কুরআন-হাদীসে নেই। এ ধরণের নতুন কথা ও কাজকে শরী‘আতের পরিভাষায় ইলহাদ, তাহরীফ [অর্থগত বিকৃতি] এবং কোন কোনটি ‘বিদ‘আত’ বলে । ইলহাদ তো সুস্পষ্ট কুফর। আর বিদ‘আতের হাকীকত হলো, দ্বীনের মধ্যে নতুন সংযোজন করা এবং নিজে শরী‘আত প্রণেতা সাজা। এটা এত বড় অপরাধ যে, সাধারণত এ জাতীয় গুনাহ থেকে তাওবা নসীব হয় না। (নাউযুবিল্লাহ)। দ্বীনের অর্থ কোন হাদীসে বা তাফসীরে ‘ইসলামী হুকুমত’ বলা হয় নি, বা আরবী কোন অভিধানেও এ অর্থ পাওয়া যায় না। তাছাড়া দ্বীনের এই রাজনৈতিক ব্যাখ্যা মেনে নিলে মারাত্মক এক অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। তা এই যে, আল্লাহ তা‘আলা লক্ষাধিক নবী-রাসূল আ. কে তাঁর মনোনীত দ্বীন কায়িমের লক্ষ্যে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। তাঁদের মধ্য হতে সীমিত সংখ্যক নবী রাসূল আ. ইসলামী রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন। [সূত্র: তাফসীরে মাযহারী খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৩৪৭, আল ইলমু ওয়াল উলামা, পৃষ্ঠা ২৮৬।] অবশিষ্ট সকলেই ইসলামী হুকুমত ও রাষ্ট্র পরিচালনা ছাড়াই আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন কায়িম করেছেন। এমতাবস্থায় দ্বীনের অর্থ যদি ইসলামী হুকুমত ধরা হয়, তাহলে বাধ্য হয়ে এ কথা মেনে নিতে হয় যে, অধিকাংশ নবী-রাসূল আ. দ্বীন কায়িমে কামিয়াব হননি। কত মারাত্মক কথা! তাছাড়া এ কথাও সঠিক নয় যে, দ্বীনের মধ্যে আসল হলো জিহাদ। আর নামায, রোযা ইত্যাদি হচ্ছে সেই জিহাদেরই ট্রেনিং কোর্স। কুরআন, সুন্নাহ ও সকল হক্কানী উলামায়ে কিরামের সিদ্ধান্ত হলো, নামযা, রোযা, হজ্ব, যাকাত এগুলো হলো দ্বীনের বুনিয়াদী ও মৌলিক ইবাদত। আর আল্লাহর জমিনে দ্বীন কায়িম করার প্রচেষ্টার নাম হলো জিহাদ। যেমন, হক্কানী উলামায়ে কিরামের মাধ্যমে দ্বীনের বিভিন্ন বিভাগে সহীহভাবে যেসব মেহনত চলছে, সেসবই জিহাদের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং, জিহাদ মূল লক্ষ্যবস্তু নয়; তবে পরিপূর্ণভাবে দ্বীন কায়িম করার উপায় ও উপলক্ষ হিসেবে ইসলামী হুকুমত কায়িম বা তার প্রচেষ্টা চালানো জরুরী। [সূত্র : কামালাতে আশরাফিয়া, পৃষ্ঠা ৯৯।] মোদ্দাকথা, দ্বীনের মূল লক্ষ্যবস্তু হচ্ছে, আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগী। [সূত্র: সূরা যারিয়াত, আয়াত-৫৬, বুখারী খণ্ড ১, পৃষ্ঠা-৬।] আর আল্লাহর বন্দেগী তথা সহীহ ঈমান ও আমলে সালিহা [যার মধ্যে ইসলামী হুকুমত কায়িমের জন্যে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা শরী‘আত সমর্থিত পদ্ধতিতে চালিয়ে যাওয়াও শামিল]- এর নগদ পুরষ্কার হিসেবে আল্লাহ তা‘আলা মুসলমানদেরকে ইসলামী হুকুমত দান করেন।[সূত্র : সূরা নূর, আয়াত ৫৫।] যেমন-আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তা‘আলা যদি ইসলামী হুকুমত দান করেন, তাহলে মুসলমানগণ সেই ইসলামী হুকুমতের মাধ্যমে নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত ইত্যাদি কায়িম করবে। সম্পূর্ণ হুকুমতকে তারা দ্বীন কায়িমের এবং জনগণের খিদমতের জন্যে কাজে লাগাবে। [সূত্র : সূরা হজ্ব, আয়াত ৪১] আর যদি আল্লাহ তা‘আলা ইসলামী হুকুমত দান না-ও করেন, তবুও মুসলমানদের সাধ্যানুযায়ী দ্বীনের কাজ করে যেতে হবে। ইসলামী হুকুমতের আশায় দ্বীনের কাজ না করে বসে থাকার কোন অনুমতি নেই। এখন আসুন, চিন্তাবিদ মহোদয়ের কথা অনুযায়ী যদি নামায-রোযাকে জিহাদের ট্রেনিং কোর্স হিসেবে মেনে নেয়া হয়, তাহলে প্রশ্ন হয়, ট্রেনিং কোর্স কি সারাজীবন এক ধরণের থাকে না ট্রেনিং শেষ হওয়ার পর এর গুরুত্ব কিছুটা হ্রাস পায়? দ্বিতীয়ত নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত ইত্যাদিকে ট্রেনিং কোর্স ধরা হলে জিহাদের মাধ্যমে ইসলামী হুকুমত কায়িম হওয়ার পর ট্রেনিং কোর্সের প্রয়োজন কি? তৃতীয়ত যাদের উপর কখনো জিহাদ ফরয হয় না, যেমন অন্ধ ও বিভিন্ন শ্রেণীর মাযুর, তাদের ওপর নামায, রোযা ফরয হওয়ার অর্থ কী? সুতরাং উক্ত ধারণা কোনভাবেই সহীহ হতে পারে না। বরং তা দ্বীনের মধ্যে নতুন সংযোজন হওয়ার কারণে সুস্পষ্ট গোমরাহী। এরূপ ধারণা থেকে বেঁচে থাকা প্রত্যেক মুসলমানের ঈমানী দায়িত্ব। ভ্রান্ত আক্বীদা-১২: জনৈক ইসলামী চিন্তাবিদ লিখেছেন যে, কুরআনের তাফসীর করার জন্য একজন অধ্যাপকই যথেষ্ট; এজন্য আলিম হওয়া জরুরী নয়। তার এ দর্শনের ভিত্তিতে বর্তমানে অনেক জেনারেল শিক্ষিত লোকদেরকে [যারা কুরআনের সহীহ তিলাওয়াত জানে না] তাফসীর করতে দেখা যায়। সেই চিন্তাবিদ সাহেব স্বীয় তাফসীরের ভূমিকায় লিখেছেন, আমি তাফসীর লিখতে গিয়ে তাফসীরের পুরাতন ভাণ্ডার থেকে কোন সহযোগিতা নেয়ার চেষ্টা করি নি। বরং এক একটি আয়াত তিলাওয়াত করার পর উক্ত আয়াত সম্পর্কে আমার মন-মস্তিস্কে যে প্রভাব পড়েছে, আমি হুবহু তা তাফসীর হিসেবে লিখে দিয়েছি।[সূত্র : তানকীহাত-১৭৫, ২৯১] উল্লেখিত কথাগুলো শরী‘আতের দৃষ্টিতে মারাত্মক ক্ষতিকর ও ঈমান বিধ্বংসী। এ ধরণের তাফসীরকে বলা হয়, ‘তাফসীর বির রায়’ বা মনগড়া তাফসীর, যা সম্পূর্ণ হারাম। এভাবে পবিত্র কুরআনের তাফসীর করা, লেখা, শ্রবণ করা ও সে তাফসীর পড়া-সবই হারাম। হাদীসে আছে, যে ব্যক্তি নিজের রায় মুতাবিক তাফসীর করবে, সে যেন তার ঠিকানা জাহান্নামের মধ্যে নির্ধারণ করে নেয়। [সূত্র: তিরমিযী শরীফ, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-১২৩ ও মিশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা ৩৫।] সকল হক্কানী উলামায়ে কিরাম এ ব্যাপারে একমত যে কুরআনের তাফসীর করার জন্যে ১৫টি বিষয়ের ওপর দক্ষতা ও বুৎপত্তি অর্জন করা জরুরী। [সূত্র : মিরকাত খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ২৯২, ইতকান, পৃষ্ঠা ১৮১।] যাতে করে আরবী ভাষার ওপর এবং নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সাহাবায়ে কিরাম রাযি. যে তাফসীর ধারা বর্ণনা করেছেন, তা সামনে রেখে তাফসীর বর্ণনা করা যেতে পারে। উক্ত ১৫টি বিষয়ের ব্যাপারে যার দক্ষতা ও পারদর্শিতা নেই, শরী‘আতের দৃষ্টিতে তার জন্যে তাফসীর লেখা বা তাফসীর করার অনুমতিও নেই। এরূপ ব্যক্তির তাফসীরকে ‘তাফসীর বির রায়’ বা মনগড়া তাফসীর বলা হয়। আর ঐ ধরণের তাফসীর দ্বারা মুসলমানদের মাঝে কেবলমাত্র গোমরাহী ছড়ায় এবং এর দ্বারা ইসলামের প্রভূত ক্ষতি সাধিত হয়। এটা নিঃসন্দেহে ঈমান বিধ্বংসী কাজ, যা ক্ষেত্র বিশেষে কুফরী পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। চিন্তাবিদ মহোদয়ের অধ্যাপকগণ ১৫টি বিষয়ের ওপর পারদর্শী হওয়া তো দূরের কথা, এ সবগুলোর নামও জানেন না, অথচ তাঁরা তাফসীর করছেন। ভ্রান্ত আক্বীদা-১৩: অধুনা নব্য শিক্ষিতদের অনেকে ইলমে দ্বীন শিক্ষা করা, নামায-রোযা আদায় করা, পর্দা রক্ষা করা ইত্যাদি ফরয কাজ সমূহকে স্পষ্টভাবে অস্বীকার করে এবং সুদ, ঘুষ, মাতা-পিতার নাফরমানী, গান-বাদ্য, সিনেমা, টিভি ইত্যাদি গুনাহের কাজকে হারাম মনে করে না। বরং এগুলোকে মৌলভীদের বাড়াবাড়ি বলে আখ্যায়িত করে। তাদের জন্যে এসব হারাম কাজসমূহকে বৈধ মনে করা কুফরী। এর দ্বারা তারা ঈমান ও ইসলামের গণ্ডি থেকে বের হয়ে যাবে এবং বাহ্যিকভাবে যতটুকু ইবাদত-বন্দেগী করছে, তা-ও কোন কাজে আসবে না। আদমশুমারীতে তাদেরকে মুসলমান শুমার করলেও আল্লাহর দরবারে তারা মুসলমানরূপে গণ্য হবে না। জেনে রাখুন, সারা জীবন কেউ সক্ষম ফরয পালন না করে এবং গুনাহ করতে থাকে, কিন্তু কোন ফরযকে অস্বীকার না করে বা কোন গুনাহকে হালাল মনে না করে, তাহলে সে ইসলামের গণ্ডি থেকে বের হবে না; বরং সে মু‘মিনই থাকবে। তবে আল্লাহর বিধান লঙ্ঘনের কারণে ফাসিক ও গুনাহগার সাব্যস্ত হবে। কিন্তু যে কোন একটি ফরযকে অস্বীকার করলে কিংবা হারামকে হালাল মনে করলে, তা কুফরী কাজ হবে এবং তাতে সে ইসলামের গণ্ডি থেকে খারিজ হয়ে যাবে। https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islami_jindegi
Blogger দ্বারা পরিচালিত.