ঈমান সংশ্লিষ্ট ৩০টি কাজ-যা দিলের দ্বারা সমাধা হয়...!!!
ঈমান সংশ্লিষ্ট ৩০টি কাজ-যা দিলের দ্বারা সমাধা হয়
১. আল্লাহ তা‘আলার ওপর ঈমান আনয়ন করাঃ আল্লাহকে বিশ্বাস করা এবং আল্লাহর ওপর ঈমান আনয়নের অর্থ শুধু আল্লাহ তা‘আলার অস্তিত্ব স্বীকার করা নয়, বরং অস্তিত্বের প্রতি বিশ্বাসের সঙ্গে সঙ্গে তিনি যে অনাদি, অনন্ত, চিরঞ্জীব, নিরাকার, তা স্বীকার করা, তাঁর সিফাত অর্থাৎ মহৎ গুণাবলী স্বীকার করা এবং তিনি যে এক, অদ্বিতীয়, সর্বশক্তিমান ও দয়াময় এটাও স্বীকার করা এবং তিনি ব্যতীত অন্য কেউ ইবাদতের যোগ্য নয়-এ কথাও বিশ্বাস করা কর্তব্য।
২. সবই আল্লাহ তা‘আলার সৃষ্ট-এর ওপর ঈমান রাখাঃ মুসলমানগণের অকাট্য বিশ্বাস ও ঈমান রাখতে হবে যে, ভালো-মন্দ ছোট-বড় সমস্ত বিষয় ও বস্তুনিচয়ের সৃষ্টিকর্তা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা। সৃষ্টিকর্তা হিসেবে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত অন্য কেউ নেই।
৩. ফেরেশতা সম্বন্ধে ঈমানঃ ফেরেশতাগণ নিষ্পাপ, তাঁরা আল্লাহর প্রিয় ও ফরমাবরদার বান্দা। কোন কাজেই তাঁরা বিন্দুমাত্র নাফরমানী করেন না এবং তাঁদের আল্লাহপ্রদত্ত ক্ষমতাও অনেক বেশি। আল্লাহ তা‘আলা তাদের ওপর অনেক যিম্মাদারী অর্পণ করেছেন।
৪. আল্লাহর কিতাব সম্বন্ধে ঈমান রাখাঃ পবিত্র কুরআন সম্বন্ধে এরূপ ঈমান রাখতে হবে, এ মহান কিতাবটি কোন মানুষের রচিত নয়; বরং তা আদ্যোপান্ত আল্লাহ তা‘আলার কালাম বা বাণী। পবিত্র কুরআন অক্ষরে অক্ষরে অকাট্য সত্য। এত ছাড়াও পূর্ববর্তী নবীগণের প্রতি সেসব ছোট-বড় কিতাব নাযিল হয়েছিল, সবই অক্ষরে অক্ষরে সত্য ও অকাট্য ছিল। অবশ্য পরবর্তীকালে লোকেরা ঐ সব বিকৃত ও পরিবর্তন করে ফেলেছে। কিন্তু কুরআন শরীফকে শেষ পর্যন্ত অপরিবর্তিত রূপে সংরক্ষণ করার ভার স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলা নিয়েছেন। সেই হিসেবে পবিত্র কুরআন অবিকল নাযিলকৃত অবস্থায়ই বিদ্যমান রয়েছে। পবিত্র কুরআনকে কেউ বিকৃত করতে পারবে না।
৫. পয়গাম্বরগণ সম্বন্ধে ঈমান রাখাঃ বিশ্বাস রাখতে হবে, নবী বা পয়গাম্বর বহুসংখ্যক ছিলেন। তাঁরা সকলেই নিষ্পাপ ও বেগুনাহ ছিলেন। তাঁরা স্বীয় দায়িত্ব যথাযথ আদায় করে গেছেন। আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তাঁর আনীত শরী‘আতই আমাদের পালনীয়।
৬. আখিরাত সম্বন্ধে ঈমান রাখাঃ আখিরাতের উপর ঈমান রাখার অর্থ হলো, কবরের সওয়াল-জওয়াব ও সওয়াল-আযাব বিশ্বাস করা, হাশরের ময়দানে আদি হতে অন্ত পর্যন্ত পৃথিবীতে আগত সকল মানুষ একত্রিত হবে, নেকী-বদী পরিমাপ করা হবে ইত্যাদির প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা। অর্থাৎ কিয়ামত সম্বন্ধে যত কথা কুরআন ও হাদীস শরীফে এসেছে, সব বিশ্বাস করা জরুরী।
৭. তাকদীর সম্বন্ধে ঈমান রাখাঃ তাকদীর সম্বন্ধে কখনো তর্ক-বিতর্ক করবে না, বা মনে সংশয়-সন্দেহ স্থান দিবে না। দুনিয়াতে যা কিছু হয়েছে, হচ্ছে বা হবে, সবই মহান আল্লাহর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণাধীন ও হুকুমের তাবেদার। আল্লাহপাকের ক্ষমতায়ই সবকিছু হয়। অবশ্য আল্লাহ মানুষকে ইচ্ছা ও কাজের ইখতিয়ার দিয়েছেন। মানুষ নিজের ইখতিয়ার ও ইচ্ছায় ভালো-মন্দ যা কিছু করবে, আল্লাহ তার প্রতিদান দিবেন।
৮. বেহেশতের ওপর ঈমান রাখাঃ পবিত্র কুরআনের অসংখ্য আয়াতে বেহেশতের কথা উল্লেখ আছে। আল্লাহপাক নেককার মু‘মিন বান্দাদেরকে বেহেশতে তাদের আমলের যথার্থ প্রতিদান ও পুরস্কার দিবেন। তারা ঈমান ও নেক আমলের বদৌলতে চিরকাল বেহেশতের অফুরন্ত নেয়ামত ও শান্তি ভোগ করবেন। বেহেশতের বাস্তবতা সম্পর্কে দৃঢ় ঈমান রাখতে হবে।
৯. দোযখের ওপর ঈমান রাখাঃ পবিত্র কুরআনের বহু আয়াতে দোযখের উল্লেখ রয়েছে। আল্লাহপাক কাফির, ফাসিক-ফাজির ও বদকারদেরকে জাহান্নাম বা দোযখে তাদের কৃতকর্মের উপযুক্ত পরিণাম বা শাস্তি দিবেন। কাফিররা চিরকাল জাহান্নামে থাকবে। আর গুনাহগার ঈমানদাররা জাহান্নামে নির্দিষ্ট মেয়াদের শাস্তি ভোগের পর ঈমানের বদৌলতে জান্নাতে যাবে। দোযখের বাস্তবতার ওপর ঈমান রাখতে হবে।
১০. অন্তরে আল্লাহর মুহাব্বত রাখাঃ অন্তরে মহান আল্লাহর প্রতি সর্বদা মুহাব্বত বদ্ধমূল রাখতে হবে। এমনকি দুনিয়ার সবকিছু থেকে আল্লাহপাকের মুহাব্বত বেশি হতে হবে। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআন মজীদে ইরশাদ করেন- وَا لَّذِ يْنَ ا مَنُوْا اشَدُّ حُبَّا لِّله যারা মু‘মিন, আল্লাহর প্রতি তাদের মুহাব্বত সর্বাধিক প্রকট।
১১. আল্লাহর ওয়াস্তে কারো সাথে দোস্তি ও দুশমনি রাখাঃ হযরত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: যার মধ্যে তিনটি গুণ থাকবে, সে ঈমানের মধুরতা, প্রকৃত স্বাদ অনুভব করতে পারবে-
ক. যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে সর্বাধিক মুহাব্বত করবে।
খ. কোন ব্যক্তি বা বস্তুর সাথে মুহাব্বত করতে হলে আল্লাহর উদ্দেশ্যেই করবে। অন্য কোন উদ্দেশ্য করবে না।
গ. কোন ব্যক্তি বা বস্তুকে মন্দ জানতে হলে, শুধুমাত্র আল্লাহর ওয়াস্তেই মন্দ জানবে। [সূত্র: মুসনাদে আহমাদ। খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-১০৩, ১৭৪, ২৩০, ২৪৮, ২৮৮।]
১২. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি মুহাব্বত রাখা, সুন্নাতকে ভালোবাসাঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি মুহাব্বত রাখা ঈমানের বিশেষ শাখা। এর অর্থ শুধু মুহাব্বতের দাবি করা বা নাত-গযল পড়া নয়, বরং এর সংশ্লিষ্ট কর্তব্য পালন করতে হবে। যথা-
১. অন্তরের দ্বারা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভক্তি করতে হবে।
২. বাহ্যিকভাবে তাঁর আদব-তাযীম রক্ষা করতে হবে।
৩. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওপর দুরূদ ও সালাম পড়তে হবে।
৪. রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাত তরীকার পায়রবি করতে হবে।
১৩. ইখলাসের সাথে আমল করাঃ যে কোন নেক কাজ খালিসভাবে আল্লাহকে রাজি-খুশি করার নিয়তে করা ঈমানের দাবি। নিয়ত খালিস হবে, মুনাফিকী ও রিয়া থাকতে পারবে না। মু‘মিনের সকল কাজ একমাত্র আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্যেই হতে হবে।
১৪. গুনাহ থেকে তাওবা করাঃ তাওবা শুধু গঁদ-বাধা কতগুলো শব্দ উচ্চারণের নাম নয়; বরং গুনাহের কারণে অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা চেয়ে তা থেকে সম্পূর্ণরূপে পরহেয করা জরুরী। এক বুযুর্গ আরবীতে অতি সংক্ষেপে তাওবার ব্যাখ্যা এভাবে করেছেন- التوبة تحرق الحشا على الخطأ গুনাহের কারণে মনের ভিতর অনুতাপের আগুন জ্বলাকেই তাওবা বলে। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযি. বলেন-রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন: الندم توبة অনুতাপের নামই তাওবা। [সূত্র:মুসানাদে আহমাদ খণ্ড-১, পৃষ্ঠা -৩৭৬, ৪২৩, ৪৩৩।]
১৫.অন্তরে আল্লাহর ভয় রাখাঃ হযরত মু‘আয রাযি. হতে রিওয়ায়েত আছে যে, ঈমানওয়ালার দিল কখনো খোদার ভয় ছাড়া থাকে না, সবসময়ই তা আল্লাহর ভয়ে কম্পমান থাকে। কোন সময়ই নিশ্চিন্ত হয়ে বসে থাকতে পারে না। [সূত্র: হিলইয়াতুল আউলিয়া।]
১৬. আল্লাহপাকের রহমতের আশা করাঃ কুরআন শরীফে আছে, যারা কাফির, তারাই শুধু আল্লাহপাকের রহমত হতে নিরাশ হয়। আল্লাহর রহমতের আশা রাখা ঈমানের একটি বিশেষ শাখা।
১৭. লজ্জাশীলতা বজায় রাখাঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন- الحيا ء شعبة الايمان লজ্জাশীলতা ঈমানের একটি বড় শাখা। [সূত্র: বুখারী খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-৬ ও মুসলিম খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-৪৭।]
১৮. শুকরগুযার হওয়াঃ শুকর দুই প্রকার।
ক. আল্লাহর শুকর আদায় করা, যিনি প্রকৃত দাতা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমার শুকর করো, নাশুকরি করো না।
খ. মানুষের শুকর আদায় করা। অর্থাৎ যাদের হাতের মাধ্যম আল্লাহপাকের নেয়ামত পাওয়া যায়, তাদের শুকর করা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি মানুষের শুকর আদায় করলো না, সে আল্লাহর শুকর করলো না।
১৯. অঙ্গীকার রক্ষা করাঃ আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন- يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا أَوْفُوا بِالْعُقُودِ হে ঈমানদারগণ! অঙ্গীকার পূর্ণ করো। অর্থাৎ কাউকে কোন কথা দিয়ে থাকলে তা রক্ষা করো। [সূত্র: সূরা মায়িদা ১] ২০. সবর বা ধৈর্য ধারণ করাঃ আল্লাহ তা‘আলা বলেন, যারা সবর করে, আল্লাহ তা‘আলা তাদের সাথে (সহায়) আছেন।
২১. তাওয়াযু বা নম্রতা অবলম্বন করাঃ নম্রতা অর্থ নিজেকে নিজে অন্তর থেকে সকলের তুলনায় ছোট মনে করা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে নম্রতা অবলম্বন করে, আল্লাহ তা‘আলা তার মর্যাদা বাড়িয়ে দেন। [সূত্র: হিলয়াতুল আউলিয়া খণ্ড-৭, পৃষ্ঠা-১২৯, মিশকাত-৪৩৪।]
২২. দয়ার্দ্র ও স্নেহশীল হওয়াঃ হযরত আবু হুরাইরা রাযি. রিওয়ায়েত করেন, নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি দুর্ভাগা, তার থেকেই দয়া ছিনিয়ে নেয়া হয়। [সূত্র: মুসনাদে আহমাদ খণ্ড-২, পৃষ্ঠা ৩০১ ও তিরমিযী শরীফ খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-১৪।]
২৩. তাকদীরে সন্তুষ্ট থাকাঃ তাকদীরে সন্তুষ্ট থাকাকে ‘রিয়া বিল কাযা’ বলে, মহান আল্লাহর সকল ফয়সালা সন্তুষ্ট চিত্তে গ্রহণ করা। আল্লাহর হুকুমে বিপদ-আপদ বা দুঃখ-কষ্ট আসলে অসন্তুষ্ট না হওয়ার অর্থ এই নয় যে, মনে কষ্ট লাগতে দিবে না, পেরেশানও হবে না। কেননা,কষ্টের বিষয়ে কষ্ট লাগাই তো স্বাভাবিক| তবে আসল কথা হচ্ছে, কষ্ট লাগলেও বুদ্ধির দ্বারা ও জ্ঞানের দ্বারা তার মধ্যে কল্যাণ আছে এবং এটা আল্লাহপাকেরই হুকুমে হয়েছে মনে করে সেটাকে পছন্দ করবে। কষ্টকে মনে স্থান দিবে না।
২৪. তাওয়াক্কুল অবলম্বন করাঃ আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন- و على الله فليتوكل المؤمنون যাদের ঈমান আছে, তাদের শুধু আল্লাহ তা‘আলারই ওপর তাওয়াক্কুল (ভরসা) করা উচিত।
২৫. অহংকার না করাঃ অহংকার না করা অর্থাৎ অন্যের তুলনায় নিজেকে নিজে ভালো এবং বড় মনে না করা ঈমানের অঙ্গ। তাবারানী নামক হাদীসের কিতাবে একটি হাদীস বর্ণিত আছে- তিনটি জিনিস মানুষের জন্যে সর্বনাশকারী-
ক. লোভ-যে লোভকে না সামলিয়ে বরং মানুষ তার অনুগত হয়।
খ. নফসানী খায়েশ-যে নফসানী খায়েশকে দমন না করে বরং তার চাহিদা অনুযায়ী কাজ করা হয়।
গ. অহংকার-তাকাব্বুর বা অন্যের তুলনায় নিজেকে ভালো ও বড় মন করে। [সূত্র : তাবারানী আউসাত: খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা-৪৮৬, হিলয়া: খণ্ড ৩,-পৃষ্ঠা-২১৯।]
২৬. চোগলখুরী, কীনা ও মনোমালিন্য বর্জন করাঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, চোগলখুরী ও কীনা মানুষকে দোযখে নিয়ে ফেলে। অতএব, কোন মু‘মিনের দিলেই এ গর্হিত খাসলত থাকা উচিত নয়। [সূত্র: তারারানী, আউসাত খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা ১২৫ হাদীস (৪৬৫৩)]
২৭. হাসাদ বা হিংসা-বিদ্বেষ বর্জন করাঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, অগ্নি যেমন কাঠকে ভস্ম করে ফেলে, তদ্রূপ হিংসা মানুষের নেকীকে ভস্ম করে ফেলে। অতএব খবরদার! খবরদার! তোমরা কখনো হিংসা-বিদ্বেষ করবে না। [সূত্র: ইবনে মাজাহ পৃষ্ঠা -৩১০]
২৮. ক্রোধ দমন করাঃ আল্লাহ তা‘আলা কুরআন শরীফে ক্রোধ দমনকারীদের প্রশংসা করেছেন। অনর্থক রাগ করা গুনাহ। রাগ-ক্রোধ দমনে হাদীসে তাকীদ এসেছে। তবে ইসলামের বিরুদ্ধে কোন আয়াত আসলে, সেখানে ক্রোধ ও অসন্তুষ্টি প্রদর্শনই ঈমানের দাবি।
২৯. অন্যের অনিষ্ট সাধন ও প্রতারণা না করাঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে অন্যের ক্ষতি করে অর্থাৎ পরের মন্দ চায়, অপরকে ঠকায়, ধোঁকা দেয়, তার সাথে কোন সংশ্রবই নেই। [সূত্র: মুসলিম শরীফ, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-৭০]
৩০. দুনিয়ার অত্যধিক মায়া-মুহাব্বত ত্যাগ করাঃ হযরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন যে দুনিয়াকে ভালবাসবে, তার আখিরাতের লোকসান হবে এবং যে আখিরাতকে ভালবাসবে, তার দুনিয়ার কিছু ক্ষতি হবে। হে আমার উম্মতগণ! তোমাদের মঙ্গলের জন্যে আমি তোমাদেরকে বলছি, তোমরা অস্থায়ী ও ক্ষণস্থায়ী দুনিয়াকে ভালোবেসে চিরস্থায়ী আখিরাতকে নষ্ট করে দিও না। তোমরা সকলেই চিরস্থায়ী পরকালকেই শক্তভাবে ধর এবং বেশি করে ভালবাসো। অর্থাৎ দুনিয়ার মুহাব্বত পরিত্যাগ করে আখিরাতের প্রস্তুতিতে আমলের প্রতি যথাযথ ধাবিত হও। [সূত্র: মুসনাদে আহমদ খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা -৪১২ ও বাইহাকী, খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-৩৭০।]
১. আল্লাহ তা‘আলার ওপর ঈমান আনয়ন করাঃ আল্লাহকে বিশ্বাস করা এবং আল্লাহর ওপর ঈমান আনয়নের অর্থ শুধু আল্লাহ তা‘আলার অস্তিত্ব স্বীকার করা নয়, বরং অস্তিত্বের প্রতি বিশ্বাসের সঙ্গে সঙ্গে তিনি যে অনাদি, অনন্ত, চিরঞ্জীব, নিরাকার, তা স্বীকার করা, তাঁর সিফাত অর্থাৎ মহৎ গুণাবলী স্বীকার করা এবং তিনি যে এক, অদ্বিতীয়, সর্বশক্তিমান ও দয়াময় এটাও স্বীকার করা এবং তিনি ব্যতীত অন্য কেউ ইবাদতের যোগ্য নয়-এ কথাও বিশ্বাস করা কর্তব্য।
২. সবই আল্লাহ তা‘আলার সৃষ্ট-এর ওপর ঈমান রাখাঃ মুসলমানগণের অকাট্য বিশ্বাস ও ঈমান রাখতে হবে যে, ভালো-মন্দ ছোট-বড় সমস্ত বিষয় ও বস্তুনিচয়ের সৃষ্টিকর্তা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা। সৃষ্টিকর্তা হিসেবে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত অন্য কেউ নেই।
৩. ফেরেশতা সম্বন্ধে ঈমানঃ ফেরেশতাগণ নিষ্পাপ, তাঁরা আল্লাহর প্রিয় ও ফরমাবরদার বান্দা। কোন কাজেই তাঁরা বিন্দুমাত্র নাফরমানী করেন না এবং তাঁদের আল্লাহপ্রদত্ত ক্ষমতাও অনেক বেশি। আল্লাহ তা‘আলা তাদের ওপর অনেক যিম্মাদারী অর্পণ করেছেন।
৪. আল্লাহর কিতাব সম্বন্ধে ঈমান রাখাঃ পবিত্র কুরআন সম্বন্ধে এরূপ ঈমান রাখতে হবে, এ মহান কিতাবটি কোন মানুষের রচিত নয়; বরং তা আদ্যোপান্ত আল্লাহ তা‘আলার কালাম বা বাণী। পবিত্র কুরআন অক্ষরে অক্ষরে অকাট্য সত্য। এত ছাড়াও পূর্ববর্তী নবীগণের প্রতি সেসব ছোট-বড় কিতাব নাযিল হয়েছিল, সবই অক্ষরে অক্ষরে সত্য ও অকাট্য ছিল। অবশ্য পরবর্তীকালে লোকেরা ঐ সব বিকৃত ও পরিবর্তন করে ফেলেছে। কিন্তু কুরআন শরীফকে শেষ পর্যন্ত অপরিবর্তিত রূপে সংরক্ষণ করার ভার স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলা নিয়েছেন। সেই হিসেবে পবিত্র কুরআন অবিকল নাযিলকৃত অবস্থায়ই বিদ্যমান রয়েছে। পবিত্র কুরআনকে কেউ বিকৃত করতে পারবে না।
৫. পয়গাম্বরগণ সম্বন্ধে ঈমান রাখাঃ বিশ্বাস রাখতে হবে, নবী বা পয়গাম্বর বহুসংখ্যক ছিলেন। তাঁরা সকলেই নিষ্পাপ ও বেগুনাহ ছিলেন। তাঁরা স্বীয় দায়িত্ব যথাযথ আদায় করে গেছেন। আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তাঁর আনীত শরী‘আতই আমাদের পালনীয়।
৬. আখিরাত সম্বন্ধে ঈমান রাখাঃ আখিরাতের উপর ঈমান রাখার অর্থ হলো, কবরের সওয়াল-জওয়াব ও সওয়াল-আযাব বিশ্বাস করা, হাশরের ময়দানে আদি হতে অন্ত পর্যন্ত পৃথিবীতে আগত সকল মানুষ একত্রিত হবে, নেকী-বদী পরিমাপ করা হবে ইত্যাদির প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা। অর্থাৎ কিয়ামত সম্বন্ধে যত কথা কুরআন ও হাদীস শরীফে এসেছে, সব বিশ্বাস করা জরুরী।
৭. তাকদীর সম্বন্ধে ঈমান রাখাঃ তাকদীর সম্বন্ধে কখনো তর্ক-বিতর্ক করবে না, বা মনে সংশয়-সন্দেহ স্থান দিবে না। দুনিয়াতে যা কিছু হয়েছে, হচ্ছে বা হবে, সবই মহান আল্লাহর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণাধীন ও হুকুমের তাবেদার। আল্লাহপাকের ক্ষমতায়ই সবকিছু হয়। অবশ্য আল্লাহ মানুষকে ইচ্ছা ও কাজের ইখতিয়ার দিয়েছেন। মানুষ নিজের ইখতিয়ার ও ইচ্ছায় ভালো-মন্দ যা কিছু করবে, আল্লাহ তার প্রতিদান দিবেন।
৮. বেহেশতের ওপর ঈমান রাখাঃ পবিত্র কুরআনের অসংখ্য আয়াতে বেহেশতের কথা উল্লেখ আছে। আল্লাহপাক নেককার মু‘মিন বান্দাদেরকে বেহেশতে তাদের আমলের যথার্থ প্রতিদান ও পুরস্কার দিবেন। তারা ঈমান ও নেক আমলের বদৌলতে চিরকাল বেহেশতের অফুরন্ত নেয়ামত ও শান্তি ভোগ করবেন। বেহেশতের বাস্তবতা সম্পর্কে দৃঢ় ঈমান রাখতে হবে।
৯. দোযখের ওপর ঈমান রাখাঃ পবিত্র কুরআনের বহু আয়াতে দোযখের উল্লেখ রয়েছে। আল্লাহপাক কাফির, ফাসিক-ফাজির ও বদকারদেরকে জাহান্নাম বা দোযখে তাদের কৃতকর্মের উপযুক্ত পরিণাম বা শাস্তি দিবেন। কাফিররা চিরকাল জাহান্নামে থাকবে। আর গুনাহগার ঈমানদাররা জাহান্নামে নির্দিষ্ট মেয়াদের শাস্তি ভোগের পর ঈমানের বদৌলতে জান্নাতে যাবে। দোযখের বাস্তবতার ওপর ঈমান রাখতে হবে।
১০. অন্তরে আল্লাহর মুহাব্বত রাখাঃ অন্তরে মহান আল্লাহর প্রতি সর্বদা মুহাব্বত বদ্ধমূল রাখতে হবে। এমনকি দুনিয়ার সবকিছু থেকে আল্লাহপাকের মুহাব্বত বেশি হতে হবে। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআন মজীদে ইরশাদ করেন- وَا لَّذِ يْنَ ا مَنُوْا اشَدُّ حُبَّا لِّله যারা মু‘মিন, আল্লাহর প্রতি তাদের মুহাব্বত সর্বাধিক প্রকট।
১১. আল্লাহর ওয়াস্তে কারো সাথে দোস্তি ও দুশমনি রাখাঃ হযরত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: যার মধ্যে তিনটি গুণ থাকবে, সে ঈমানের মধুরতা, প্রকৃত স্বাদ অনুভব করতে পারবে-
ক. যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে সর্বাধিক মুহাব্বত করবে।
খ. কোন ব্যক্তি বা বস্তুর সাথে মুহাব্বত করতে হলে আল্লাহর উদ্দেশ্যেই করবে। অন্য কোন উদ্দেশ্য করবে না।
গ. কোন ব্যক্তি বা বস্তুকে মন্দ জানতে হলে, শুধুমাত্র আল্লাহর ওয়াস্তেই মন্দ জানবে। [সূত্র: মুসনাদে আহমাদ। খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-১০৩, ১৭৪, ২৩০, ২৪৮, ২৮৮।]
১২. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি মুহাব্বত রাখা, সুন্নাতকে ভালোবাসাঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি মুহাব্বত রাখা ঈমানের বিশেষ শাখা। এর অর্থ শুধু মুহাব্বতের দাবি করা বা নাত-গযল পড়া নয়, বরং এর সংশ্লিষ্ট কর্তব্য পালন করতে হবে। যথা-
১. অন্তরের দ্বারা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভক্তি করতে হবে।
২. বাহ্যিকভাবে তাঁর আদব-তাযীম রক্ষা করতে হবে।
৩. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওপর দুরূদ ও সালাম পড়তে হবে।
৪. রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাত তরীকার পায়রবি করতে হবে।
১৩. ইখলাসের সাথে আমল করাঃ যে কোন নেক কাজ খালিসভাবে আল্লাহকে রাজি-খুশি করার নিয়তে করা ঈমানের দাবি। নিয়ত খালিস হবে, মুনাফিকী ও রিয়া থাকতে পারবে না। মু‘মিনের সকল কাজ একমাত্র আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্যেই হতে হবে।
১৪. গুনাহ থেকে তাওবা করাঃ তাওবা শুধু গঁদ-বাধা কতগুলো শব্দ উচ্চারণের নাম নয়; বরং গুনাহের কারণে অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা চেয়ে তা থেকে সম্পূর্ণরূপে পরহেয করা জরুরী। এক বুযুর্গ আরবীতে অতি সংক্ষেপে তাওবার ব্যাখ্যা এভাবে করেছেন- التوبة تحرق الحشا على الخطأ গুনাহের কারণে মনের ভিতর অনুতাপের আগুন জ্বলাকেই তাওবা বলে। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযি. বলেন-রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন: الندم توبة অনুতাপের নামই তাওবা। [সূত্র:মুসানাদে আহমাদ খণ্ড-১, পৃষ্ঠা -৩৭৬, ৪২৩, ৪৩৩।]
১৫.অন্তরে আল্লাহর ভয় রাখাঃ হযরত মু‘আয রাযি. হতে রিওয়ায়েত আছে যে, ঈমানওয়ালার দিল কখনো খোদার ভয় ছাড়া থাকে না, সবসময়ই তা আল্লাহর ভয়ে কম্পমান থাকে। কোন সময়ই নিশ্চিন্ত হয়ে বসে থাকতে পারে না। [সূত্র: হিলইয়াতুল আউলিয়া।]
১৬. আল্লাহপাকের রহমতের আশা করাঃ কুরআন শরীফে আছে, যারা কাফির, তারাই শুধু আল্লাহপাকের রহমত হতে নিরাশ হয়। আল্লাহর রহমতের আশা রাখা ঈমানের একটি বিশেষ শাখা।
১৭. লজ্জাশীলতা বজায় রাখাঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন- الحيا ء شعبة الايمان লজ্জাশীলতা ঈমানের একটি বড় শাখা। [সূত্র: বুখারী খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-৬ ও মুসলিম খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-৪৭।]
১৮. শুকরগুযার হওয়াঃ শুকর দুই প্রকার।
ক. আল্লাহর শুকর আদায় করা, যিনি প্রকৃত দাতা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমার শুকর করো, নাশুকরি করো না।
খ. মানুষের শুকর আদায় করা। অর্থাৎ যাদের হাতের মাধ্যম আল্লাহপাকের নেয়ামত পাওয়া যায়, তাদের শুকর করা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি মানুষের শুকর আদায় করলো না, সে আল্লাহর শুকর করলো না।
১৯. অঙ্গীকার রক্ষা করাঃ আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন- يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا أَوْفُوا بِالْعُقُودِ হে ঈমানদারগণ! অঙ্গীকার পূর্ণ করো। অর্থাৎ কাউকে কোন কথা দিয়ে থাকলে তা রক্ষা করো। [সূত্র: সূরা মায়িদা ১] ২০. সবর বা ধৈর্য ধারণ করাঃ আল্লাহ তা‘আলা বলেন, যারা সবর করে, আল্লাহ তা‘আলা তাদের সাথে (সহায়) আছেন।
২১. তাওয়াযু বা নম্রতা অবলম্বন করাঃ নম্রতা অর্থ নিজেকে নিজে অন্তর থেকে সকলের তুলনায় ছোট মনে করা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে নম্রতা অবলম্বন করে, আল্লাহ তা‘আলা তার মর্যাদা বাড়িয়ে দেন। [সূত্র: হিলয়াতুল আউলিয়া খণ্ড-৭, পৃষ্ঠা-১২৯, মিশকাত-৪৩৪।]
২২. দয়ার্দ্র ও স্নেহশীল হওয়াঃ হযরত আবু হুরাইরা রাযি. রিওয়ায়েত করেন, নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি দুর্ভাগা, তার থেকেই দয়া ছিনিয়ে নেয়া হয়। [সূত্র: মুসনাদে আহমাদ খণ্ড-২, পৃষ্ঠা ৩০১ ও তিরমিযী শরীফ খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-১৪।]
২৩. তাকদীরে সন্তুষ্ট থাকাঃ তাকদীরে সন্তুষ্ট থাকাকে ‘রিয়া বিল কাযা’ বলে, মহান আল্লাহর সকল ফয়সালা সন্তুষ্ট চিত্তে গ্রহণ করা। আল্লাহর হুকুমে বিপদ-আপদ বা দুঃখ-কষ্ট আসলে অসন্তুষ্ট না হওয়ার অর্থ এই নয় যে, মনে কষ্ট লাগতে দিবে না, পেরেশানও হবে না। কেননা,কষ্টের বিষয়ে কষ্ট লাগাই তো স্বাভাবিক| তবে আসল কথা হচ্ছে, কষ্ট লাগলেও বুদ্ধির দ্বারা ও জ্ঞানের দ্বারা তার মধ্যে কল্যাণ আছে এবং এটা আল্লাহপাকেরই হুকুমে হয়েছে মনে করে সেটাকে পছন্দ করবে। কষ্টকে মনে স্থান দিবে না।
২৪. তাওয়াক্কুল অবলম্বন করাঃ আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন- و على الله فليتوكل المؤمنون যাদের ঈমান আছে, তাদের শুধু আল্লাহ তা‘আলারই ওপর তাওয়াক্কুল (ভরসা) করা উচিত।
২৫. অহংকার না করাঃ অহংকার না করা অর্থাৎ অন্যের তুলনায় নিজেকে নিজে ভালো এবং বড় মনে না করা ঈমানের অঙ্গ। তাবারানী নামক হাদীসের কিতাবে একটি হাদীস বর্ণিত আছে- তিনটি জিনিস মানুষের জন্যে সর্বনাশকারী-
ক. লোভ-যে লোভকে না সামলিয়ে বরং মানুষ তার অনুগত হয়।
খ. নফসানী খায়েশ-যে নফসানী খায়েশকে দমন না করে বরং তার চাহিদা অনুযায়ী কাজ করা হয়।
গ. অহংকার-তাকাব্বুর বা অন্যের তুলনায় নিজেকে ভালো ও বড় মন করে। [সূত্র : তাবারানী আউসাত: খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা-৪৮৬, হিলয়া: খণ্ড ৩,-পৃষ্ঠা-২১৯।]
২৬. চোগলখুরী, কীনা ও মনোমালিন্য বর্জন করাঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, চোগলখুরী ও কীনা মানুষকে দোযখে নিয়ে ফেলে। অতএব, কোন মু‘মিনের দিলেই এ গর্হিত খাসলত থাকা উচিত নয়। [সূত্র: তারারানী, আউসাত খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা ১২৫ হাদীস (৪৬৫৩)]
২৭. হাসাদ বা হিংসা-বিদ্বেষ বর্জন করাঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, অগ্নি যেমন কাঠকে ভস্ম করে ফেলে, তদ্রূপ হিংসা মানুষের নেকীকে ভস্ম করে ফেলে। অতএব খবরদার! খবরদার! তোমরা কখনো হিংসা-বিদ্বেষ করবে না। [সূত্র: ইবনে মাজাহ পৃষ্ঠা -৩১০]
২৮. ক্রোধ দমন করাঃ আল্লাহ তা‘আলা কুরআন শরীফে ক্রোধ দমনকারীদের প্রশংসা করেছেন। অনর্থক রাগ করা গুনাহ। রাগ-ক্রোধ দমনে হাদীসে তাকীদ এসেছে। তবে ইসলামের বিরুদ্ধে কোন আয়াত আসলে, সেখানে ক্রোধ ও অসন্তুষ্টি প্রদর্শনই ঈমানের দাবি।
২৯. অন্যের অনিষ্ট সাধন ও প্রতারণা না করাঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে অন্যের ক্ষতি করে অর্থাৎ পরের মন্দ চায়, অপরকে ঠকায়, ধোঁকা দেয়, তার সাথে কোন সংশ্রবই নেই। [সূত্র: মুসলিম শরীফ, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-৭০]
৩০. দুনিয়ার অত্যধিক মায়া-মুহাব্বত ত্যাগ করাঃ হযরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন যে দুনিয়াকে ভালবাসবে, তার আখিরাতের লোকসান হবে এবং যে আখিরাতকে ভালবাসবে, তার দুনিয়ার কিছু ক্ষতি হবে। হে আমার উম্মতগণ! তোমাদের মঙ্গলের জন্যে আমি তোমাদেরকে বলছি, তোমরা অস্থায়ী ও ক্ষণস্থায়ী দুনিয়াকে ভালোবেসে চিরস্থায়ী আখিরাতকে নষ্ট করে দিও না। তোমরা সকলেই চিরস্থায়ী পরকালকেই শক্তভাবে ধর এবং বেশি করে ভালবাসো। অর্থাৎ দুনিয়ার মুহাব্বত পরিত্যাগ করে আখিরাতের প্রস্তুতিতে আমলের প্রতি যথাযথ ধাবিত হও। [সূত্র: মুসনাদে আহমদ খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা -৪১২ ও বাইহাকী, খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-৩৭০।]