ঈমান সংশ্লিষ্ট ১৮টি কাজ-যা অন্য লোকদের সাথে সম্পৃক্ত...!!!
ঈমান সংশ্লিষ্ট ১৮টি কাজ-যা অন্য লোকদের সাথে সম্পৃক্ত
৬০. ন্যায়বিচার করাঃ হযরত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, সাত প্রকার লোককে আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিনে আরশের ছায়ায় স্থান দান করবেন, তন্মধ্যে ন্যায়বিচারক একজন। [সূত্র : বুখারী, খণ্ড-পৃষ্ঠা-৯০]
৬১. জামাআতের সাথে ঐক্যবদ্ধ থাকা ও জিহাদ করাঃ হযরত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ তা‘আলা আমাকে যে পাঁচটি কাজের হুকুম করেছেন, তোমাদের আমি সে পাঁচটি কাজের হুকুম করছি।
ক. ইমামের [ইসলামের রাষ্ট্রপ্রধানের] আদেশ শ্রবণ করা,
খ. সে আদেশ খুশির সাথে পালন করা,
গ. দ্বীন প্রচার করা এবং দ্বীন প্রচারার্থে জিহাদ করা,
ঘ. দ্বীন-ঈমান রক্ষার্থে হিজরত করা বা স্বজন ও স্বদেশ ত্যাগ করা ও
ঙ. খাঁটি মুসলমানদের জামাতের সাথে একতাবদ্ধ হয়ে থাকা অর্থাৎ তাদের আক্বীদা থেকে সামান্যতম ভিন্ন আক্বীদা পোষণ না করা। যে জামাআত ছেড়ে অর্ধ হাত পরিমাণও দুরে সরে পড়েছে, অর্থাৎ নতুন কোন আক্বীদা গ্রহণ করেছে সে ইসলামের রজ্জুকে গর্দান হতে ফেলে দিয়েছে। [সূত্র : তিরমিযী শরীফ, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা -১১৩-১১৪, ও মুসনাদে আহমাদ, খণ্ড -৫ পৃষ্ঠা-৩৩৪।]
জামাতের সাথে থাকার অর্থ এই যে, আক্বায়িদ-আমলের বিষয়ে আহলে হকের পায়রবি করবে। যে সকল হক্কানী আলিম-উলামা ও দ্বীনদার মুসলমান কুরআন ও সুন্নাহ মতে চলেন, তারাই আহলে হক।
৬২. রাষ্ট্র প্রধানের আনুগত্য করাঃ হযরত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আমি তোমাদের অসিয়ত করছি, আল্লাহ তা‘আলার ভয় সবসময় দিলে জাগরূক রেখো এবং ইসলামী রাষ্ট্রপ্রধান ও খলীফা একজন হাবশী গোলাম হলেও তার আদেশ শ্রবণ করে তা পালন করো। [সূত্র: তিরমিযী শরীফ খণ্ড-১, পৃষ্ঠা -৩০০।] ইসলামী রাষ্ট্র প্রধানের আনুগত্য করা জরুরী। কিন্তু রাষ্ট্রপ্রধান যদি ইসলামী নীতি বিরোধী কোন ফরমান জারি করেন, তবে তা মানা জায়িয নয়।
৬৩. দু’পক্ষের কলহ মিটিয়ে দেয়াঃ আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন, কোন দুই দল মুসলমান যদি ঝগড়া-লড়াই করে, তবে তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দাও। এ ক্ষেত্রে যদি এক দল অন্য দলের ওপর অত্যাচার করে, তবে অত্যাচারীদের বিরুদ্ধে লড়াই করো, যে যাবৎ না তারা আল্লাহর দিকে রুজু হয়। [সূত্র :সূরা হুজুরাত, আয়াত ৯।]
৬৪. সৎকাজে পরস্পরে সহায়তা করাঃ আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, সৎকাজ ও পরহেযগারীর বিষয়ে একে অন্যের সহায়তা করা। [সূত্র : সূরা মায়িদা, আয়াত-২।]
আক্ষেপের বিষয়, আজকাল যদি কেউ পরহেযগারী অবলম্বন করে ধর্ম পালন করা শুরু করে তাহলে তার সহায়তা তো দূরের কথা, তাকে উল্টো আরো ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা হয়। আর যদি কেউ কোন ভালো কিছু শুরু করে, তবে তৎসংশ্লিষ্ট সব বোঝা তারই মাথার ওপর ফেলে রাখা হয় এবং সেই সৎকাজকে তার ব্যক্তিগত ভেবে অন্যেরা তার কোন সহযোগিতা করতে চায় না। এটা উচিৎ নয়।
৬৫. ‘আমর বিল মারুফ ও নাহী আনিল মুনকার’ করাঃ আমার বিল মারুফ অর্থ- (নিজে সৎকাজ করার পাশাপাশি) অপরকে সৎকাজের দিকে দাওয়াত দেয়া এবং নাহী আনিল মুনকার অর্থ (নিজে অসৎ কাজ থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি) অন্যকে অসৎকাজে নিষেধ করা।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন- وَلْتَكُنْ مِنْكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ
তোমাদের মধ্যে এমন এক দল লোক হওয়া আবশ্যক, যারা মানুষকে দ্বীনের দিকে ডাকবে। তারা অপরকে সৎকাজের আদেশ করবে এবং অসৎকাজ হতে ফিরিয়ে রাখতে চেষ্টা করবে। (যারা এরূপ হবে) তাদেরই (ইহলৌকিক ও পরলৌকিক) জীবন সার্থক ও সফলকাম। [সূত্র: সূরা আলে ইমরান, আয়াত-১০৪]
৬৬. হদ বা ইসলামী দণ্ডবিধি কায়িম করাঃ হযরত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন- একটি হদ কায়িম করা চল্লিশ দিনের বৃষ্টি অপেক্ষা অধিক ভাল। অর্থাৎ সুসময়ে চল্লিশ বার বৃষ্টি হলে, দেশে যত পরিমাণ বরকত আসে, একটি হদ কায়িম করলে তদাপেক্ষা অধিক বরকত আসে। [সূত্র: ইবনে মাজাহ, পৃষ্ঠা-১৮২।]
৬৭. জিহাদ করা বা দ্বীন জারি করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করাঃ আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন-তোমাদের ওপর জিহাদ ফরজ করা হল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, জিহাদ কিয়ামত পর্যন্ত জারী থাকবে। [সূত্র : আবু দাউদ শরীফ, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-৩৪৩ ও মিশকাত শরীফ খণ্ড-১, পৃষ্ঠা ১৮।]
এ হাদীস দ্বারা বোঝা যায়, আখেরী উম্মতের জন্য শুধু ব্যক্তিগত ইবাদত নাজাতের জন্য যথেষ্ট নয়; বরং আল্লাহর জমিনে দ্বীন কায়িমের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো এবং প্রয়োজনে সশস্ত্র জিহাদে অংশগ্রহণ করে জান বিসর্জন দিতে প্রস্তুত থাকা জরুরী।
৬৮. আমানতদারী ও দিয়ানতদারী রক্ষা করাঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যার মধ্যে আমানতদারী নেই, তার ঈমান নেই। [সূত্র: বাইহাকী শরীফ শুআবুল ঈমান খণ্ড-৪ পৃষ্ঠা-৭৮ ও মিশকাত শরীফ, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা ১৫।]
৬৯. মানুষকে করজে হাসানা দেয়ঃ হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, দান করলে, দশগুণ সওয়াব পাওয়া যায়; আর করজে হাসানা দিলে আঠার গুণ সওয়াব অর্জিত হয়। [সূত্র:ইবনে মাজাহ।পৃষ্ঠা-১৭৫।]
৭০. পাড়া-প্রতিবেশীর সাথে সদ্বব্যবহার করাঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর এবং কিয়ামত দিবসের ওপর ঈমান বজায় রাখতে চায়, সে যেন পাড়া-প্রতিবেশীদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করে এবং তাদেরকে কষ্ট না দেয়। [সূত্র: বুখারী খণ্ড-২, পৃষ্ঠা -৮৮৯, মুসলিম শরীফ খণ্ড-১ পৃষ্ঠা -৫০।]
৭১. কারবারের মধ্যে সততা ও সদাচার অবলম্বন করাঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ব্যবসায়ীদেরকে কিয়ামতের দিন ভীষণ প্রকৃতির ফাসিকরূপে উঠানো হবে। কিন্তু যারা আল্লাহর ভয় দিলে রেখেছে, সদাচারের সাথে বিশুদ্ধ কারবার করেছে এবং সত্য-কথা বলেছে, তারা নাজাত পাবে। [সূত্র : তিরমিযী শরীফ, খণ্ড-১,পৃষ্ঠা-২৩০]
৭২. অর্থ-সম্পদের সদ্ব্যবহার করাঃ আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, অনর্থক অপচয় করো না। [সূত্র: সূরা আরাফ, আয়াত-৩১।] বুখারী শরীফে আছে, হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তোমাদের তিনটি কাজ পছন্দ করেন না। অতিরিক্ত কথা বলা, অর্থের অপব্যবহার করা এবং অতিরিক্ত প্রশ্ন ও তর্ক-বাহাস করা। [সূত্র: বুখারী শরীফ, খণ্ড-পৃষ্ঠা-২০০।]
৭৩. সালামের জবাব দেয়াঃ হযরত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, এক মুসলমানের ওপর অন্য মুসলমানের পাঁচটি হক আছে-ক. সালাম দিলে, জবাব দেয়া। খ. রুগ্ন হলে, সেবা-শুশ্রূষা করা। গ. মৃত্যুবরণ করলে, কাফন-দাফন করা। ঘ. ডাক দিলে বা দাওয়াত দিলে, সে ডাকে সাড়া দেয়া। ঙ. হাঁচি দিলে, জবাব দেয়া। [সূত্র : খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-১৬৬ মুসলিম খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-২১৩।]
৭৪. হাঁচিদাতার জবাব দেয়াঃ হাঁচিদাতার জবাব হচ্ছে, হাঁচিদাতা হাঁচি দিয়ে যখন ‘আল-হামদুলিল্লাহ’ বলে আল্লাহর শুকর আদায় করবে, তখন শ্রবণকারী ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলে তাকে দু‘আ দিবে। হাঁচিদাতার জবাবে এ দু‘আ দানের তাৎপর্য হচ্ছে, মুসলমান ভাইয়ের খুশিতে খুশি হওয়া এবং তার দুঃখে দুঃখিত হওয়া। অর্থাৎ এ দু‘আর মাধ্যমে প্রকাশ করা হচ্ছে যে, তার সামান্যতম খুশিতেও আমরা খুশি।
৭৫. কাউকেও কোনরূপ কষ্ট না দেয়াঃ হযরত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, মুসলমান সেই ব্যক্তি, যে হাতের দ্বারা, মুখের দ্বারা, বা অন্য কোন ব্যবহারের দ্বারা কাউকেও কোনরূপ কষ্ট দেয় না। অর্থাৎ সে কারো কোন ক্ষতি করে না। [সূত্র : বুখারী শরীফ, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-৬।]
৭৬। অবৈধ খেলাধুলা ও রঙ-তামাশা হতে বেঁচে থাকাঃ হযরত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, তিন প্রকার খেলা ব্যতীত যত খেলাধুলা আছে, সবই অনর্থক অর্থাৎ পাপের কাজ। সে তিন প্রকার হচ্ছে, জিহাদের জন্যে তীর নিক্ষেপ শিক্ষা করা, জিহাদের জন্য ঘোড়া দৌড়ানো শিক্ষা করা এবং স্ত্রীর মন রক্ষার্থে তার সাথে কিছু হাসি-রসিকতা করা। [সূত্র : তিরমিযী শরীফ। খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-২৯৩।] আল্লাহ তা‘আলার হুকুম পূর্ণ করার জন্য শক্তি ও সুস্বাস্থ্য¨ জরুরী। সেই নিয়তে কিছু ব্যায়াম, শরীর চর্চা বা জায়িয খেলাধুলা অনর্থক কাজের মধ্যে শামিল নয়।
৭৭। রাস্তা হতে কষ্টদায়ক জিনিস সরিয়ে ফেলাঃ রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক জিনিস সরিয়ে ফেলাকে হাদীস শরীফে ঈমানের সবচেয়ে ছোট শাখা হিসেবে বলা হয়েছে। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে-ঈমানের সত্তরের উপরে শাখা আছে, তন্মধ্যে সর্বনিম্ন শাখা হলো, রাস্তা হতে কষ্টদায়ক জিনিস সরিয়ে ফেলা। [সূত্র : মুসলিম শরীফে, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-৪৭।]
প্রিয় পাঠক! এখন আমরা প্রত্যেক নীরবে একটু চিন্তা করে দেখি,
উল্লেখিত ঈমানের শাখাসমূহের কতগুলো আমাদের হাসিল হয়েছে, আর কতগুলো হাসিল হয়নি। যেগুলো আমাদের হাসিল হয়েছে তার ওপর আল্লাহ তা‘আলার শুকর আদায় করি। আর যা এখনো হাসিল হয়নি, তা হাসিল করার জন্য হক্কানী আলিমগণের পরামর্শ অনুযায়ী প্রচেষ্টা চালিয়ে যাই এবং পূর্ণাঙ্গ ঈমান হাসিল করে আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি অর্জনে তৎপর হই।
ঈমানের শাখা সম্বন্ধে এখানে অতি সংক্ষেপে যৎসামান্য আলোচনা করা হয়েছে। দলিল-প্রমাণসহ বিস্তারিত জানার জন্যে হাকীমুল উম্মত মুজাদ্দিদুল মিল্লাত হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রহ. এর অমর গ্রন্থ ‘ফুরূউল ঈমান’ পাঠ করুন। এছাড়াও হযরত থানভী রহ.-এর ‘হায়াতুল মুসলিমীন, হুকুকুল ইসলাম, বেহেশতী যেওর, সাফাইয়ে মু‘আমালাত’ এবং তাঁর পছন্দনীয় ইমাম গাযালী রহ. এর-‘তা‘লীমুদ্দীন’ প্রভৃতি কিতাব সহীহ ইসলামী যিন্দেগী গঠন ও পরিপূর্ণ ঈমান ও আমল অর্জনের জন্য বড়ই উপকারী।
এ পর্যন্ত সহীহ ঈমান-আকীদার বিবরণ পেশ করা হলো। এ সকল ঈমান-আকীদার মধ্যে মানুষেরা যে পরিবর্তন করে ভ্রান্ত আকীদার জন্ম দিয়েছে, তা এখন বর্ণনা করা হচ্ছে। যাতে যেসব ভ্রান্ত আক্বীদা থেকে বেঁচে থাকা যায়।
৬০. ন্যায়বিচার করাঃ হযরত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, সাত প্রকার লোককে আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিনে আরশের ছায়ায় স্থান দান করবেন, তন্মধ্যে ন্যায়বিচারক একজন। [সূত্র : বুখারী, খণ্ড-পৃষ্ঠা-৯০]
৬১. জামাআতের সাথে ঐক্যবদ্ধ থাকা ও জিহাদ করাঃ হযরত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ তা‘আলা আমাকে যে পাঁচটি কাজের হুকুম করেছেন, তোমাদের আমি সে পাঁচটি কাজের হুকুম করছি।
ক. ইমামের [ইসলামের রাষ্ট্রপ্রধানের] আদেশ শ্রবণ করা,
খ. সে আদেশ খুশির সাথে পালন করা,
গ. দ্বীন প্রচার করা এবং দ্বীন প্রচারার্থে জিহাদ করা,
ঘ. দ্বীন-ঈমান রক্ষার্থে হিজরত করা বা স্বজন ও স্বদেশ ত্যাগ করা ও
ঙ. খাঁটি মুসলমানদের জামাতের সাথে একতাবদ্ধ হয়ে থাকা অর্থাৎ তাদের আক্বীদা থেকে সামান্যতম ভিন্ন আক্বীদা পোষণ না করা। যে জামাআত ছেড়ে অর্ধ হাত পরিমাণও দুরে সরে পড়েছে, অর্থাৎ নতুন কোন আক্বীদা গ্রহণ করেছে সে ইসলামের রজ্জুকে গর্দান হতে ফেলে দিয়েছে। [সূত্র : তিরমিযী শরীফ, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা -১১৩-১১৪, ও মুসনাদে আহমাদ, খণ্ড -৫ পৃষ্ঠা-৩৩৪।]
জামাতের সাথে থাকার অর্থ এই যে, আক্বায়িদ-আমলের বিষয়ে আহলে হকের পায়রবি করবে। যে সকল হক্কানী আলিম-উলামা ও দ্বীনদার মুসলমান কুরআন ও সুন্নাহ মতে চলেন, তারাই আহলে হক।
৬২. রাষ্ট্র প্রধানের আনুগত্য করাঃ হযরত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আমি তোমাদের অসিয়ত করছি, আল্লাহ তা‘আলার ভয় সবসময় দিলে জাগরূক রেখো এবং ইসলামী রাষ্ট্রপ্রধান ও খলীফা একজন হাবশী গোলাম হলেও তার আদেশ শ্রবণ করে তা পালন করো। [সূত্র: তিরমিযী শরীফ খণ্ড-১, পৃষ্ঠা -৩০০।] ইসলামী রাষ্ট্র প্রধানের আনুগত্য করা জরুরী। কিন্তু রাষ্ট্রপ্রধান যদি ইসলামী নীতি বিরোধী কোন ফরমান জারি করেন, তবে তা মানা জায়িয নয়।
৬৩. দু’পক্ষের কলহ মিটিয়ে দেয়াঃ আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন, কোন দুই দল মুসলমান যদি ঝগড়া-লড়াই করে, তবে তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দাও। এ ক্ষেত্রে যদি এক দল অন্য দলের ওপর অত্যাচার করে, তবে অত্যাচারীদের বিরুদ্ধে লড়াই করো, যে যাবৎ না তারা আল্লাহর দিকে রুজু হয়। [সূত্র :সূরা হুজুরাত, আয়াত ৯।]
৬৪. সৎকাজে পরস্পরে সহায়তা করাঃ আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, সৎকাজ ও পরহেযগারীর বিষয়ে একে অন্যের সহায়তা করা। [সূত্র : সূরা মায়িদা, আয়াত-২।]
আক্ষেপের বিষয়, আজকাল যদি কেউ পরহেযগারী অবলম্বন করে ধর্ম পালন করা শুরু করে তাহলে তার সহায়তা তো দূরের কথা, তাকে উল্টো আরো ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা হয়। আর যদি কেউ কোন ভালো কিছু শুরু করে, তবে তৎসংশ্লিষ্ট সব বোঝা তারই মাথার ওপর ফেলে রাখা হয় এবং সেই সৎকাজকে তার ব্যক্তিগত ভেবে অন্যেরা তার কোন সহযোগিতা করতে চায় না। এটা উচিৎ নয়।
৬৫. ‘আমর বিল মারুফ ও নাহী আনিল মুনকার’ করাঃ আমার বিল মারুফ অর্থ- (নিজে সৎকাজ করার পাশাপাশি) অপরকে সৎকাজের দিকে দাওয়াত দেয়া এবং নাহী আনিল মুনকার অর্থ (নিজে অসৎ কাজ থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি) অন্যকে অসৎকাজে নিষেধ করা।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন- وَلْتَكُنْ مِنْكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ
তোমাদের মধ্যে এমন এক দল লোক হওয়া আবশ্যক, যারা মানুষকে দ্বীনের দিকে ডাকবে। তারা অপরকে সৎকাজের আদেশ করবে এবং অসৎকাজ হতে ফিরিয়ে রাখতে চেষ্টা করবে। (যারা এরূপ হবে) তাদেরই (ইহলৌকিক ও পরলৌকিক) জীবন সার্থক ও সফলকাম। [সূত্র: সূরা আলে ইমরান, আয়াত-১০৪]
৬৬. হদ বা ইসলামী দণ্ডবিধি কায়িম করাঃ হযরত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন- একটি হদ কায়িম করা চল্লিশ দিনের বৃষ্টি অপেক্ষা অধিক ভাল। অর্থাৎ সুসময়ে চল্লিশ বার বৃষ্টি হলে, দেশে যত পরিমাণ বরকত আসে, একটি হদ কায়িম করলে তদাপেক্ষা অধিক বরকত আসে। [সূত্র: ইবনে মাজাহ, পৃষ্ঠা-১৮২।]
৬৭. জিহাদ করা বা দ্বীন জারি করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করাঃ আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন-তোমাদের ওপর জিহাদ ফরজ করা হল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, জিহাদ কিয়ামত পর্যন্ত জারী থাকবে। [সূত্র : আবু দাউদ শরীফ, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-৩৪৩ ও মিশকাত শরীফ খণ্ড-১, পৃষ্ঠা ১৮।]
এ হাদীস দ্বারা বোঝা যায়, আখেরী উম্মতের জন্য শুধু ব্যক্তিগত ইবাদত নাজাতের জন্য যথেষ্ট নয়; বরং আল্লাহর জমিনে দ্বীন কায়িমের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো এবং প্রয়োজনে সশস্ত্র জিহাদে অংশগ্রহণ করে জান বিসর্জন দিতে প্রস্তুত থাকা জরুরী।
৬৮. আমানতদারী ও দিয়ানতদারী রক্ষা করাঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যার মধ্যে আমানতদারী নেই, তার ঈমান নেই। [সূত্র: বাইহাকী শরীফ শুআবুল ঈমান খণ্ড-৪ পৃষ্ঠা-৭৮ ও মিশকাত শরীফ, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা ১৫।]
৬৯. মানুষকে করজে হাসানা দেয়ঃ হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, দান করলে, দশগুণ সওয়াব পাওয়া যায়; আর করজে হাসানা দিলে আঠার গুণ সওয়াব অর্জিত হয়। [সূত্র:ইবনে মাজাহ।পৃষ্ঠা-১৭৫।]
৭০. পাড়া-প্রতিবেশীর সাথে সদ্বব্যবহার করাঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর এবং কিয়ামত দিবসের ওপর ঈমান বজায় রাখতে চায়, সে যেন পাড়া-প্রতিবেশীদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করে এবং তাদেরকে কষ্ট না দেয়। [সূত্র: বুখারী খণ্ড-২, পৃষ্ঠা -৮৮৯, মুসলিম শরীফ খণ্ড-১ পৃষ্ঠা -৫০।]
৭১. কারবারের মধ্যে সততা ও সদাচার অবলম্বন করাঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ব্যবসায়ীদেরকে কিয়ামতের দিন ভীষণ প্রকৃতির ফাসিকরূপে উঠানো হবে। কিন্তু যারা আল্লাহর ভয় দিলে রেখেছে, সদাচারের সাথে বিশুদ্ধ কারবার করেছে এবং সত্য-কথা বলেছে, তারা নাজাত পাবে। [সূত্র : তিরমিযী শরীফ, খণ্ড-১,পৃষ্ঠা-২৩০]
৭২. অর্থ-সম্পদের সদ্ব্যবহার করাঃ আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, অনর্থক অপচয় করো না। [সূত্র: সূরা আরাফ, আয়াত-৩১।] বুখারী শরীফে আছে, হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তোমাদের তিনটি কাজ পছন্দ করেন না। অতিরিক্ত কথা বলা, অর্থের অপব্যবহার করা এবং অতিরিক্ত প্রশ্ন ও তর্ক-বাহাস করা। [সূত্র: বুখারী শরীফ, খণ্ড-পৃষ্ঠা-২০০।]
৭৩. সালামের জবাব দেয়াঃ হযরত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, এক মুসলমানের ওপর অন্য মুসলমানের পাঁচটি হক আছে-ক. সালাম দিলে, জবাব দেয়া। খ. রুগ্ন হলে, সেবা-শুশ্রূষা করা। গ. মৃত্যুবরণ করলে, কাফন-দাফন করা। ঘ. ডাক দিলে বা দাওয়াত দিলে, সে ডাকে সাড়া দেয়া। ঙ. হাঁচি দিলে, জবাব দেয়া। [সূত্র : খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-১৬৬ মুসলিম খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-২১৩।]
৭৪. হাঁচিদাতার জবাব দেয়াঃ হাঁচিদাতার জবাব হচ্ছে, হাঁচিদাতা হাঁচি দিয়ে যখন ‘আল-হামদুলিল্লাহ’ বলে আল্লাহর শুকর আদায় করবে, তখন শ্রবণকারী ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলে তাকে দু‘আ দিবে। হাঁচিদাতার জবাবে এ দু‘আ দানের তাৎপর্য হচ্ছে, মুসলমান ভাইয়ের খুশিতে খুশি হওয়া এবং তার দুঃখে দুঃখিত হওয়া। অর্থাৎ এ দু‘আর মাধ্যমে প্রকাশ করা হচ্ছে যে, তার সামান্যতম খুশিতেও আমরা খুশি।
৭৫. কাউকেও কোনরূপ কষ্ট না দেয়াঃ হযরত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, মুসলমান সেই ব্যক্তি, যে হাতের দ্বারা, মুখের দ্বারা, বা অন্য কোন ব্যবহারের দ্বারা কাউকেও কোনরূপ কষ্ট দেয় না। অর্থাৎ সে কারো কোন ক্ষতি করে না। [সূত্র : বুখারী শরীফ, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-৬।]
৭৬। অবৈধ খেলাধুলা ও রঙ-তামাশা হতে বেঁচে থাকাঃ হযরত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, তিন প্রকার খেলা ব্যতীত যত খেলাধুলা আছে, সবই অনর্থক অর্থাৎ পাপের কাজ। সে তিন প্রকার হচ্ছে, জিহাদের জন্যে তীর নিক্ষেপ শিক্ষা করা, জিহাদের জন্য ঘোড়া দৌড়ানো শিক্ষা করা এবং স্ত্রীর মন রক্ষার্থে তার সাথে কিছু হাসি-রসিকতা করা। [সূত্র : তিরমিযী শরীফ। খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-২৯৩।] আল্লাহ তা‘আলার হুকুম পূর্ণ করার জন্য শক্তি ও সুস্বাস্থ্য¨ জরুরী। সেই নিয়তে কিছু ব্যায়াম, শরীর চর্চা বা জায়িয খেলাধুলা অনর্থক কাজের মধ্যে শামিল নয়।
৭৭। রাস্তা হতে কষ্টদায়ক জিনিস সরিয়ে ফেলাঃ রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক জিনিস সরিয়ে ফেলাকে হাদীস শরীফে ঈমানের সবচেয়ে ছোট শাখা হিসেবে বলা হয়েছে। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে-ঈমানের সত্তরের উপরে শাখা আছে, তন্মধ্যে সর্বনিম্ন শাখা হলো, রাস্তা হতে কষ্টদায়ক জিনিস সরিয়ে ফেলা। [সূত্র : মুসলিম শরীফে, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-৪৭।]
প্রিয় পাঠক! এখন আমরা প্রত্যেক নীরবে একটু চিন্তা করে দেখি,
উল্লেখিত ঈমানের শাখাসমূহের কতগুলো আমাদের হাসিল হয়েছে, আর কতগুলো হাসিল হয়নি। যেগুলো আমাদের হাসিল হয়েছে তার ওপর আল্লাহ তা‘আলার শুকর আদায় করি। আর যা এখনো হাসিল হয়নি, তা হাসিল করার জন্য হক্কানী আলিমগণের পরামর্শ অনুযায়ী প্রচেষ্টা চালিয়ে যাই এবং পূর্ণাঙ্গ ঈমান হাসিল করে আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি অর্জনে তৎপর হই।
ঈমানের শাখা সম্বন্ধে এখানে অতি সংক্ষেপে যৎসামান্য আলোচনা করা হয়েছে। দলিল-প্রমাণসহ বিস্তারিত জানার জন্যে হাকীমুল উম্মত মুজাদ্দিদুল মিল্লাত হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রহ. এর অমর গ্রন্থ ‘ফুরূউল ঈমান’ পাঠ করুন। এছাড়াও হযরত থানভী রহ.-এর ‘হায়াতুল মুসলিমীন, হুকুকুল ইসলাম, বেহেশতী যেওর, সাফাইয়ে মু‘আমালাত’ এবং তাঁর পছন্দনীয় ইমাম গাযালী রহ. এর-‘তা‘লীমুদ্দীন’ প্রভৃতি কিতাব সহীহ ইসলামী যিন্দেগী গঠন ও পরিপূর্ণ ঈমান ও আমল অর্জনের জন্য বড়ই উপকারী।
এ পর্যন্ত সহীহ ঈমান-আকীদার বিবরণ পেশ করা হলো। এ সকল ঈমান-আকীদার মধ্যে মানুষেরা যে পরিবর্তন করে ভ্রান্ত আকীদার জন্ম দিয়েছে, তা এখন বর্ণনা করা হচ্ছে। যাতে যেসব ভ্রান্ত আক্বীদা থেকে বেঁচে থাকা যায়।