Header Ads

ঈমানের মুফাসসাল’-এর ব্যাখ্যা সহকারে পেশ করা হচ্ছে...!!!

ঈমানের সংজ্ঞাঃ

আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লাম যা হাসিল করেছেন এবং অকাট্য দলিল দ্বারা যা প্রমাণিত হয়েছে তার কোন একটি বাদ না দিয়ে সবগুলোকে মনে-প্রাণে বদ্ধমূলভাবে বিশ্বাস করা।

আল্লাহ তা‘আলার আদেশ-নিষেধ সঠিকভাবে এবং পূর্ণভাবে আমল করার মাধ্যমে ঈমান কামেল বা শক্তিশালী হয়। আর আল্লাহর আদেশ-নিষেধ পালন ত্রুটি করলে ঈমানের নূর নষ্ট হয়ে যায়। এ অবস্থা দীর্ঘদিন চলতে থাকলে এবং তাওবা না করলে (আল্লাহ না করুন) ঈমান নষ্ট হয়ে যেতে পারে। 

এখান থেকে ঈমানে মুফাসসালে বর্ণিত বিষয়গুলো ব্যাখ্যা সহকারে পেশ করা হচ্ছে। 


১.আল্লাহ তা‘আলার উপর ঈমান

 আল্লাহ তা‘আলার উপর ঈমান আনার অর্থ এ কথা বিশ্বাস করা যে, আল্লাহ এক, অদ্বিতীয় ও অতুলনীয়। তাঁর কোন প্রকার অংশ বা অংশীদার বা শরীক নেই, তাঁর কোন কিছুর অভাব নেই। তিনিই সকলের সব অভাব পূরণকারী। তিনি কারো পিতা নন, পুত্রও নন, তাঁর সমতুল্য কেউ নেই।একমাত্র তিনিই সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা, রক্ষাকর্তা ও পালনকর্তা।কোন জ্ঞান বা চক্ষু আল্লাহ তা‘আলাকে আয়ত্ব করতে পারে না।আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া আর কোন মা’বুদ নাই। তিনিই একমাত্র ইবাদত পাওয়ার যোগ্য।

সারকথা, আল্লাহ তা‘আলার বিষয়ে তিনটি কথা অবশ্যই মানতে হবে। 

ক. তিনি এক, অদ্বিতীয় ও অতুলনীয়। তাঁর কোন শরিক নেই। সৃষ্টিজীবের সাথে তাঁর কোন তুলনা হয় না। 

খ. তাঁর অনেকগুলো অনাদি-অনন্ত সিফাত বা গুণ আছে, সেগুলো একমাত্র তারই জন্যই নির্ধারিত।
সেসব গুনের মধ্যে অন্য কেউ শরীক নেই। 
যেমন, তিনিই সৃষ্টিকর্তা, রিযিকদাতা, হায়াত-মওতদাতা, বিধানদাতা, গায়েব সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবগত। তিনি চিরঞ্জীব, তাঁর মৃত্যু নেই। 

অন্য সব কিছুই ক্ষয়শীল ও ধ্বংসশীল, কিন্তু তাঁর ক্ষয়ও নেই, ধ্বংসও নেই। সবকিছুর উপর তাঁর আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত। সবকিছুর উপরই তাঁর ক্ষমতা চলে। আল্লাহ তা‘আলা কারো মুখাপেক্ষী নন, সব-ই তার মুখাপেক্ষী। তিনি সর্বশক্তিমান। তিনি আগুনকে পানি এবং পানিকে আগুন করতে পারেন। এই যে লক্ষ লক্ষ বছর ধরে আকাশ, বাতাস, চন্দ্র, সূর্য ইত্যাদি বিদ্যমান, তিনি হুকুম করলে মুহূর্তের মধ্যে এসব নিস্তনাবুদ হয়ে যাবে। তিনি সর্বজ্ঞ, তিনি জানেন না-এমন কিছুই নেই। 

মনের মধ্যে যে ভাবনা বা কল্পনা উদয় হয়, তাও জানেন। তিনি সবকিছুই দেখছেন। সবকিছুই শুনছেন। মৃদু আওয়াজ এমনকি ক্ষীণ থেকে ক্ষীণ আওয়াজও তিনি শুনেন। গায়েবের বিষয় একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাই জানেন। তিনি ছাড়া আর কেউ গায়েব জানেন না। এমনকি নবী-রসূল এবং অলীও গায়েব জানেন না। আল্লাহ তা‘আলাই একমাত্র হাযির-নাযির। তিনি ছাড়া আর কেউ হাযির-নাযির নন। এমনকি নবী-রসূল এবং অলীও। তিনি যা ইচ্ছা, তা-ই করতে পারেন। কোন পীর, ওলী, পয়গম্বর বা ফেরেশতা তাঁর ইচ্ছাকে রদ ও প্রতিহত করতে পারে না। তিনি আদেশ ও নিষেধ জারি করেন। তিনিই একমাত্র বন্দেগীর উপযুক্ত। তিনি ব্যতীত অন্য কেউ ইবাদতের যোগ্য হতে পারে না। অন্য কারো ইবাদত বন্দেগী করা যায় না । তাঁর কোন অংশীদার কিংবা সহকর্মী বা উযীর-নাযীর নেই। তিনি একক কর্তৃত্বের অধিকারী। 

তিনিই সর্বোপরি বাদশাহ, রাজাধিরাজ সবই তাঁর বান্দা ও গোলাম। তিনি বান্দাদের উপর বড়ই মেহেরবান। তিনি সব দোষ-ত্রুটি হতে পবিত্র। তাঁর মাঝে আদৌ কোন রকমের দোষ-ত্রুটি নেই। তাঁর ক্রিয়া-কর্ম, আদেশ-নিষেধ সবই ভাল ও মঙ্গলময়, কোন একটিতেও বিন্দুমাত্র অন্যায় বা দোষ নেই। তিনিই বিপদ-আপদ দেন এবং বিপদ-আপদ হতে উদ্ধার করেন, অন্য কেউ কোন প্রকার বিপদ-আপদ হতে মুক্তি দিতে পারে না। প্রকৃত সম্মান ও মর্যাদা তাঁরই। তিনিই সকল সম্মান ও মর্যাদার অধিপতি। তিনিই প্রকৃত মহান। একমাত্র তিনিই নিজেকে নিজে বড় বলতে পারেন। এতদ্ব্যতীত অন্য কারো এ রকম বলার ক্ষমতা ও অধিকার নেই। তিনিই সব কিছু সৃষ্টি করেছেন এবং করবেন। তিনি এমন দয়ালু যে, দয়া করে অনেকের গুনাহ মাফ করে দেন। তিনি ক্ষমাশীল। তিনি অত্যন্ত পরাক্রমশালী। তাঁর প্রভাব ও প্রভুত্ব সকলের ওপর, কিন্তু তাঁর ওপর কারো প্রভাব বা প্রভুত্ব চলে না। তিনি বড়ই দাতা। সমস্ত জিনিসের ও যাবতীয় চেতন-অচেতন পদার্থের আহার তিনি দান করেন। তিনিই রুযির মালিক। রুযী কমানো-বাড়ানো তাঁরই হাতে। তিনি যার রুযী কমাতে ইচ্ছা করেন, তার রুযী কমিয়ে দেন। যার রুযী বাড়াতে ইচ্ছা করেন, তার বাড়িয়ে দেন। যে কাউকে উচ্চপদস্থ বা অপদস্থ করার ক্ষমতা তাঁরই হাতে। 

তিনি যাকে ইচ্ছা সম্মান দান করেন, আবার যাকে ইচ্ছা অপমান করেন। এসব তাঁরই ক্ষমতায়, তাঁরই ইখতিয়ারে। অন্য কারো এতে কোন রকম ক্ষমতা বা অধিকার নেই। তিনি প্রত্যেকের যোগ্যতা অনুসারে যার জন্য যা ভালো মনে করেন, তার জন্য তাই ব্যবস্থা করেন। তাতে কারো কোন প্রকার প্রতিবাদ করার অধিকার নেই। তিনি ন্যায় পরায়ণ, তাঁর কোন কাজেই অন্যায় বা অত্যাচারের লেশমাত্র নেই। তিনি বড়ই সহিষ্ণু, অনেক কিছু সহ্য করেন। কত পাপিষ্ঠ তাঁর নাফরমানী করছে, তাঁর উপর কত রকম দোষারোপ এবং তাঁর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ পর্যন্ত করছে, তারপরও তিনি তাদের রিযিক জারি রেখেছেন। তিনি এমনই কদরশিনাস-গুণগ্রাহী এবং উদার যে, তার আদৌ কোন প্রকার প্রয়োজন না থাকা সত্বেও মানুষ তার ইবাদত-বন্দেগী করলে এবং তাঁর আদেশ পালন করলে, তিনি তাঁর বড়ই কদর করেন এবং সন্তুষ্ট হয়ে আশাতীতরূপে ফল দান করেন। তিনি এমনই মেহেরবান ও দয়ালু যে,তার নিকট দরখাস্ত করলে (অর্থাৎ,দু’আ করলে) তিনি তা মঞ্জুর করেন। তাঁর ভাণ্ডার অফুরন্ত, তাঁর ভাণ্ডারে কোন কিছুরই অভাব নেই। তিনি অনাদি-অনন্তকালব্যাপী সকল জীব-জন্তু ও প্রাণী জগতের আহার দিয়ে আসছেন। তিনি জীবন দান করছেন, ধন-রত্ন দান করছেন, বিদ্যা-বুদ্ধি দান করছেন। অধিকন্তু আখেরাতেও অগণিত সাওয়াব ও নেয়ামত দান করবেন। কিন্তু তাঁর ভাণ্ডার তবুও বিন্দুমাত্র কমেনি বা কমবে না। 

তার কোন কাজই হিকমত ও মঙ্গল ছাড়া নয়। কিন্তু সব বিষয় সকলের বুঝে আসে না। তাই নির্বুদ্ধিতাবশত, কখনো না বুঝে দিলে বা মুখে প্রতিবাদ করে ঈমান নষ্ট করা উচিত নয়। তিনিই সব কর্ম সমাধানকারী। বান্দা চেষ্টা করবে, কিন্তু সে কর্ম সমাধানের ভার তাঁরই কুদরতী হাতে ন্যস্ত। তিনি সব কিছু সৃষ্টি করেছেন এবং কিয়ামতের দিন পুনর্বার সকলকে জীবিত করবেন। তিনিই জীবন দান করেন এবং মৃত্যু দেন। 

তাঁর হাকীকত বা স্বরূপ এবং তিনি যে কি রকম অসীম, তা কারো বোঝার ক্ষমতা নেই। কেবলমাত্র তাঁর সিফাত অর্থাৎ, গুণাবলী ও তাঁর কার্যাবলীর দ্বারাই তাঁকে আমরা চিনতে পারি। মানুষ পাপ করে খাঁটিভাবে তাওবা করে, তবে তিনি তা কবুল করেন। যে শাস্তির উপযুক্ত, তাকে তিনি শাস্তি দেন। তিনি হিদায়াত দেন। তাঁর নিদ্রা নেই। সমস্ত বিশ্বজগতের রক্ষণাবেক্ষণ ও তত্ত্বাবধানে তিনি বিন্দুমাত্রও ক্লান্ত হন না। তিনিই সমস্ত বিশ্বের রক্ষক। 

এ পর্যন্ত আল্লাহ তা‘আলাকে চিনবার জন্যে তাঁর কতগুলো সিফাতে কামালিয়া অর্থাৎ, মহৎ গুণাবলীর বর্ণনা দেয়া হলো। 

এতদ্ব্যতীত যত মহত গুণ আছে, আল্লাহ তা‘আলাকে তৎসমুদয় দ্বারা বিভূষিত। 

ফলকথা এই যে, সৎ ও মহৎ যত গুণ আছে, অনাদিকাল যাবৎ সে সব আল্লাহ তা‘আলার মধ্যে আছে এবং চিরকাল থাকবে। কিন্তু কোন দোষ-ত্রুটির লেশমাত্রও তাঁর মধ্যে নেই। আল্লাহ তা‘আলার গুণ সম্বন্ধে কুরআন মজীদে এবং হাদীস শরীফের কোন কোন জায়গায় এরূপ উল্লেখ আছে যে, তিনি আশ্চার্যান্বিত হন, হাসেন, কথা বলেন, দেখেন, শুনেন, সিংহাসনাসীন হন, নিম্ন আসমানে অবতরণ করেন। তাঁর হাত, পা, মুখ ইত্যাদি আছে। এসব ব্যাপারে কখনো বিভ্রান্তিতে পড়তে বা তর্ক-বিতর্ক করতে নেই। সহজ-সরলভাবে আমাদের আক্বীদা ও একীন এই রাখা উচিত যে, আমাদের বা অন্য কোন সৃষ্টি জীবের তাঁর উঠা-বসা বা হাত-পা তো নিশ্চয়ই নয়, তবে কেমন? তা আমাদের জ্ঞানের বাইরে। 

প্রিয় ভ্রাতৃবৃন্দ!সাবধান! সাবধান!! সাবধান!!! শয়তান যেন ধোঁকা দিয়ে গোলকধাঁধায় না ফেলতে পারে। একীনী আক্বীদা ও অটল বিশ্বাস রাখবেন যে, আমাদের বা অন্য কোন সৃষ্টিজীবের সাদৃশ্য হতে আল্লাহ তা‘আলা সম্পূর্ণ পবিত্র ও মহান। এ দুনিয়াতে জাগ্রত অবস্থায় চর্ম চোখে কেউ আল্লাহ তা‘আলাকে দেখতে পারেনি। কখনো পারবেও না। তবে জান্নাতে গিয়ে জান্নাতীরা আল্লাহ পাকের দীদার লাভ করবে। জান্নাতে এটাই সর্বোৎকৃষ্ট নেয়ামত হবে। 

গ. একমাত্র তিনিই মাখলুকের ইবাদত-বন্দেগী পাওয়ার উপযুক্ত। আর কেউ ইবাদত পাওয়ার উপযুক্ত নয়। আল্লাহ তা‘আলার উপর ঈমান আনার অর্থ শুধু আল্লাহ তা‘আলার অস্তিত্ব স্বীকার করা নয় বরং অস্তিত্ব স্বীকার করার সাথে সাথে তাঁর উপরোক্ত গুণবাচক কথাগুলো স্বীকার করাও জরুরী। নতুবা আল্লাহপাকের উপর সম্পূর্ণরূপে ঈমান আনা হবে না এবং সে ঈমান গ্রহণযোগ্যও হবে না। 

আল্লাহর সিফাতী বা গুণবাচক নাম আল্লাহর সিফাতী বা গুণবাচক ৯৯টি নাম

১. الرحمن অত্যন্ত দয়াবান।
২. الرحيم পরম দয়ালু। 
৩. الملك অধিপতি।
৪. القدوس পবিত্র।
৫. السلام শান্তিময়।
৬. المؤمن নিরাপত্তা বিধায়ক।
৭. المهيمن রক্ষক। ৮. العزيز পরাক্রমশালী।
৯. الجبار শক্তি প্রয়োগে সংশোধনকারী, প্রবল।
১০. المتكبر মহিমান্বিত। 
১১. الخالق স্রষ্টা।
১২. البارئ উদ্ভাবনকর্তা, ত্রুটিহীন স্রষ্টা।
১৩. المصور আকৃতিদাতা।
১৪. الغفار পরম ক্ষমাশীল।
১৫. القهار মহা পরাক্রান্ত।
১৬. الوهاب মহা দাতা।
১৭. الرزاق রিযিকদাতা।
১৮. الفتاح মহা বিজয়ী।
১৯. العليم মহাজ্ঞানী।
২০. القابض সংকোচনকারী।
২১. الباسط সম্প্রসারণকারী।
২২. الخافض পতনকারী, অবনমনকারী।
২৩. الرافع উন্নয়নকারী।
২৫. المذل অপমানকারী।
২৬. السميع সর্বশ্রোতা।
২৭. البصير সম্যক দ্রষ্টা।
২৮. الحكم মীমাংসাকারী।
২৯. العدل ন্যায়নিষ্ঠ।
৩০. اللطيف সুক্ষ্মদর্শী।
৩১. الخبير সর্বজ্ঞ।
৩২. الحليم ধৈর্যশীল।
৩৩. العظيم মহিমাময়।
৩৪. الغفور পরম ক্ষমাকারী।
৩৫. الشكور গুণগ্রাহী।
৩৬. العلي সর্বোচ্চ সমাসীন, অতি উচ্চ।
৩৭. الكبير সুমহান।
৩৮. الحفيظ মহারক্ষক।
৩৯. المقيت আহার্যদাতা।
৪০. الحسيب হিসাব গ্রহণকারী।
৪১. الجليل মহিমান্বিত।
৪২. الكريم অনুগ্রহকারী।
৪৩. الرقيب পর্যবেক্ষণকারী।
৪৪. المجيب কবুলকারী।
৪৫. الواسع সর্বব্যাপী।
৪৬. الحكيم প্রজ্ঞাময়।
৪৭. الودود প্রেমময়।
৪৮. المجيد গৌরবময়।
৪৯. الباعث পুনরুত্থানকারী।
৫০. الشهيد প্রত্যক্ষকারী।
৫১. الحق সত্যপ্রকাশক, হক।
৫২. الوكيل কর্ম বিধায়ক।
৫৩. القوى শক্তিশালী।
৫৪. المتين দৃঢ়তাসম্পন্ন।
৫৫. الولي অভিভাবক।
৫৬. الحميد প্রশংসিত।
৫৭. المحصى হিসাব গ্রহণকারী।
৫৮. المبدئ আদি স্রষ্টা।
৫৯. المعيد পুন:সৃষ্টিকারী।
৬০. المحيي জীবনদাতা।
৬১. المميت মৃত্যুদাতা।
৬২. الحي চিরঞ্জীব।
৬৩. القيوم স্বপ্রতিষ্ঠ সংরক্ষণকারী।
৬৪. الواجد প্রাপক, তিনি যা চান তাই পান।
৬৫. الماجد মহান। ৬৬. الواحد একক।
৬৭. الاحد এক অদ্বিতীয়। ৬৮. الصمد অনপেক্ষ।
৬৯. القادر শক্তিশালী। ৭০. مقتدر ক্ষমতাশালী।
৭১. المقدم অগ্রবর্তীকারী।
৭২.المؤخر পশ্চাদবর্তীকারী।
৭৩. الأول সর্বপ্রথম অর্থাৎ অনাদি।
৭৪. الآخر শেষ অর্থাৎ অনন্ত।
৭৫. الظاهر প্রকাশ্য।
৭৬.الباطن গুপ্তসত্তা।
৭৭. الوالي অধিপতি।
৭৮. المتعال সর্বোচ্চ মর্যাদাবান।
৭৯. البر কৃপাময়।
৮০. التواب তওবা কবুলকারী।
৮১. المنتقم শাস্তিদাতা।
৮২. العفو ক্ষমাকারী।
৮৩. الرؤوف দয়ার্দ্র।
৮৪. مالك الملك সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী।
৮৫. ذو الجلال و الإكرام মহিমাময় মহানুভব।
৮৬. المقسط ন্যায়পরায়ণ।
৮৭. الجامع একত্রকরণকারী।
৮৮. الغني অভাবমুক্ত।
৮৯. المغني অভাব মোচনকারী।
৯০. المانع প্রতিরোধকারী।
৯১. الضار ক্ষতির ক্ষমতাকারী।
৯২. النافع কল্যাণকারী।
৯৩. النور জ্যোতির্ময়।
৯৪. الهادي পথ প্রদর্শক।
৯৫. البديع নমুনাবিহীন সৃষ্টিকারী।
৯৬. الباقي চিরস্থায়ী।
৯৭. الوارث স্বত্বাধিকারী।
৯৮. الرشيد সত্যদর্শী।
৯৯. الصبور ধৈর্যশীল।

পবিত্র কুরআনুল কারীমে এবং হাদীস গ্রন্থসমূহে এসবের বাইরেও আরো কিছু গুণবাচক নামের উল্লেখ পাওয়া যায়। যেমন:
১.اَلرَّبُّ প্রতিপালক।
২.اَلْمُنْعِمُ নিয়ামতদানকারী।
৩.اَلْمُعْطيْ দাতা।
৪.اَلصَّادِقُ সত্যবাদী।
৫.اَسَّتَّارُ গোপনকারী।

আল আসমাউল হুসনার যথাযথ বাংলা অনুবাদ কিছুতেই হয় না। এখানে যে বাংলা অর্থ দেওয়া হয়েছে, তা কেবলমাত্র ইঙ্গিত মাত্র। আল আসমাউল হুসনার মধ্যে থেকে কিছু সংখ্যক গুণাবলী আল্লাহর জন্য সত্তাগত, অনাদি, অনন্ত, ব্যাপক ও অসীম। আর মানুষের জন্য এ সকল গুণ কেবল আল্লাহর দেয়া অস্থায়ী এবং সীমিত।


 الاسماء الحسنى عَن أبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَليْهِ وَسَلَّم: "إنّ لِلّهِ تَعَالَى تِسْعَةً وتِسْعِينَ اِسْماً مِائَةً غَيْرَ وَاحِدَةٍ مَنْ أَحْصَاهَا دَخَلَ الجَنّةَ

অর্থঃ হযরত আবু হুরাইরা রাযি. থেকে বর্ণিত “হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, আল্লাহ তা’আলার ৯৯টি নাম আছে, যে ব্যক্তি উক্ত নামগুলো মুখস্ত রাখবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” [সুনানুত্ তিরমিজী হাদীস নং-৩৫০৭]


 بسم الله الرحمن الرحيم 

هُوَ اللهُ الّذِيْ لا إلَهَ إلاّ هُوَ الرَّحْمنُ الرّحِيمُ المَلِكُ القُدّوْسُ السَّلاَمُ المُؤْمِنُ المُهَيْمِنُ العَزِيْزُ الجَبَّارُ المُتَكَبِّرُ الخَالِقُ البَارِئُ المُصَوِّرُ الغَفَّارُ القهَّارُ الوَهَّابُ الرَّزَّاقُ الفَتَّاحُ العَلِيْمُ القَابِضُ البَاسِطُ الخَافِضُ الرَّافِعُ المُعِزُّ المَذِلُّ السَّمِيْعُ البَصِيْرُ الحَكَمُ العَدْلُ اللَّطِيْفُ الخَبِيْرُ الحَلِيْمُ العَظِيْمُ الغَفُوْرُ الشَّكُوْرُ العَلِيُّ الكَبِيْرُ الحَفِيْظُ المُقِيْتُ الحَسِيْبُ الجَلِيْلُ الكَرِيْمُ الرَّقِيْبُ المُجِيْبُ الْوَاسِعُ الحَكِيْمُ الوَدُوْدُ المَجِيْدُ البَاعِثُ الشّهِيْدُ الحَقُّ الوَكِيْلُ القَوِيُّ المَتِيْنُ الوَلِيُّ الحَمِيْدُ المُحْصِيْ المُبْدِئُ المُعِيْدُ المُحْيِيْ المُمِيْتُ الحَيُّ القَيُّوْمُ الوَاجِدُ المَاجِدُ الوَاحِدُ الصَّمَدُ القَادِرُ المُقْتَدِرُ المُقَدِّمُ المُؤَخِّرُ الأوَّلُ الاَخِرُ الظَّاهِرُ البَاطِنُ الوَالِي المُتَعَالِيْ البَرُّ التَّوَّابُ المُنْتَقِمُ العَفُوُّ الرَّؤُوْفُ مَالِكُ المُلْكِ ذُوْ الْجَلاَلِ وَالإكْرَامِ المُقْسِطُ الجَامِعُ الغَنِيُّ المُغْنِيْ المَانِعُ الضَّارُّ النَّافِعُ النُّوْرُ الهَادِيْ البَدِيْعُ البَاقِيْ الوَارِثُ الرَّشِيْدُ الصَّبُوْرُ".


২. ফেরেশতাগণের উপর ঈমান

 ফেরেশতাগণের ওপর ঈমান আনার অর্থ হলো এ কথা বিশ্বাস করা যে, মহান আল্লাহ এক ধরণের মাখলুককে নূরের দ্বারা সৃষ্টি করে তাদেরকে আমাদের চক্ষুর অন্তরালে রেখেছেন। তাদেরকে ফেরেশতা বলে। তাঁরা পুরুষ বা মহিলা কোনটিই নন। বরং তাঁরা ভিন্ন ধরনের মাখলুক। অনেক ধরণের কাজ আল্লাহ তা‘আলা তাদের ওপর সোপর্দ করে রেখেছেন। 

যেমন: নবীগণের আ. নিকট অহী আনয়ন করা, মেঘ পরিচালনা করা, রুহু কবয করা, নেকী-বদী লিখে রাখা ইত্যাদি। তাঁরা সম্পূর্ণ নিষ্পাপ। তাঁরা বিন্দুমাত্র আল্লাহর নাফরমানী করেন না। তাঁরা আল্লাহর প্রিয় ও ফরমাবরদার বান্দা। 
তাঁদের মধ্যে চারজন ফেরেশতা যথা
হযরত জিবরাঈল আ. 
হযরত মীকাঈল আ., 
হযরত ইসরাফীল আ. ও 
হযরত আযরাঈল আ. অতিপ্রসিদ্ধ।

জিন সম্বন্ধে আক্বীদা 

আরেক প্রকার জীবকে আল্লাহ তা‘আলা আগুনের দ্বারা সৃষ্টি করে আমাদের চক্ষুর অগোচর করে রেখেছেন। তাদেরকে জিন বলে। তাদের মধ্যে ভালো-মন্দ সবরকম হয়। তারা নারী-পুরুষও বটে এবং তাদের সন্তানাদিও হয়। তাদের খানা-পিনার প্রয়োজনও হয়। জিন মানুষের ওপর আছর করতে পারে। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রসিদ্ধ ও বড় দুষ্ট হচ্ছে ‘ইবলিশ শয়তান’। হাশরের ময়দানে জিনদেরও হিসাব-নিকাশ হবে। এ কথা কুরআনে কারীমে উল্লেখ আছে। 

সুতরাং তা বিশ্বাস করা ঈমানের অংশ।  

৩. আল্লাহর প্রেরিত কিতাবসমূহের উপর ঈমান

 আল্লাহ তা‘আলার প্রেরিত কিতাবসমূহের ওপর ঈমান আনার অর্থ হলো, এ কথা বিশ্বাস করা যে, আল্লাহ তা‘আলা মানব জাতি ও জিন জাতির হিদায়াতের জন্যে ছোট-বড় বহু কিতাব হযরত জিবরাঈল আ. এর মাধ্যমে পয়গাম্বরগণের আ. ওপর নাযিল করেছেন, তারা সে সব কিতাবের দ্বারা নিজ নিজ উম্মতকে দ্বীনের কথা শিখিয়েছেন। 

উক্ত কিতাবসমূহের মধ্যে চারখানা কিতাব বেশি প্রসিদ্ধ, যা প্রসিদ্ধ চারজন রাসূলের আ. ওপর নাযিল করা হয়েছে। তার মধ্যে কুরআন শরীফ সর্বশেষ কিতাব। এরপরে আর কোন কিতাব নাযিল হবে না। কিয়ামত পর্যন্ত কুরআন শরীফের হুকুমই চলতে থাকবে। পবিত্র কুরআনের কোন সূরা আয়াত এমনকি কোন শব্দ হরকত, নুকতার মধ্যে এমনিভাবে অর্থের মাঝেও বিন্দুমাত্র পরিবর্তন, পরিবর্ধন বা বিলুপ্তি আসেনি এবং কিয়ামত পর্যন্ত আসাও সম্ভব নয়। কারণ স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলা কুরআনের হিফাযতের ওয়াদা করেছেন এবং তা নিজের দায়িত্বে রেখেছেন। 

অন্যান্য কিতাবগুলোকে বেদ্বীন লোকেরা অনেক কিছু পরিবর্তন করে ফেলেছে। কারণ আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়াতে সেগুলোর হিফাযতের ওয়াদা করেন নি। পবিত্র কুরআনের প্রতিটি সূরা, প্রতিটি আয়াত, প্রতিটি হরফ এমনকি প্রতিটি নুকতাহ ও হরকতের প্রতি ঈমান রাখতে হবে। কোন একটি অস্বীকার করলে ঈমান থাকবে না। কাফের হয়ে যাবে। কুরআন শরীফ ও তার ব্যাখ্যা হাদীস শরীফে তিনি দ্বীন সম্বন্ধীয় সব কথা বর্ণনা করে দিয়েছেন। কোন অংশ গোপন রাখেন নি। 

সুতরাং, এখন নতুন কোন কথা বা প্রথা চালু করা দুরস্ত নয়। দ্বীনের ব্যাপারে এরূপ নতুন কথাকে ইলহাদ বা বিদ‘আত বলে। যা অত্যন্ত মারাত্মক গুনাহ ও পথভ্রষ্টতা। কুরআন-হাদীসের মনগড়া ব্যাখ্যা দেয়া কুফরী কাজ। কোন ফরযকে অস্বীকার করা কুফরী কাজ। 

তেমনিভাবে কোন হালালকে হারাম মনে করা বা কোন অকাট্য হারাম বা গুনাহকে হালাল হিসাবে বিশ্বাস করা কুফরী। এর দ্বারা ঈমান চলে যায়। 

৪. নবী-রাসূল আ. এর ওপর ঈমান

নবী-রাসূল আ.- এর ওপর ঈমান আনার অর্থ এ কথা বিশ্বাস করা যে, আল্লাহ তা‘আলা মানুষের হিদায়াতের জন্যে এবং তাদেরকে সঠিক পথ দেখাবার জন্য স্বীয় বান্দাদের মধ্যে হতে বাছাই করে বহুসংখ্যক পয়গাম্বর অর্থাৎ নবী-রাসূল আ. মনোনীত করে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন।
যাতে করে মানুষ আল্লাহর সন্তুষ্টি হাসিল করে দুনিয়াতে কামিয়াব হতে পারে এবং পরকালে দোযখ থেকে মুক্তি লাভ করে বেহেশত হাসিল করতে পারে। পয়গাম্বরগণ সকলেই মাসুম বা নিষ্পাপ। তাঁরা কোন প্রকার পাপ করেন না। নবীগণ মানুষ। তাঁরা খোদা নন। খোদার পুত্র নন। খোদার রূপান্তর (অবতার) নন।

বরং তাঁরা হলেন আল্লাহর প্রতিনিধি। নবীগণ আল্লাহর বাণী হুবহু পৌঁছে দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা তাঁদের সঠিক সংখ্যা কুরআন শরীফ বা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদীস শরীফে বর্ণনা করেন নি। কাজেই নিশ্চিতভাবে তাঁদের সঠিক সংখ্যা কেউ বলতে পারে না। এ কথা যদি ও প্রসিদ্ধ যে, এক লক্ষ চব্বিশ হাজার পয়গাম্বর দুনিয়াতে এসেছেন কিন্তু কোন সহীহ হাদীস দ্বারা তা প্রমাণিত নয়।

শুধু এতটুকু বলা যায় যে, বহুসংখ্যক পয়গাম্বর দুনিয়াতে এসেছেন। আল্লাহ তা‘আলার হুকুমে তাঁদের দ্বারা অনেক অসাধারণ ও অলৌকিক ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। ঐ সব ঘটনাকে মু‘জিযা বলে। নবীগণের মু‘জিযাসমূহ বিশ্বাস করাও ঈমানের অঙ্গ।

পয়গাম্বরগণের আ. মধ্যে সর্বপ্রথম দুনিয়াতে আগমন করেছেন হযরত আদম আ. এবং সর্বশেষ অথচ সর্বপ্রধান এবং সর্বশ্রেষ্ঠ হচ্ছেন আমাদের নবী হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা আহমদ মুজতাবা সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তাঁর পরে অন্য কেউ দুনিয়াতে নবী বা রাসূল হিসেবে আগমন করেননি এবং করবেনও না। হযরত ঈসা আ. কিয়ামতের পূর্বে যদিও আগমন করবেন, কিন্তু তিনি তো পূর্বেই নবী ছিলেন। নতুন নবী হিসেবে তিনি আগমন করবেন না।

আমদের নবী খাতামুন নাবিয়্যীন বা শেষনবী। তাঁর পরে নতুনভাবে আর কোন নবী আসবেন না; তারপর আসল বা ছায়া কোনরূপ নবীই নাই। বরং তাঁর আগমনের মাধ্যমে নবুওয়াতের দরজা বন্ধ হয়ে গেছে। আমাদের নবীর নবুওয়াত প্রাপ্তির পর থেকে কিয়ামত পর্যন্ত সমগ্র পৃথিবীতে যত জিন বা ইনসান ছিল, আছে বা সৃষ্টি হবে, সকলের জন্যেই তিনি নবী। সুতরাং কিয়ামত পর্যন্ত সমস্ত পৃথিবীতে একমাত্র তাঁরই হুকুম এবং তরীকা সকলের মুক্তি ও নাজাতের জন্যে অদ্বিতীয় পথ হিসেবে বহাল থাকবে। অন্য কোন ধর্ম, তরীকা বা ইজম এর অনুসরণ কাউকে আল্লাহর দরবারে কামিয়াব করতে পারবে না।

আমাদের নবীর পরে অন্য কেউ নবী হয়েছেন বা নবী হবেন বলে বিশ্বাস করলে তার ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে। তেমনিভাবে কেউ নতুন নবী হওয়ার দাবি করলে বা তার অনুসরণ করলে, সেও কাফির বলে গণ্য হবে। হযরত ঈসা আ. এখনও আসমানে জীবিত আছেন। তাঁকে জীবিত অবস্থায় আসমানে উঠিয়ে নিয়েছেন, ইহা সত্য। কুরআন হাদীসে প্রমাণিত। তাই ইহা বিশ্বাস করতে হবে, অন্যথায় ঈমান থাকবে না, তিনি কিয়ামতের পূর্বে আসমান থেকে জমিনে অবতরণ করবেন। আমাদের নবীর অনুসারী হয়ে।

হযরত ঈসা আ.- এর ব্যাপারে পুত্রবাদ ও কর্তৃত্বদের বিশ্বাস কুফরী। দুনিয়াতে যত পয়গাম্বর এসেছেন, সকলেই আমাদের মাননীয় ও ভক্তির পাত্র। তাঁরা সকলেই আল্লাহর হুকুম প্রচার করেছেন। তাঁদের মধ্যে পরস্পরে কোন বিরোধ ছিল না। সকলেই পরস্পর ভাই ভাই ছিলেন। হ্যাঁ, আল্লাহ তা‘আলা অবশ্য হিকমতের কারণে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন হুকুম জারি করেছেন। আর এই সামান্য বিভিন্নতাও শুধু আমলের ব্যাপারে, ঈমান আকীদার ব্যাপারে নয়। আকীদাসমূহ আদি হতে অন্ত পর্যন্ত চিরকাল এক।

আক্বীদার মধ্যে কোন প্রকার রদবদল বা পরিবর্তন হয়নি, আর হবেও না কখনো। পয়গাম্বরগণ সকলেই কামিল ছিলেন। কেও নাকিস বা অসম্পূর্ণ ছিলেন না। অবশ্য তাঁদের মধ্যে কারো মর্যাদা ছিল বেশি, কারো মর্যাদা ছিল তুলনামূলকভাবে কম। সকল নবী নিজ নিজ কবরে জীবিত আছেন। এজন্য নবীগণকে ‘হায়াতুন্নবী’ বলা হয়।

উল্লেখ্য যে, আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মর্তবা সর্বাপেক্ষা বেশি। তাই বলে নবীগণের মধ্যে তুলনা করে একজনকে বড় এবং একজনকে হেয় বা ছোট করে দেখানো বা বর্ণনা করা নিষেধ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম-এর সমস্ত কথা মেনে নেয়া জরুরী। তাঁর একটি কথাও অবিশ্বাস করলে বা সে সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করলে কিংবা তা নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করলে বা দোষ বের করলে ঈমান নষ্ট হয়ে যায়। ঈমানের জন্যে আমাদের নবীর সশরীরে জাগ্রত অবস্থায় মি‘রাজ ভ্রমণের কথা বিশ্বাস করাও জরুরী। 

যে মি‘রাজ বিশ্বাস করে না, সে বেদ্বীন। তার ঈমান নষ্ট হয়ে গেছে। 

সাহাবীর পরিচিতি

যেসব মুসলমান আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে স্বচক্ষে দেখেছেন, এবং ঈমানের হালতে ইনতিকাল করেছেন, তাঁদেরকে ‘সাহাবী’ বলা হয়।

সাহাবীগণের অনেক ফযীলতের কথা কুরআন ও হাদীসে এসেছে। সমস্ত সাহাবী রা. গণের সাথে মুহাব্বত রাখা ও তাঁদের প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা পোষণ করা আমাদের একান্ত কর্তব্য। তাঁদের কাউকে মন্দ বলা আমদের জন্যে সম্পূর্ণরূপে নিষেধ। সাহাবীগণ যদিও মাসুম বা নিষ্পাপ নন, কিন্তু তাঁরা মাগফূর বা ক্ষমাপ্রাপ্ত।

সুতরাং, পরবর্তী লোকদের জন্য তাঁদের সমালোচনা করার কোন অধিকার নেই। তাঁরা সমালোচনার ঊর্ধ্বে। তাঁরা সকলেই আদিল অর্থাৎ নির্ভরযোগ্য সত্যবাদী এবং সত্যের মাপকাঠি। তাঁদের দোষ চর্চা করা হারাম এবং ঈমান বিধ্বংসী কাজ। ‘আকীদাতুত তাহাবী’ কিতাবে উল্লেখ আছে, ‘সাহাবীগণের প্রতি মুহাব্বত-ভক্তি রাখা দ্বীনদারী ও ঈমানদারী এবং দ্বীনের ও ঈমানের পূর্ণতা। আর তাঁদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা বা তাদের বিরূপ সমালোচনা করা কুফরী, মুনাফেকী এবং শরী‘আতের সীমার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। সমস্ত সাহাবীগণের মাঝে চারজন সর্বপ্রধান।

তাঁদের মধ্যে প্রথম হচ্ছেন, হযরত আবু বকর সিদ্দীক রা., তিনিই প্রথম খলীফা বরহক এবং তিনি সমস্ত উম্মতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ।
দ্বিতীয় খলীফা হযরত ওমর ফারুক রা.,
তৃতীয় খলীফা হযরত উসমান গণী রা. এবং
চতুর্থ খলীফা হযরত আলী রা.।
সকল সাহাবায়ে কিরামের ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলার চির সন্তুষ্টির সুসংবাদ দিয়েছেন। বিশেষ করে মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম দশজন সাহাবীর নাম উল্লেখ করেছেন।

এই দশজনকে আশারায়ে মুবাশশারা (সুসংবাদপ্রাপ্ত দশজন) বলা হয়। তাঁরা হলেন-
১. হযরত আবু বকর রা.,
২. হযরত ওমর ফারুক রা.,
৩. হযরত উসমান রা.
৪. হযরত আলী রা.,
৫. হযরত তালহা রা.,
৬. হযরত যুবায়ের রা.
৭. হযরত আবদুর রহমান ইবনে আওফ রা.,
৮. হযরত সা‘দ ইবনে আবী ওয়াককাস রা.,
৯. হযরত সাঈদ ইবনে যায়েদ রা.,
১০. হযরত আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ রা.।

নবী আ. এর বিবি ও আওলাদ সম্বন্ধে আক্বীদা

 নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিবি ও আহল-আওলাদগণের রা. বিশেষভাবে তাযীম করা উম্মতের ওপর ওয়াজিব। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আওলাদগণের মধ্যে হযরত ফাতিমা রা. এবং বিবিগণের মধ্যে হযরত খাদীজা ও আয়িশা রা. এর মর্যাদা সবচেয়ে বেশি।

ওলী-বুযুর্গদের সম্বন্ধে আক্বীদা 

ওলী-বুযুর্গদের কারামত সত্য। কিন্তু ওলী-বুযুর্গগণ যত বড়ই হোন না কেন, তাঁরা নবী রাসূল আ. তো দূরের কথা, একজন সাধারণ সাহাবীর সমতুল্যও হতে পারেন না।

অবশ্য হক্কানী পীর-মাশায়িখ ও উলামায়ে কিরাম যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওয়ারিশ এবং দ্বীনের ধারক বাহক সুতরাং, তাঁদের প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা রাখা, তাঁদের সঙ্গ লাভ করা এবং তাদের প্রতি বিদ্বেষ না রাখা সকল মুসলমানের জন্য জরুরী। দ্বীনের খাদিম হিসেবে তাঁদেরকে হেয় করা, কিংবা গালি দেয়া কুফরী কাজ। মানুষ যতই খোদার পেয়ারা হোক, হুঁশ-জ্ঞান থাকতে শরী‘আতের হুকুম-আহকামের পাবন্দী অবশ্যই তাকে করতে হবে। নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত কখনো মাফ হবে না।

তেমনিভাবে মদ খাওয়া, গান-বাদ্য করা, পরস্ত্রী দর্শন বা স্পর্শ করা কখনো তার জন্যে জায়িয হবে না। হারাম বস্তুসমূহ হারামই থাকবে এবং হারাম কাজ করে বা ফরয বন্দেগী ছেড়ে দিয়ে কেউ কখনো আল্লাহর ওলী হতে পারে না।

৫. কিয়ামত দিবসের ওপর ঈমান

 কিয়ামত দিবসের ওপর ঈমান আনার অর্থ-কুরআন ও হাদীসে কিয়ামতের যতগুলো নিদর্শন বর্ণিত হয়েছে, তা নিশ্চয়ই ঘটবে-দৃঢ়ভাবে এ কথা বিশ্বাস করা। যেমন- বিশ্বাস করা যে, ইমাম মাহদী রহ. আবির্ভূত হবেন। তিনি অত্যন্ত ন্যায়পরায়ণতার সাথে বাদশাহী করবেন। ‘কানা দাজ্জাল’ অনেক অনেক ফিতনা-ফাসাদ করবে, তাকে খতম করার জন্য হযরত ঈসা আ. আসমান থেকে অবতীর্ণ হবেন এবং তাকে বধ করবেন। ‘ইয়াজুজ মা’জুজ’ অতিশক্তিশালী পথভ্রষ্ট শ্রেণীর মানুষ। তারা দুনিয়াতে ফিতনা-ফাসাদ ছড়িয়ে দেবে।

অতঃপর আল্লাহর গযবে তারা ধ্বংস হয়ে যাবে। ‘দাব্বাতুল আরদ’ নামে এক আশ্চর্য জানোয়ার পৃথিবীতে জাহির হবে এবং মানুষের সাথে কথা বলবে। কিয়ামতের পূর্বে পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত হবে, তাওবার দরজা বন্ধ হয়ে যাবে এবং কুরআন শরীফ উঠে যাবে। এ ধরনের আরো অনেক ঘটনা ঘটবে। তারপরে কিছুদিনের মধ্যে সমস্ত মু‘মিনগণ মারা যাবেন এবং সমস্ত দুনিয়া কাফিরদের দ্বারা ভরে যাবে।আর তাদের উপর কিয়ামত কায়িম হবে।

সারকথা, কিয়ামতের সকল নিদর্শন যখন পূর্ণ হবে, তখন আল্লাহর নির্দেশে হযরত ইসরাফীল আ. শিঙ্গায় ফুঁক দিবেন । তাতে কতিপয় জিনিস ব্যতীত সব ধ্বংস হয়ে যাবে, আসমান চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাবে, সমস্ত জীবজন্তু মরে যাবে, যারা পূর্বে মারা গেছে, তাদের রুহ বেঁহুশ হয়ে যাবে। অনেক দিন এ অবস্থায় অতিবাহিত হবে। আল্লাহর নির্দেশে তারপর আবার-শিঙ্গায় ফুঁৎকার দেয়া হবে। তাতে সমস্ত আলম আবার জীবিত হয়ে উঠবে এবং কেয়ামতের ময়দানে সকলে একত্রিত হবে।

কিয়ামতের দিন সূর্য অতি নিকটে চলে আসবে। ফলে মানুষের খুব কষ্ট হবে। কষ্ট দূর করার জন্য লোকেরা হযরত আদম আ. থেকে শুরু করে বড় বড় নবীগণের আ. নিকট সুপারিশের জন্য যাবে। কিন্তু কেউ সুপারিশ করার সাহস পাবে না। অবশেষে আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শাফাআতে হিসাব-নিকাশ শুরু হবে। মীযানের মাধ্যমে নেকী-বদীর হিসাব হবে। অনেকে বিনা হিসেবেই বেহেশতে চলে যাবে, আবার অনেককে বিনা হিসেবে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। হিসাবের পর নেককারদের ডান হাতে এবং বদকারদের বাম হাতে আমলনামা দেয়া হবে। সেদিন জাহান্নামের উপরে অবস্থিত পুলসিরাতের উপর দিয়ে সকলকে পার হতে হবে। নেককার লোকেরা তা দ্রুত পার হয়ে যাবেন, কিন্তু বদকার লোকেরা পার হওয়ার সময় পুলসিরাতের নিচে অবস্থিত দোযখের মধ্যে পড়ে যাবে।

সেই কঠিন দিনে আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতদেরকে হাউজে কাউসারের শরবত পান করাবেন। তা এমন তৃপ্তিকর হবে, যা পান করার পর পিপাসার নামমাত্র থাকবে না। জাহান্নামের মাঝে ভয়ানক অগ্নিকুণ্ডসহ বিভিন্ন রকম শাস্তির উপকরণ মহান আল্লাহ পূর্ব হতেই সৃষ্টি করে রেখেছেন। যার মধ্যে বিন্দুমাত্র ঈমান আছে, সে যত বড় পাপী হোক না কেন, স্বীয় পাপের শাস্তি ভোগ করবে, অতঃপর নবীগণের আ. কিংবা অন্যদের সুপারিশে দোযখ হতে মুক্তি লাভ করে কোন এক সময় বেহেশতে প্রবেশ করবে। আর যারা কুফরী করেছে, বা শিরকী করেছে, তারা যদি দুনিয়াতে অনেক ভাল কাজও করে থাকে, তথাপি তারা কখনো কিছুতেই দোযখ হতে মুক্তি পাবে না। দোযখীদের কখনো মৃত্যুও আসবে না। তারা চিরকাল শাস্তিই ভোগ করতে থাকবে এবং তাদের কোন আশা-আকাঙ্খা পূর্ণ হবে না। দোযখের ন্যায় বেহেশতকেও আল্লাহ তা‘আলা পূর্ব হতে সৃষ্টি করে রেখেছেন। সেখানে নেক লোকদের জন্যে অগণিত ও অকল্পনীয় শান্তির সামগ্রী ও নেয়ামত মওজুদ আছে। যে একবার বেহেশতে যাবে, তার আর কোন ভয় বা ভাবনা থাকবে না। এবং কোনদিন তাকে বেহেশত থেকে বের হতে হবে না।

 বরং চিরকাল সেখানে জীবিত অবস্থায় থেকে সুখ-শান্তি ভোগ করতে থাকবে। বেহেশতের সকল নেয়ামতের মধ্যে আল্লাহ তা‘আলার দীদার বা দর্শন লাভ সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বাপেক্ষা উৎকৃষ্ট নেয়ামত। যদিও দুনিয়াতে জাগ্রত অবস্থায় চর্ম চোখে কেউ আল্লাহ তা‘আলাকে দেখতে পাবে না, কিন্তু মু‘মিনগণ বেহেশতের মধ্যে আল্লাহর দীদার লাভে ধন্য হবেন। বেহেশতের মধ্যে বাগ-বাগিচা, বালাখানা, হুর-গিলমান, বিভিন্ন রকম নহর ও নানারকম অকল্পনীয় সুস্বাদু খাদ্যসামগ্রী সর্বদা মওজুদ থাকবে। জান্নাতীদের দিলের কোন নেয়ামত ভোগ করার ইচ্ছা হওয়ার সাথে সাথে তা পূর্ণ হবে।

দুনিয়াতে কাউকে নিশ্চিতভাবে জান্নাতী বা জাহান্নামী বলা যায় না। অবশ্য কুরআন-হাদীসে যাদের নাম নিয়ে জান্নাতী বা জাহান্নামী বলা হয়েছে, তাদের ব্যাপারে বলা যাবে। তবে কারোর ভাল আমল বা ভাল আখলাক দেখে তাকে ভাল মনে করা উচিত। 

৬. তাকদীরের ওপর ঈমান

তাকদীরের ওপর ঈমান আনার অর্থ হচ্ছে, মনে-প্রাণে অটল বিশ্বাস রাখতে হবে যে, সমগ্র বিশ্বজগতে ভালো বা মন্দ যা কিছু হয়, সবই আল্লাহ তা‘আলা পূর্ব হতেই জানেন, লাউহে মাহফুযে তা লিখে রেখেছেন এবং তিনি যেমন জানেন তেমনই হয়, তার মধ্যে কোন ব্যতিক্রম হয় না। আল্লাহই সবকিছুর সৃষ্টি কর্তা। তার ক্ষমতা সর্বব্যাপী । তার ক্ষমতা ছিন্ন করে বের হতে পারে, এমন কেউ নেই। 

তিনি সর্বজ্ঞ, আদি-অন্ত সবকিছুই তিনি সঠিকভাবে জানেন। মানুষকে আল্লাহ তা‘আলা ভাল-মন্দ বুঝবার এবং কাজ করার ক্ষমতা দান করেছেন এবং ইচ্ছাশক্তিও দান করেছেন। তার দ্বারা নিজ ক্ষমতায়, নিজ ইচ্ছায় সে পাপ ও পুণ্যের কাজ করে। পাপ কাজ করলে আল্লাহ তা‘আলা অসন্তুষ্ট হন এবং পুণ্যের কাজ করলে সন্তুষ্ট হন।

কাজ করা ভিন্ন কথা, আর সৃষ্টি করা ভিন্ন কথা। সৃষ্টি তো সবকিছুই আল্লাহ তা‘আলা করেন। কিন্তু নিজের ইচ্ছানুযায়ী কাজ করার ক্ষমতা আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে দান করেছেন। মানুষ জীবনভর যতই ভাল বা মন্দ থাকুক না কেন, যে অবস্থায় তার ইনতিকাল হবে, সে হিসেবে শান্তি বা শাস্তি পাবে। যেমন, এক ব্যক্তি সারাজীবন মু‘মিন ছিল, কিন্তু মউতের পূর্বে ইচ্ছা পূর্বক কুফরী বা শিরকী কথা বললো বা ঈমান বিরোধী কাজ করলো, তাহলে সে কাফির সাব্যস্ত হবে।

সুতরাং, দিলের মধ্যে আল্লাহর রহমতের আশা ও গযবের ভয় রাখা জরুরী। আল্লাহ তা‘আলা মানুষের অসাধ্য কোন হুকুম করেননি। যা কিছু আদেশ করেছেন বা নিষেধ করেছেন, সবই বান্দার আয়ত্তে ও ইখতিয়ারে।

আল্লাহ তা‘আলার ওপর কোন কিছু করা ওয়াজিব নয়। তিনি যা কিছু দান করেন, সবই তাঁর রহমত এবং মেহেরবানী মাত্র। তাঁর ওপর কারো কোনরূপ দাবি বা হুকুম কিংবা কর্তৃত্ব চলে না। ছোট হতে ছোট গুনাহের কারণে তিনি শাস্তি দিতে পারেন এবং বড় থেকে বড় পাপও তিনি মার্জনা করতে পারেন। সবই তাঁর ইচ্ছাধীন। তিনি কাউকে দোযখে দিলে, সেটাই ইনসাফ এবং কাউকে জান্নাতে প্রবেশ করালে, সেটা তার রহমত। আপত্তি করার অধিকার কারো নেই। 

৭. মৃত্যুর পর পুনরায় জীবিত হওয়ার ওপর ঈমান

 মৃত্যুর পর পুনরায় জীবিত হওয়ার ওপর ঈমান আনার অর্থ হচ্ছে, আমাদের বর্তমান জীবন পরীক্ষার নিমিত্ত। মৃত্যুর পর মহান আল্লাহ আমাদেরকে পুনরায় জীবিত করে এ জীবনের সকল বিষয়ের হিসাব নিবেন। মৃত্যুর পর একটি রয়েছে কবরে সাময়িক ফলভোগের বরযখী যিন্দেগী, আর পরবর্তীতে কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার পর আসবে পরকালীন আসল যিন্দেগী। পূর্ণাঙ্গ হিসাব-কিতাবের পর বান্দার জন্যে নির্ণীত হবে বেহেশত বা দোযখের সেই অনন্ত যিন্দেগী। কিয়ামতের পূর্বেই মুনকার-নাকীরের প্রশ্নোত্তরের পর কবরের ভিতরে নেককারদের জন্যে শান্তি ও আরামের ব্যবস্থা করা হয় এবং বদকারদের জন্যে আযাব শুরু হয়ে যায়।

কবর দ্বারা উদ্দেশ্য, আলমে বরযখ অর্থাৎ দুনিয়া ও আখিরাতের যিন্দেগীর মধ্যবর্তী যিন্দেগী। সকল মানুষ ইনতিকালের পর সেখানেই পৌঁছে যায়, তাই তাকে কবর দেয়া হোক বা না-ই হোক। যেমন-অনেককে বাঘ বা কোন হিংস্র প্রাণী খেয়ে ফেলে, কতেককে আগুনে জ্বালানো হয়, তারাও সেখানে উপস্থিত হয়। কবর বলে মূলত এ জগতকেই বোঝানো হয়। নেক লোকদের জন্যে কবর জান্নাত বা বেহেশতের একটা অংশ হয়ে যায়। তারা সেখানে আরামের সাথে অবস্থান করতে থাকে। মৃত ব্যক্তির জন্যে দু‘আ করলে বা কিছু সদকা করলে, সে তা পেয়ে খুশি হয় এবং তাতে তার বড়ই উপকার হয়।

উল্লেখ্য, ঈমানে মুফাসসালের এ অংশটি ভিন্ন কোন বিষয় নয়, বরং ৫নং বিষয় অর্থাৎ কিয়ামতের ওপর ঈমান আনারই একটি স্তর; কিন্তু বিষয়টি জটিল ও সূক্ষ্ম হওয়ায় ভালভাবে বোঝানোর লক্ষ্যে আলাদা ধারার মাধ্যমে উল্লেখ করা হয়েছে।

এ হলো সহীহ ঈমানের সাতটি আরকান এবং তার কিছুটা ব্যাখ্যা ও তাফসীর। যে কোন ব্যক্তি এসব কথার সবগুলোকে মনে-প্রাণে বিশ্বাস করবে, মুখে স্বীকার করবে এবং এগুলোর দাবী অনুযায়ী আমলে সালিহা করবে, কুরআন ও সুন্নাহর দৃষ্টিতে তাকে বলা হবে পরিপূর্ণ মু‘মিন ও মুসলিম। আল্লাহ তা‘আলার ওয়াদা যে, তাকে দুনিয়াতে, বরযখে ও আখিরাতে ইজ্জত ও শান্তির সাথে রাখবেন এবং তাকে সকল প্রকার আযাব-গযব ও কষ্ট-পেরেশানি থেকে হিফাযত করবেন। কিয়ামতের দিন দোযখ থেকে হিফাযত করে তাকে আল্লাহর পূর্ণ সন্তুষ্টির সংবাদসহ মহাসুখের আবাস ও আনন্দের জান্নাত দান করবেন।

আর যে ব্যক্তি উল্লেখিত কথাগুলোর সবগুলো মনে-প্রাণে বিশ্বাস তো করে, কিন্তু অলসতা বা গাফলতির কারণে কথাগুলোর দাবির ওপর আমল করে না বা আংশিকভাবে আমল করে, তাকে শরী‘আতের দৃষ্টিতে ফাসিক বা গুনাহগার মু‘মিন বলা হয়। তার গুনাহসমূহকে আল্লাহ তা‘আলা ইচ্ছা করলে মাফ করতে পারেন, আর ইচ্ছা করলে তাকে আযাব ও দিতে পারেন। তবে সে ব্যক্তি তার ঈমানের বদৌলতে অবশ্যই জান্নাতে যাবে;

সরাসরিও যেতে পারে, অথবা তার অপরাধের শাস্তি ভোগ করার পরে জান্নাতে যেতে পারে। কিন্তু যে ব্যক্তি উক্ত বিষয়সমূহকে অবিশ্বাস করবে, অথবা এগুলো থেকে মাত্র কোন একটি বিষয়কে অবিশ্বাস করবে কিংবা তাতে সন্দেহ পোষণ করবে, অথবা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য ও ঠাট্টা-বিদ্রূপ করবে, কিংবা এগুলোর মধ্যে কোন দোষ বের করবে, তার ঈমান থাকবে না। বরং সে কাফের বলে গণ্য হবে। আর যদি পূর্ব থেকে মুসলমান থেকে থাকে, তারপরে তার থেকে এ ধরনের অপরাধ প্রকাশ পায়, তাহলে তাকে মুরতাদ (দ্বীন ত্যাগকারী) বলা হবে, যদিও সে মুসলমান হওয়ার দাবি করে এবং যদিও সে পাঁচ ওয়াক্ত নামায জামা‘আতের সাথে পড়ে, মাথায় টুপি ও মুখে দাঁড়ি রাখে রাখে বা হজ্ব-উমরা পালন করে। 

এসব আমল পরকালে তার কোন কাজে আসবে না। কারণ এ কাজগুলো নেক আমল। আর কেউ নেক আমল করলেই সে মু‘মিন গণ্য হয় না। যেমন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর যামানায় অনেক মুনাফিক অর্থাৎ নিকৃষ্ট কাফির ছিল, তারা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর সাথে সকল নেক কাজে অংশ গ্রহণ করতো। এমনকি জিহাদেও শরীক হতো। তারপরও তারা মু‘মিন বলে গণ্য হয়নি।

বস্তুত ঈমান ভিন্ন জিনিস এবং আমল ভিন্ন জিনিস। সহীহ ঈমানের সাথে আমল দুনিয়া ও আখিরাতের ফায়দা পৌঁছায়। আর আমল ব্যতীত শুধু ঈমানও ফায়দা দেয় না। কারণ, এমন ঈমানদার, যার নিকট নেক আমল নেই, সেও কোন এক সময় জান্নাতে প্রবেশ করবে। কিন্তু ঈমান ব্যতীত শুধু নেক আমল দুনিয়াতে কিছু ফায়দা পৌঁছালেও যেমন, তার সুনাম হয় বা ব্যবসা বৃদ্ধি পায়, স্বাস্থ্য ভালো থাকে ইত্যাদি, কিন্তু আখিরাতে ঈমান ব্যতীত শুধু নেক আমল কোনই কাজে আসবে না।

এ সকল বিষয় স্পষ্টভাবে জানা থাকা জরুরী। যাতে ফিতনা-ফাসাদের যুগে ঈমান রক্ষা করা সহজ হয়। হাদীস-শরীফে আছে, ফিতনার যামানায় অনেক মানুষ সকালে মু‘মিন থাকবে বিকালে কাফির হয়ে যাবে। [সূত্র : তিরমিযী শরীফ খণ্ড-২, পৃষ্ঠা ৪৩, মুসলিম শরীফ খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৭৫]

 অর্থাৎ লোকেরা ইলমে দ্বীন শিখবে না, হক্কানী উলামায়ে কিরামের সাথে সম্পর্ক রাখবে না; অপরদিকে বদদ্বীনীর সয়লাব ব্যাপকভাবে প্রবাহিত হবে। এমনকি দ্বীনের নামে কুফর ও শিরকের প্রচার করা হবে; তখন মানুষ না বুঝে কুফরকে দ্বীন মনে করে গ্রহণ করে কাফির হয়ে যাবে। [আল্লাহ তা‘আলা সকলকে হিফাযত করুন।] এখন দেখতে হবে, এসব সহীহ আক্বীদা ও বিশ্বাস মুসলমানগণ কতটুকু ধরে রেখেছে এবং কতটুকুর মধ্যে পরিবর্তন সাধন করে সহীহ আক্বীদাকে বিগড়ে ফেলেছে।

 এ পর্যায়ে মুসলিম সমাজে প্রচলিত ভ্রান্ত আকীদাসমূহ বর্ণনার আশা রাখি। তবে তার পূর্বে ঈমানের বিবরণ আরো সবিস্তারে উপলব্ধির জন্যে ঈমানের ৭৭ শাখার বর্ণনা করা হচ্ছে।


Blogger দ্বারা পরিচালিত.