Header Ads

ঈমান সংশ্লিষ্ট ৪০ টি কাজ বাহ্যিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের দ্বারা ঈমানের মোট ৪০টি কার্য সমাধা হয়।

ঈমান সংশ্লিষ্ট ৪০ টি কাজ বাহ্যিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের দ্বারা ঈমানের মোট ৪০টি কার্য সমাধা হয়। 

তন্মধ্যে ১৬টি কাজ নিজেই করতে হয়। ৬টি নিজের লোকদের সঙ্গে করতে হয়। এবং ১৮টি অন্যান্য জনসাধারণের সাথে করতে হয়। বিস্তারিত নিম্নরূপ:

ঈমান সংশ্লিষ্ট ১৬ টি কাজ যা নিজে নিজেই করতে হয়

৩৮. পাক-সাফ ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখাঃ হযরত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, তাহারাত (পাক-সাফ থাকা) ঈমানের অর্ধেক। [সূত্র: মুসলিম, শরীফ, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-১১৮।]

৩৯. নামায কায়িম করাঃ হযরত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের ছেলেমেয়েদের বয়স যখন সাত বছর হয়, তখন তাদেরকে নামায পড়ার জন্যে আদেশ করো। দশ বছর হলে যদি তারা নামায না পড়ে, তাহলে তাদেরকে হাতের দ্বারা শাস্তি দিয়ে নামায পড়াও। আর তাদের শয়নের বিছানা পৃথক করে দাও, অর্থাৎ যখন তাদের কিছু জ্ঞান-বুদ্ধি হয়, তখন তাদের পৃথক বিছানায় শুতে দাও। [সূত্র: আবু দাউদ শরীফ, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-৭০।] নামায পড়ায় প্রভূত ফযীলত ও সওয়াব এবং নামায তরক করায় কঠিন শাস্তি ও আযাব সম্বন্ধে কুরআনের বহু আয়াত এবং প্রচুর হাদীসের বর্ণনা এসেছে।

৪০। যাকাত দেয়াঃ হযরত আবু হুরাইরা রাযি. রিওয়ায়েত করেন, হযরত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ তা‘আলা যাদেরকে মাল দান করেছেন, তারা যদি যাকাত না দেয়, তাহলে কিয়ামতের দিন সেই মালের দ্বারা বিষাক্ত সাপ বানানো হবে এবং সে সাপ তাদের গলায় পেঁচিয়ে দেয়া হবে। [সূত্র : বুখারী শরীফ, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-১৮৮।]

৪১। রোযা রাখাঃ রোযার ফযীলত সম্বন্ধে এবং রোযা ছাড়লে যে কত বড় গুনাহ হয়, সে বিষয়ে অনেক হাদীস বর্ণিত আছে। এক হাদীসে হযরত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ, ইচ্ছা পূর্বক রমযানের কোন একটি রোযা ছেড়ে দিলে সারা জীবন রোযা রেখেও তার ক্ষতিপূরণ সম্ভব নয়। [সূত্র: বুখারী শরীফ, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-২৫৯।]

৪২. হজ্ব করা (উমরা পৃথক আমল হলেও তা হজেরই একটি পর্যায়): হযরত আবু উমামা রাযি. হতে রিওয়ায়েত আছে, হযরত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, গরিব হওয়া, বাদশাহর জুলুমগ্রস্ত হওয়া কিংবা রোগাক্রান্ত হওয়া (এই তিন কারণে হজ্ব না করতে পারলে, তাতে গুনাহ হবে না); এই তিন প্রকার বাধা-বিঘ্নের কোন একটি না থাকা স্বত্বেও যে ব্যক্তি হজ্ব না করবে, তার ইচ্ছা, চাই সে ইহুদী হয়ে মারা যাক অথবা নাসারা হয়ে মারা যাক। অর্থাৎ মুসলমান হিসেবে তার মৃত্যু শংকামুক্ত নয়। [সূত্র: সুনানে দারিমী, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা -৪৫।] অবশ্য রোগাক্রান্ত ধনী ব্যক্তির হজ্ব মাফ হবে না। রোগমুক্তির সম্ভাবনা না থাকলে তার ওপর হজ্ব বদল করানো জরুরী।

৪৩. ইতিফাক করাঃ হযরত আয়িশা সিদ্দীকা রাযি. রিওয়ায়েত করেন, হযরত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে আল্লাহ তা‘আলা যাবৎ না ওফাত দিয়েছেন, সে যাবৎ তিনি সর্বদা রমযান শরীফের শেষ দশ দিন ই‘তিকাফ করতেন এবং তাঁর ইনতিকালের পর সম্মানিতা বিবিগণ ই‘তিকাফ করেছেন। [সূত্র: বুখারী শরীফ, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-২৭১ ও মুসলিম শরীফ, খণ্ড-১ পৃষ্ঠা -৩৭১।]

৪৪. হিজরত করাঃ ঈমান বাঁচানোর জন্য স্বজন ও স্বদেশ ত্যাগ করে অন্যত্র নিরাপদ আশ্রয় গ্রহণকে ‘হিজরত’ বলে। হযরত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, হিজরতের কারণে পূর্ববর্তী সমস্ত গুনাহ মাফ হয়ে যায়। [সূত্র: মুসলিম শরীফ, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-৭৬]

৪৫. নযর (মান্নত) পুরা করাঃ হযরত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর ফরমাবরদারি করার নযর (মান্নত) মানবে, তার সে নযর-মান্নত পুরা করতে হবে; কিন্তু যদি কেউ আল্লাহর নাফরমানী করার মান্নত মানে, তাহলে সেই মান্নত পুরা করা যাবে না। এ ধরণের মান্নত করা গুনাহ। [সূত্র : বুখারী শরীফ, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-৯৯১]

৪৬. কসম রক্ষা করাঃ পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে- وَاحْفَظُوا أَيْمَانَكُمْ কসম খেলে তা রক্ষা করো। অর্থাৎ কসম খেলে তা ঠিক রাখা অথবা কসম ভঙ্গ হলে, তার কাফফারা দেয়া কর্তব্য। [সূত্র :সূরা মায়িদা, আয়ত-৮৯।]

৪৭. কাফফারা আদায় করাঃ কাফফারা চার প্রকার। যথা-ক, কসমের কাফফারা, খ. ভুলবশত খুনের কাফফারা, গ. স্ত্রীর সাথে যিহার করার কাফফারা ও ঘ. রমযানের রোযার কাফফারা। এ সকল ব্যাপারে কাফফারা ওযাজিব হয়ে গেলে তৎক্ষণাৎ কাফফারা আদায় করা ঈমানের দাবি।

৪৮. সতর ঢাকাঃ হযরত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহপাকের ওপর এবং কিয়ামত দিনের ওপর যে ঈমান রাখে, সে যেন কাপড় পরে হাম্মামে (গোসলখানায়) যায়, অর্থাৎ মানুষদের সম্মুখ দিয়ে সতর খুলে না যায়। [সূত্র : তিরমিযী শরীফ, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-১০৭।]

৪৯. কুরবানী করাঃ হযরত যায়িদ ইবনে আরকাম রাযি. হতে রিওয়ায়েত আছে, একদা সাহাবায়ে কিরাম রাযি. হযরত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খিদমতে আরয করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহু! এই কুরবানী কী জিনিস? হযরত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, এটা তোমাদের পিতা হযরত ইবরাহীম আ.- এর তরীকা । সাহাবীগণ আরয করলেন, হুযূর! আমরা এর প্রতিদানে কী পাব? হযরত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, প্রত্যেকটি পশমের পরিবর্তে এক একটি নেকী পাবে। [সূত্র: ইবনে মাজাহ, পৃষ্ঠা-২২৬।] কুরবানীর ফযীলত সম্বন্ধে আরো অনেক হাদীস রয়েছে।

৫০. মৃত ব্যক্তির কাফন-দাফন করাঃ হযরত জাবির রাযি. রিওয়ায়েত করেন, হযরত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যখন তোমরা তোমাদের কোন মুসলমান ভাইকে কাফন দাও, তখন ভালোভাবে কাফন দিবে। [সূত্র: মুসলিম শরীফ, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-৩০৬]

৫১. ঋণ শোধ করাঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযি. রিওয়ায়েত করেন, হযরত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হতে পারলে, সব গুনাহ মাফ হয়ে যায়, কিন্তু পরের ঋণ অর্থাৎ বান্দার যে কোন প্রকার হক মাফ হয় না। [সূত্র : মুসলিম শরীফ, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-১৩৫।] সুতরাং, খুব বেশি জরুরী দরকার ও একান্ত অপারগতা ব্যতীত ঋণ গ্রহণ করাই অনুচিত। তারপরেও ঠেকায় পড়ে ঋণ করলে ব্যবস্থা হওয়ার সাথে সাথেই তা পরিশোধ করে দেয়া ঈমানের দাবি। যাতে করে করজদাতাকে কষ্টে না ফেলা হয়। মুসলমান ভাইগণ! পরের কাছে ঋণগ্রস্ত থাকা বড় মারাত্মক কথা। চিন্তা করে দেখুন, শহীদের মর্তবা হতে বড় মর্তবা আর কার হতে পারে? অথচ সকল প্রকার গুনাহ মাফ হলেও বান্দার হক মাফ হবে না।

৫২. ব্যবসা-বাণিজ্যে সততা বজায় রাখাঃ হযরত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, সত্যবাদী খাঁটি বিশ্বস্ত কারবারী-ব্যবসায়ী হাশরের ময়দানে নবীগণ, সিদ্দীকগণ ও শহীদগণের সঙ্গী হবে। [সূত্র : তিরমিযী শরীফ, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা -২৩০।]

৫৩. সত্য সাক্ষ্য দেয়াঃ আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন- وَلَا تَكْتُمُوا الشَّهَادَةَ وَمَنْ يَكْتُمْهَا فَإِنَّهُ آَثِمٌ قَلْبُهُ সাক্ষ্য গোপন করো না। অর্থাৎ সত্য ঘটনা জেনে তা লুকিয়ে রেখো না। যে তা লুকিয়ে রাখবে, তার আত্মা পাপিষ্ঠ। [সূত্র : সূরা বাকারা, আয়াত-২৮৩।] সত্য ঘটনা জেনেও প্রয়োজনের সময় সাক্ষ্য না দিয়ে গোপন করা দুরুস্ত নয়। 

Blogger দ্বারা পরিচালিত.